শুধু ধূমপান দায়ী নয়, রোগটির আসল কারণ কী? ফাইল চিত্র।
প্রথমে হালকা কাশি, অল্প শ্বাসকষ্ট। বুকের ভিতর চাপ চাপ ব্যথা। কাশির দমক বাড়লে শ্বাসের সমস্যাও বাড়ে। বুকে ঘন ঘন কফ জমতে থাকে। সর্দি-কাশির সেরে যাওয়ার নামই নেই। অল্প ঠান্ডা লাগলেই নাক বন্ধ হয়ে যায়। কাশির বেগ এতই বেশি, শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। এমন সব লক্ষণ দেখা দেওয়াটা মোটেই সাধারণ কিছু নয়। অনেকেই ভেবে ফেলেন, ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি বা অ্যালার্জি হয়েছে। তবে অসুখটি তার চেয়েও বেশি বিপজ্জনক। ‘আমেরিকান লাং অ্যাসোসিয়েশন’ রোগটির নাম দিয়েছে ‘স্মোকিং ডিজ়িজ়’। চিকিৎসকেরা বলেন, ‘ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজ়িজ়’ বা সিওপিডি। ইদানীংকালে সিওপিডি-তে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কারণ কেবল ধূমপান নয়।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর) সমীক্ষা বলছে, বর্তমান সময়ে দূষণের মাত্রা বেড়েছে। বাতাসে ভাসমান দূষণবাহী কণার পরিমাণ এতটাই বেশি যা শ্বাসের সঙ্গে ঢুকে ফুসফুসের সুস্থ কোষগুলিকে নষ্ট করছে। ফলে ফুসফুসের প্রদাহ বাড়ছে। সে কারণেই শ্বাসকষ্ট, শুকনো কাশি, অ্যালার্জিজনিত সমস্যা ভোগাচ্ছে।
‘ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজ়িজ়’ বা ‘সিওপিডি’ এমন একটি রোগ যেখানে ফুসফুসে বিশুদ্ধ বাতাস বা অক্সিজেন ঢোকার রাস্তাই বন্ধ হয়ে যায়। শরীরে জমতে থাকে কার্বন-ডাই অক্সাইড। সিওপিডির রোগীরা ভীষণ শ্বাসকষ্টে ভোগেন। ইনহেলার বা অক্সিজেন সাপোর্ট রাখতে হয় সব সময়েই। বর্তমানে পরিবেশ দূষণ এতটাই বেড়ে গিয়েছে, যে সিওপিডির রোগীদের কষ্ট আরও বেড়েছে। রাস্তায় বেরোলে ধুলো, যানবাহনের ধোঁয়া, কলকারখানার ধোঁয়া এতটাই বেশি, যা সহনশীলতার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে শ্বাসের সমস্যা আরও বাড়ছে। দূষণ থেকে রেহাই পাওয়ার তেমন কোনও উপায় নেই, কাজেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাই বাড়িয়ে রাখতে হবে রোগীদের।
কোন কোন লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন?
১) ক্রমাগত কাশি হতে থাকবে। রাতে কাশির দমকে ঘুম ভেঙে যাবে।
২) সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার সময়ে বুকে চাপ অনুভূত হবে, শ্বাস নিতে কষ্ট হবে।
৩) শ্বাসকষ্ট মাঝেমধ্যেই ভোগাবে, ঘন ঘন বুকে কফ জমে যাবে।
৪) সর্দি-কাশি, জ্বর লেগেই থাকবে। রাতে ঘুমোনোর সময়ে শ্বাস নিতে সমস্যা হবে।
৫) শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়বে। ঝিমুনি বাড়বে।
কী কী নিয়ম মেনে চলবেন?
ফুসফুস চাঙ্গা রাখতে নিয়মিত হাঁটাহাটি করতে হবে। দিনে নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করে নিয়ম করে হালকা ব্যায়াম করুন। সিওপিডির ক্ষেত্রে ব্রিদিং এক্সারসাইজ বা প্রাণায়াম বেশ উপকারী।
সিওপিডির রোগীদের কার্বোহাইড্রেটও খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অনেকেই কার্বোহাইড্রেট বাদ দেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভাত, রুটি, আলু, বিনস খেতে হবে। দানাশস্যও রাখুন রোজের পাতে। প্রাতরাশে ওট্স বা ডালিয়া খেতে পারেন।
আমলকি খাওয়া খুবই ভাল। আমলকির রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। আমলকি খেলে ফুসফুস থেকে দূষিত পদার্থ বা টক্সিন বেরিয়ে যায়।
প্রোটিনসমৃদ্ধ সুষম খাবার খান৷ সঙ্গে খান ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার— যেমন, টাটকা রঙিন শাকসব্জি ও ফল, শুকনো ফল, বাদাম।
ধুলোধোঁয়া যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। মনে করে মাস্ক ব্যবহার করুন।
ধূমপান পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। আশপাশে কেউ ধূমপান করলে সেই স্থান থেকে সরে আসুন, নয়তো নাকে চাপা দিন।