Banana vs Date

কলা না কি খেজুর? কোনটি বেশি উপকারী? স্বাস্থ্যের ক্ষতি না করে শক্তির জোগান দেবে কোনটি?

দু’টিই প্রয়োজনীয় শক্তির জোগানদার সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই কোনও। কিন্ত স্বাস্থ্য রক্ষা এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে কোনটি বেছে নেবেন? কারণ শরীরের অধিকাংশ রোগের বীজ বপন হয় রক্তে শর্করার ভারসাম্যের অভাব থেকেই!

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:২৫
Share:

স্বাস্থ্য ভাল রাখতে কোনটি খাবেন? ছবি : সংগৃহীত।

সুস্বাদু ফল। সুমিষ্টও। যাঁরা শরীরচর্চা করেন তাঁদের অনেকেই শরীরচর্চার আগে বা পরে এই দু’টি ফল খেয়ে থাকেন। আবার কেউ কেউ মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে কমাতে খান কলা বা খেজুর। দু’টি ফলই যে পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তির জোগানদার সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই কোনও। কিন্ত স্বাস্থ্য রক্ষা এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে কোনটি বেছে নেবেন? কারণ শরীরের অধিকাংশ রোগের বীজ বপন হয় রক্তে শর্করার ভারসাম্যের অভাব থেকেই!

Advertisement

মুম্বইয়ের পুষ্টিবিদ লিমা মহাজন এ ব্যাপারে একটি তুলনামূলক আলোচনা করেছেন তাঁর নিজস্ব ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে। তিনি বলছেন, শক্তির জোগান, স্বাস্থ্য রক্ষা এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ— এই তিনটি বিষয়ে খেজুর এবং কলার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

১. শক্তির জোগান

Advertisement

কলা দীর্ঘমেয়াদী শক্তির জোগানদার। কারণ এতে তিন ধরনের প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে— সুক্রোজ, ফ্রুক্টোজ এবং গ্লুকোজ। এ ছাড়া এতে ফাইবারও থাকে। সে জন্যই খেলোয়াড়দের ব্যায়ামের আগে বা পরে কলা খেতে বলা হয়। অন্য দিকে, খেজুরে শর্করার ঘনত্ব বেশি। ফলে একটি বা দু’টি খেজুর খেলেই তা অত্যন্ত দ্রুত শরীরে শক্তি সরবরাহ করে। দীর্ঘ ভ্রমণের পরে ক্লান্তি দূর করতে বা সারাদিন পরিশ্রমের পরে অল্প সময়েই শক্তি ফিরে পেতে হলে খেজুর ভাল।

২. স্বাস্থ্য রক্ষা

কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। এ ছাড়া আছে ভিটামিন বি৬। দু’টি পুষ্টিগুণই হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এ ছাড়া কলায় রয়েছে ভিটামিন সি, যা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের কাজ করে। এতে থাকা ফাইবার হজমে সাহায্য করে, কোলেস্টেরল কমাতেও কাজে লাগে। অন্য দিকে, খেজুরে আছে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ফেনোলিক অ্যাসিডের মতো অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা কোষের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। খেজুরে কলার থেকে বেশি আয়রন এবং ক্যালসিয়ামও থাকে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য এবং রক্তস্বল্পতা রোধে কার্যকরী।

৩. রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ

কলার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স মাঝারি।৪৮ থেকে ৫৪। তবে কলা যত বেশি পাকে, তত এর শর্করার পরিমাণ বাড়ে। সেই সঙ্গে জিআই-এর মাত্রাও বাড়তে থাকে। খেজুরের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কলা-র থেকে কিছুটা কম। ৪২ থেকে ৫০। তবে ওজনের দিক থেকে দেখলে এতে শর্করার ঘনত্ব অনেক বেশি। যেহেতু আকারে ছোট, তাই বেশি খেয়ে ফেলার ঝুঁকি থাকে। এতেই রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।

এক ঝলকে

কলা: পুষ্টিগুণ— পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি।

শক্তি— দীর্ঘ সময় ধরে শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেয়।

ক্যালোরি— প্রতি ১০০ গ্রামে ৮৯ ক্যালোরি থাকে।

শর্করা— অল্প কাঁচা অবস্থায় খেলে শর্করা নিয়ন্ত্রণে উপযোগী। যদিও বেশি পাকা কলা খেলে এর ঠিক উল্টো কাজই হবে।

খেজুর: পুষ্টিগুণ— আয়রন, ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট

শক্তি— খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শক্তির জোগান পাওয়া যায়।

ক্যালোরি— প্রতি ১০০ গ্রামে ২৮২ ক্যালোরি থাকে।

শর্করা— শর্করা নিয়ন্ত্রণেও খুব বেশি সহায়ক নয়, মেপে খাওয়াই ভাল।

কোনটি বেছে নেবেন?

পুষ্টিগুণে যেহেতু দু’টি খাবারই ভাল তাই কোনও একটিকে পুরোপুরি ভাল বা খারাপ বলা যাবে না। পুরোটাই নির্ভর করছে যিনি খাচ্ছেন তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি এবং কী উদ্দেশে খেতে চাইছেন তার উপর।

১। ওজন কমাতে বা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য হলে কলা ভাল, কারণ এতে ক্যালোরি কম এবং পটাশিয়াম বেশি।

২। রক্তস্বল্পতা বা হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে হলে— খেজুর বেশি কার্যকর।কারণ, এতে থাকা ফাইবার এবং আয়রন এ ব্যাপারে সাহায্য করে।

৩। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে— দু’টি ফলই মেপে খেতে হবে। ডায়াবিটিসের সমস্যা থাকলে পাকা কলা না খেয়ে কলা সামান্য কাঁচা অবস্থায় খেলে তাতে রেজ়িস্ট্যান্ট স্টার্চ বেশি যাবে শরীরে। ফলে দ্রুত রক্তে শর্করা বাড়বে না। অন্য দিকে, খেজুর রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ডায়াবিটিসের রোগীরা দিনে ১-২টির বেশি খেজুর না খেলেই ভাল।

৪। যদি ওজন বেড়ে যাওয়া বা ডায়াবিটিসের সমস্যা না থাকে— তবে দু’টি ফলই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement