কেন এত জনপ্রিয়তা বাড়ছে জিম বলের, রইল ভাল-মন্দের খোঁজ। ছবি: ফ্রিপিক।
জিমে গেলেই দেখবেন বড়সড় একটা ঢাউস বলের উপর বসে বা শুয়ে কসরত করছেন অনেকে। ঈষৎ স্থূল যাঁরা, তাঁরা ব্যালান্স রাখতে রীতিমতো নাকানিচোবানি খাচ্ছেন। কখনও বল গড়িয়ে যাচ্ছে, আবার কখনও তাঁরা গড়িয়ে পড়ছেন। স্থূলত্ব কমানো থেকে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা, পেশির শক্তি বৃদ্ধি করতে জিম বলের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। জিমে শুধু নয়, অনেকের বাড়িতেও ঠাঁই পেয়েছে ফোলাফাঁপা এমন বল। এর আবার হরেক নাম, কেউ বলেন ‘এক্সারসাইজ় বল’, কেউ ডাকেন ‘সুইস বল’। আবার মেডিসিন বলও আছে, যা আকারে-ভারে জিম বলের চেয়ে ছোট। তবে এই ধরনের বলের উপকারিতা অনেক। প্রশিক্ষকের সাহায্যে যদি সঠিক ভাবে কসরত করা যায়, তা হলে ফল হয় অনেক। আবার নিজে থেকে কেরামতি দেখাতে গেলে উল্টো ফলও হতে পারে।
জিম বলের ভাল-মন্দ
জিম বল কিনে নিলেই যে তার উপর বসে, শুয়ে, তাকে ঠেলেঠুলে ব্যায়াম করা যাবে, তা মোটেই নয়। যথেষ্টই কঠিন ও সময়সাপেক্ষ সেই অভ্যাস। বলা যায়, পুরোটাই ব্যালান্সের খেলা। এর জন্য সবচেয়ে আগে প্রশিক্ষিত ট্রেনারের প্রয়োজন। তিনিই দেখিয়ে দেবেন, কী ভাবে জিম বল নিয়ে কসরত করা যায়। মূলত স্ট্রেচিং ব্যায়াম করার জন্যই জিম বল বা এক্সারসাইজ় বলের ব্যবহার হয়। আসল কাজ পেশির শক্তি বৃদ্ধি করা। কোর এক্সারসাইজ়, স্ট্রেংথ ট্রেনিং, স্ট্রেচিং, সবই করা যায় জিম বলে। এই বিষয়ে যোগাসন প্রশিক্ষক অনুপ আচার্যের মত, “জিমে গিয়ে যে যে ব্যায়াম করেন, যেমন প্ল্য়াঙ্ক, লাঞ্জেস, ক্রাঞ্চেস, সবই করা যায় জিম বলে। তবে এর জন্য আগে শরীরের ভারসাম্য বৃদ্ধি করতে হবে। শরীরের ঊর্ধ্বাংশের ব্যায়াম হলে হাত, কাঁধের জোর বেশি হতে হবে, যদি নিম্নাংশের ব্যায়াম হয়, তা হলে দুই পায়ের শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। ভারসাম্য রাখার অভ্যাস আয়ত্তে এলে, তবেই জিম বল নিয়ে কসরত করা যাবে। না হলে ব্যায়াম করতে গিয়ে বিপদ ঘটবে।”
জিম বল দিয়ে নানা রকম শারীরিক কসরত করা যায়। ছবি: এআই।
জিম বল নিয়ে কসরত করার নিয়ম আছে। প্রশিক্ষক জানালেন, যেখানে বলটি রেখে ব্যায়াম করতে হবে, সেই জায়গাটা স্পঞ্জের মতো হবে হবে। বাড়িতে করলে ম্যাট পেতে করাই ভাল। মেঝের তৈলাক্ত ভাব যদি বেশি হয়, তা হলে বল গড়িয়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
বলের আকার হবে যথাযথ
উচ্চতা, ওজন অনুযায়ী বলের আকার হতে হবে। তা একজন প্রশিক্ষকই বলে দিতে পারবেন। যিনি ব্যায়াম করবেন, তাঁর উচ্চতা যদি ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি বা তার কম হয়, তা হলে বলের আকার ৫৫ সেন্টিমিটার বা তার আশপাশে হতে হবে। এর বেশি নয়।
উচ্চতা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি থেকে ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি হলে বলের আকার হবে ৬৫ সেন্টিমিটারের মতো।
উচ্চতা যদি ৫ ফুট ১১ ইঞ্চির বেশি হয়, তা হলে বলের মাপও বেশি হতে হবে। সে ক্ষেত্রে ৭৫ সেন্টিমিটার হলে ভাল হয়।
সঠিক পদ্ধতিতে জিম বল ব্যবহার করলে তাড়াতাড়ি সুফল পাওয়া যাবে। ছবি: ফ্রিপিক।
কী কী ব্যায়াম করা যাবে?
পেটের পেশির ব্যায়াম:
বল ক্রাঞ্চ: পিঠের নীচের অংশ বা পিঠ বলের উপর রেখে পেট সঙ্কুচিত করা।
প্ল্যাঙ্ক অন বল: হাত বা কনুই বলের উপর রেখে প্ল্যাঙ্ক করা। প্ল্যাঙ্কের যা পদ্ধতি তা-ই হবে, শুধু ভার রাখতে হবে বলের উপরে।
হাইপার এক্সটেনশন: পেটের উপর ভর দিয়ে বলের উপর শুয়ে পিঠ উপরের দিকে তুলতে হবে।
বল ব্রিজ: গোড়ালি বলের উপর রেখে নিতম্ব উপরে তোলা।
হাতের ব্যায়াম:
পুশ-আপ অন বল: হাত বা পায়ের পাতা বলের উপর রেখে পুশ-আপ করা।
বল চেস্ট প্রেস: পিঠ বলের উপর রেখে ডাম্বেল নিয়ে ব্যায়াম করা।
ওয়াল স্কোয়াট: পিঠ এবং দেওয়ালের মাঝে বল রেখে স্কোয়াট করা।
ওভারহেড স্কোয়াট: জিম বল হাত দিয়ে উপরে তুলতে হবে, সেই অবস্থায় অর্ধেকটা বসার মতো ভঙ্গি করে স্কোয়াট করতে হবে। এই ব্যায়ামে পেট, পা ও হাতের পেশির স্ট্রেচিং হবে।
জিম বল নিয়ে স্ট্রেচিং। ছবি: এআই।
টুইস্ট ব্যায়াম:
প্রথমে ম্যাটের উপর দু’পা ছড়িয়ে বসুন। এ বার দু’হাত দিয়ে বলটি ধরে এক বার বাঁ দিকে এবং এক বার ডান দিকে, এই ভাবে ‘টুইস্ট’ করতে থাকুন। প্রথমে মাটিতে পা রেখেই শুরু করুন। দেহের ভারসাম্য এসে গেলে পা দু’টি শূন্যে তুলে রেখে তার পর এই ‘টুইস্ট’ অভ্যাস করুন।
পায়ের ব্যায়াম:
লেগ কার্ল: পিঠ মেঝেতে রেখে গোড়ালি বলের উপর রেখে হাঁটু ভাঁজ করে ব্যায়ামটি করতে হবে।
গ্লুট ব্রিজ: চিত হয়ে শুয়ে বলের উপর দুই পায়ের পাতা রেখে পায়ের উপর ভর দিয়েই কোমর তুলতে ও নামাতে হবে। এতে পেট, দুই পা ও পিঠের পেশির শক্তি বাড়বে।
সিঙ্গল লেগ গ্লুট ব্রিজ: একটি পায়ের পাতা বলের উপর রাখতে হবে, অন্য পা সোজা উপরে তুলে রাখতে হবে। এর পর একই ভাবে বলের উপর রাখা পায়ে ভর দিয়ে কোমর তুলতে ও নামাতে হবে।
জিম বল নিয়ে প্ল্যাঙ্কও করা যায়। ছবি: এআই।
হ্যামস্ট্রিং কার্ল: চিত হয়ে শুয়ে দুই পা বলের উপর তুলে দিতে হবে। পিঠ-নিতম্ব মাটি স্পর্শ করবে না। এই ভাবেই পা দিয়ে বলটিকে এক বার ঠেলে সামনের দিকে আনতে হবে, আবার আগের অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে।
পিঠ এবং মেরুদণ্ডের গঠন ভাল না হলে দেহের ভঙ্গি কিন্তু কোনও মতেই ভাল হবে না। সেই কাজে সাহায্য করে জিম বল। ব্রেন স্ট্রোক বা স্নায়বিক রোগের কারণে পেশি দুর্বল, হাত-পায়ের অসাড়তা বা পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন যাঁরা, তাঁরা যদি সঠিক উপায়ে জিম বলকে কাজে লাগাতে পারেন, তা হলে পেশির শক্তি ধীরে ধীরে বাড়বে। শরীরের ভারসাম্যও বৃদ্ধি পাবে। হাঁটাচলা করার শক্তিও ফিরে আসবে।