পুশ আপ করে নিজের ফিটনেসের প্রমাণ দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক— আনন্দবাজার ডট কম।
রাজনীতির মঞ্চে যাঁরা দাপিয়ে বেড়ান, তাঁদের ফিট থাকাটা শুধু কথার কথা নয়। ফিটনেস তাঁদের জন্য জরুরি। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রত্যেকেই নানা সময়ে নিজেদের ফিটনেস নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করেছেন। আর এ বার নিজের ফিটনেস খোলা মঞ্চে প্রদর্শন করলেন বাংলার শাসক দল তৃণমূলের সাংসদ তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এক অনুষ্ঠান মঞ্চে উঠে ৩৭ বছর বয়সি এই তৃণমূল নেতা টানা ৩০টি পুশ আপ করেছেন। যা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন তাঁর অনুগামীরা। তবে অভিষেক প্রথম রাজনীতিক নন, যিনি নিজের ফিটনেসের মাত্রা বোঝাতে পুশ আপ করলেন।
এর আগে ভারতের তো বটেই বিদেশেরও বহু রাজনৈতিক নেতা প্রকাশ্যে পুশ আপ করে দেখিয়েছেন।
আর এন রবি: তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল রবি সম্প্রতি বিশ্ব যোগ দিবসে চমকে দিয়েছিলেন সকলকে। ৭৩ বছর বয়সি রবি সর্ব সমক্ষে টানা ৫১টি পুশ আপ করেন। ওই বয়সে তাঁর ফিটনেস দেখে বিস্মিত হন মানুষ।
পুশ আপের চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন রাহুল গান্ধীও।
রাহুল গান্ধী: বয়স ৫৫। নিজের শরীরচর্চার বহু ভিডিয়ো ও ছবি এক সময়ে নিয়মিত পোস্ট করতেন কংগ্রেসের নেতা তথা সাংসদ রাহুল গান্ধী। বছর কয়েক আগে দক্ষিণ ভারতে প্রচারে গিয়ে এক জুডো খেলোয়ারের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ নিয়ে ১৫টি পুশ আপ করেছিলেন রাহুল। শেষের পুশ আপটি আবার এক হাতে করে দেখান তিনি।
রাজ্যবর্ধন রাঠৌর: বয়স ৫৫। পেশাদার শুটার ছিলেন। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী এবং বর্তমানে রাজস্থানের ক্রীড়ামন্ত্রী রাজ্যবর্ধনও তাঁর পুশ আপের ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন সমাজমাধ্যমে। যেখানে তাঁকে দেখা যাচ্ছে অফিসের মেঝেতেই টানা ১০টি পুশ আপ করতে। ভিডিয়োটি পোস্ট করে রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের চ্যালেঞ্জও জানিয়েছিলেন তিনি।
কিরেন রিজিজু: বয়স ৫৩। কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী রাঠৌরের ফিটনেস চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন। এবং একই ভাবে নিজের অফিসের চেয়ার ছে়ড়ে মেঝেতে এসে দেখিয়েছিলেন পুশ আপ করার মতো ফিটনেস আছে তাঁরও।
বারাক ওবামা: এখন ৬৪। তবে ১৩ বছর আগে তিনি যখন ৫২ বছর বয়সি আমেরিকান প্রেসিডেন্ট, তথন হোয়াইট হাউসের বাস্কেটবল কোর্টে পুশ আপ করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকেও। এক আধবার নয়, প্রতি বার বিপক্ষের বল বাস্কেটে যাওয়ার পরে পাঁচবার করে।
হোয়াইট হাউসের বাস্কেট বল কোর্টে বারাক ওবামার পুশ আপ।
মিশেল ওবামা: তিনি প্রকৃত অর্থে রাজনৈতিক নেতা নন। তবে আমেরিকার ফার্স্ট লেডির পদটি পুরোপুরি অরাজনৈতিকও নয়। মিশেল ৪৮ বছর বয়সে একটি টিভির অনুষ্ঠানে সরাসরি সম্প্রচারে এক বারে ২৫টি পুশ আপ করেছিলেন।
পুশ আপ করতে পারা মানেই কি ফিটনেস দারুণ?
প্রশ্ন উঠতেই পারে রাজনৈতিক নেতারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে শারীরিক ফিটনেস বোঝানোর জন্য পুশ আপকেই বেছে নেন কেন? এই একটি ব্যায়াম করতে পারা মানেই কি যিনি করছেন, তাঁর শারীরিক ফিটনেস দারুণ? পাঁচ বারের মিস্টার ইন্ডিয়া তুষার শীল বলছেন, ‘‘পুশ আপ থেকে বোঝা যায় কার বাহুর জোর কত। আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, যিনি পুশ আপ করতে পারছেন, তিনি নিশ্চয়ই নিয়মিত শরীরচর্চা করেন বা একটা সময় নিয়মিত শরীরচর্চা করেছেন।’’
পুশ আপ কি যে কোনও বয়সেই করা যায়?
৩৭ বছরের অভিষেক যেমন পুশ আপ করছেন, তেমনই ৭৩-এর রাজ্যপালও পুশ আপ করছেন। তবে কি পুশ আপ যে কোনও বয়সেই করা সম্ভব? প্রশ্ন শুনে ব্যায়ামবীর তুষার বলছেন, ‘‘আমারও তো বয়স ৭০। পুশ আপ তো আমিও করি। তবে হঠাৎ করে যে কোনও দিন পুশ আপ শুরু করা এবং এক সঙ্গে অনেকগুলি করে ফেলা ঠিক হবে না।’’
৭৩ বছরে তামিলনাড়ুর রাজ্যপালও টানা ৫১ টি পুশ আপ করতে পারেন।
পুশ আপ শুরু করার আগে কী কী মাথায় রাখতে হবে?
নিজের শারীরিক ক্ষমতা বুঝে পুশ আপ করার অভ্যাস শুরু করতে বলছেন তুষার। তাঁর মতে, দিনে দরকার হলে ২টি পুশ আপ দিয়ে শুরু করুন। তার পরে পাঁচটি, কিছু দিন পরে ১০টি। তার পরে চাইলে আরও সংখ্যা বাড়িয়ে নিতে পারেন। তবে শুধু পুশ আপ করলেই হবে না। একটি ব্যায়াম গোটা শরীরের ফিটনেসের মাত্রা বেঁধে দিতে পারে না। তার আগে এবং পরে হাত, ঘাড়, পেটের নীচের পেশির ব্যায়ামও সমান ভাবে করতে হবে।
পুশ আপ করলে কী কী উপকার হতে পারে?
এই ব্যায়ামের দু’টি সবচেয়ে উপকারী দিক ব্যাখ্যা করেছেন ব্যায়াম প্রশিক্ষক। এক, এতে বাহু বিশেষ করে ট্রাইসেপসের পেশির জোর বাড়ে। দুই, এতে হার্টও ভাল থাকে। কারণ হার্টের সঙ্গে বাঁ হাতের পেশি, ধমনীর সরাসরি যোগ আছে।
তবে তুষার বলছেন, ‘‘শুধু হার্ট ভাল রাখা বা বাহুর জোর বাড়িয়ে নেওয়াই তো বিষয় নয়! রাজনীতিকদের মানুষ অনুসরণ করেন। তাঁরা যে বয়সেরই হোন না কেন এই যে ফিটনেসের উদাহরণ তৈরি করছেন, তাতে পরোক্ষে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের উপকারই হবে। কারণ তাঁদের দেখে সাধারণ মানুষও শরীরচর্চায় মন দেবেন।’’