হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি এড়াতে ৫টি পরীক্ষা করিয়ে রাখুন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চার অভাবে হার্টের সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল— এ সব যেন মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে এর থেকে মুক্তি পেতে ওষুধ তো আছেই। কিন্তু এক বার ওষুধ খাওয়া শুরু করলে, সেই অভ্যাস বন্ধ করা মুশকিল। তাই প্রথম থেকেই ওষুধ নির্ভর জীবন বেছে না নিয়ে, ডায়েটে কিছু পরিবর্তন আনলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। এর পাশাপাশি চাই সচেতনতাও। নিয়মিত কিছু শারীরিক পরীক্ষা করালেও হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। আমেরিকার হৃদ্রোগ চিকিৎসক জ্যাক উল্ফসন ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিয়ো শেয়ার করে বলেন, ৫টি জরুরি স্বাস্থ্যপরীক্ষা নির্দিষ্ট সময় অন্তর করিয়ে রাখলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। জেনে নিন, কী কী পরীক্ষা রয়েছে সেই তালিকায়।
১) সিআরপি(সি-রিঅ্যাকশন প্রোটিন) পরীক্ষার দ্বারা। ‘সিআরপি’ এক ধরনের প্রোটিন। হার্ট অ্যাটাকের পর রক্তে যার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। মূলত রক্তে এই প্রোটিন বৃদ্ধি পেলে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তাই এই ‘সিআরপি’ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রায় বছর তিনেক আগে থেকে জেনে নেওয়া সম্ভব যে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না। থাকলেও তা কতটা। ‘সিআরপি’-র মাত্রা সাধারণত ২ মিলিগ্রাম বা তার নীচে থাকা স্বাভাবিক। তবে এর মাত্রা যদি ১০-১৫ মিলিগ্রাম থাকে, তাহলে হৃদ্যন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
২) অক্সিডাইজ়ড এলডিএল পরীক্ষার মাধ্যমেও হৃদ্রোগের আভাস পাওয়া যেতে পারে আগে থেকেই। অক্সিডাইজ়ড এলডিএল হল কম ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন। রক্তে এর মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে প্রদাহের ঝুঁকি বাড়ে এবং এর পাশাপাশি কার্ডিয়োভাসকুলার রোগের আশঙ্কাও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। অক্সিডাইজ়ড এলডিএল রক্তজালিকাগুলির মারাত্মক ক্ষতি করে, ধমনীগুলির মুখে জমাট বেঁধে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
নিয়মিত কিছু শারীরিক পরীক্ষা করালেও হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
৩) হিমোসিস্টিন টেস্টে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আছে কি না তা টের পাওয়া সম্ভব। এটি এক ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা খাবারের বিপাকের সময়ে তৈরি হয়। ভিটামিন বি-এর সঙ্গে মিশলে হিমোসিস্টিন বদলে গিয়ে বি৬, বি১২ ও ফোলিক অ্যাসিড তৈরি করে। এই অ্যামাইনো অ্যাসিডের মাত্রা অনেকটা বেড়ে গেলে এটি ধমনীর ভিতরে জমা হতে থাকে ও রক্তপ্রবাহে বাধা তৈরি করে। দিনের পর দিন যদি রক্তে হিমোসিস্টিন জমা হতে থাকে, তা হলে ধমনীতে তা ‘প্লাক’-এর মতো জমতে থাকবে ও হার্ট ব্লকেজের কারণ হয়ে উঠবে।
৪) হৃদ্রোগের ঝুঁকি ঠেকাতে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের টেস্টও করানো যেতে পারে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও অন্যান্য ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এই মাত্রা যত বেশি থাকবে হৃদ্রোগের ঝুঁকি ততই কম।
৫) এলপি(এ) পরীক্ষার মাধ্যমেও হৃদ্রোগের ঝুঁকি আছে কি না তা বোঝা সম্ভব। এই পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে কতখানি লাইপো প্রোটিন রয়েছে, সেই মাত্রা জানা যায়। এই প্রোটিন রক্তে কোলেস্টেরলগুলির বাহক হিসাবে কাজ করে। রক্তে এলপি(এ) প্রোটিনের মান যত বেশি থাকবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও ততটাই বাড়বে।