সারা বছর ফিট থাকতে পছন্দ করেন অভিনেতা টোটা রায়চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত।
ছিপছিপে শরীর দেখে এখনও তাঁর বয়স আন্দাজ করা কঠিন। শুটিং ফ্লোরে স্টান্ট থেকে নাচের কঠিন মুদ্রায় অনায়াস যাতায়াত। সারা বছর ‘ফিটনেস’ অলিন্দে যাঁর গমনাগমন, পুজোর দিনগুলি কি তাঁকে আলাদা করে ভাবায়? পুজোর আগে শরীর-স্বাস্থ্য এবং দৈনন্দিন ডায়েট নিয়ে কথা বললেন অভিনেতা টোটা রায়চৌধুরী।
ডায়েট মানে পরিমাণ'
ডায়েট' শব্দটি উচ্চারিত হলে অনেকেই ধরে নেন, ‘কঠিন কৃচ্ছসাধন’। কিন্তু টোটা বিষয়টাকে অন্য ভাবে দেখেন। তাঁর মতে, ডায়েট মানে সুষম আহার। তার মধ্যে প্রোটিন থেকে শুরু করে কার্বোহাইড্রেট বা ফাইবার, সবই থাকবে। টোটার কথায়, ‘‘খাওয়ার পরিমাণ যদি ঠিক থাকে, তা হলে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’ টোটা সব ধরনের খাবারই খান। তবে সবটাই পরিমিত পরিমাণে। টোটার সুঠাম দেহের অনুরাগী অনেকেই। তাঁকে দেখে অনেকেরই মনে হতে পারে, তার জন্য অভিনেতা সারা বছর কঠোর পরিশ্রম করেন। মজার বিষয়, টোটা জানালেন, বছরের দুটো সময়ে তিনি একেবারেই ডায়েটের দিকে নজর দেন না— দুর্গাষষ্ঠী থেকে লক্ষ্মীপুজো এবং ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ।
লুচি-মাংস থেকে রসের মিষ্টি
শুটিং বা অনুষ্ঠানের জন্য বছরভর টোটাকে বাইরের খাবার খেতে হয়। কিন্তু কোনও এক দিন তেল-মশলা যুক্ত খাবার খেলে সপ্তাহের বাকি দিন তিনি ‘জাঙ্ক ফুড’ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেন। খাবারের সঙ্গে বাহারি পদে বিশ্বাসী নন অভিনেতা। বরং বাড়িতে থাকলে ভাত, ডাল এবং সঙ্গে একটু মাছের ঝোল তৃপ্তি করে খেয়ে নেন তিনি। অনেকে শরীরের ছিপছিপে গড়ন বজায় রাখতে ডায়েট থেকে চিনি, ময়দা বা নুন বাদ দেন। টোটা সে পথে হাঁটার মানুষ নন। যে কোনও খাবারের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদনই তাঁর পছন্দ। খাবারের ক্ষেত্রে ক্যালোরি মাপাও তাঁর নাপসন্দ। অভিনেতার যুক্তি, ‘‘ক্যালোরি নয়, আমি খিদে মাপি। দীর্ঘ দিন মেপে খেতে খেতে একটা ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছে। কোনও দিন বেশি খাওয়া হয়ে গেলে পরের দিন কম ক্যালোরি খাওয়ার চেষ্টা করি।’’
সারা বছর সুঠাম শরীর ধরে রাখার জন্য পরিশ্রম করেন টোটা। ছবি: সংগৃহীত।
চিট মিল
‘চিট মিল’ অর্থাৎ সাপ্তাহিক ডায়েটে কোনও এক দিন পছন্দের খাবার খাওয়ার প্রবণতা। টোটাও তাঁর ব্যতিক্রম নন। যেমন রবিবার দুপুরে তাঁর পাতে থাকে লুচির সঙ্গে কষা মাংস। সারা বছর মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন। তবে সেটাও নিয়ন্ত্রণে। রবিবার ৩-৪টে পছন্দমতো রসের মিষ্টিও খেয়ে নেন।
ব্যতিক্রম ফেলুদা
চরিত্রের প্রয়োজনে যদি ডায়েট করতে হয়, তা হলে টোটার কোনও সমস্যা নেই। আর সে ক্ষেত্রে প্রথমেই তাঁর তালিকায় রয়েছে ফেলুদা। টোটার কথায়, ‘‘ফেলুদার জন্য দেখেছি, আমার যা ওজন, তার থেকে ১ কেজি কমাতে হয়।’’ পুজোয় মুক্তি পাবে টোটা অভিনীত নতুন ফেলুদা সিরিজ় ‘যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে’। তুপ্তির হাসি হেসে অভিনেতা বললেন, ‘‘বেশ কয়েক বছর আগে আমরা শুটিং করেছিলাম। কিন্তু অনেকেই বলেছেন, আমাকে দেখে সেটা নাকি বোঝাই যাচ্ছে না!’’
পর্দায় ফেলুদা চরিত্রে টোটা। ছবি: সংগৃহীত।
পুজোর খাওয়াদাওয়া
পুজোর দিনগুলো সাধারণত পরিবারের সঙ্গেই কাটানোর চেষ্টা করেন টোটা। তার সঙ্গে থাকে ভোগ খাওয়া। অভিনেতার কথায়, ‘‘ভোগের খিচুড়ি আর লাবড়া তো আমার ভীষণ প্রিয়। অষ্টমীতে মায়ের ভোগ খাব না, ভাবতেই পারি না।’’ বিজয়ার দিনে সকলের সঙ্গে মিষ্টিমুখও করে থাকেন তিনি।
ফিটনেসের নেপথ্যে
একটা সময়ে নিয়মিত জিমে যেতেন টোটা। তবে গত ৩-৪ বছরে সে পথে ইতি টেনেছেন তিনি। উল্লেখ্য, তা সত্ত্বেও অভিনেতা সিক্স প্যাক অ্যাবের অধিকারী। রহস্য কী? টোটা জানালেন— নিয়মিত যোগাভ্যাস, খালি হাতে ব্যায়াম এবং ক্যালিসথেনিক্স (শুধুমাত্র শরীরের ওজন সহ ব্যায়াম)। টোটা বললেন, ‘‘আমি ‘এক্সারসাইজ়’ বলি না, ‘অ্যাক্টিভিটি’ বলি। কারণ সময়ের অভাবে কেউ তো হেঁটেও নিতে পারেন। আবার সিঁড়ি ভাঙলেও ক্যালোরি খরচ হয়।’’
সকাল ছ’টায় ঘুম ভাঙে টোটার। সপ্তাহে নিয়ম করে ৫ দিন ৪০ মিনিট করে শরীরচর্চা করেন। আউটডোর শুটিং থাকলেও এই রুটিনে ছেদ পড়ে না। টোটা হেসে বললেন, ‘‘কত বার হয়েছে, ফ্লোরে একটা ম্যাট পেতে ২০ মিনিট যোগাসন করে নিয়েছি।’’ তবে কোনও চরিত্রের জন্য ওয়েট ট্রেনিংয়ের প্রয়োজন হলে, তখন টোটা জিমে গিয়েই ওজন-সহ ব্যায়াম করেন। কাজের ব্যস্ততায় ঘুম কম হলে, তখন শরীরচর্চাও কমিয়ে দেন তিনি। ফলে চোট-আঘাতের সম্ভাবনাও কমে যায়।
অনুরাগীদের উদ্দেশে
পুজোর আগে যাঁরা কঠিন ডায়েট বা সারা ক্ষণ শরীরচর্চায় মনে দিয়েছেন, তাঁদের সতর্ক করে দিতে চাইছেন টোটা। কারণ, অভিনেতা মনে করেন, শর্টকার্টে কোনও সুদূরপ্রসারী ফল পাওয়া সম্ভব নয়। বরং এই ভাবে এগোলে পুজোর দিনগুলোও মাটি হয়ে যেতে পারে। টোটা বললেন, ‘‘খেয়াল রাখা উচিত, দেহের একটা সার্বিক ট্রান্সফরমেশনের জন্য ৩ মাস সময়ের প্রয়োজন হয়। অনেকে সেটা না বুঝে ক্র্যাশ ডায়েট অনুসরণ করে বিপত্তি ডেকে আনেন।’’
কোনও কঠিন লক্ষ্যমাত্রার পরিবর্তে পুজোর আগে সুস্থ থাকার ব্যাপারেই দিকনির্দেশ করলেন টোটা। বললেন, ‘‘পুজোর সময়ে পেটের উপর অত্যাচার বাড়ে। তাই যে ক'টা দিন হাতে রয়েছে, একটু হালকা খাবার খেলে সার্বিক ভাবে শরীর ভাল থাকবে।’’ স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে এবং প্রতি দিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করলে পুজোর দিনে ত্বক আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে বলেই জানালেন টোটা।