লিভারের যত্ন নেবে কলা? গ্রাফিক— আনন্দবাজার ডট কম।
হাতে করে খোসাটুকু ছাড়িয়ে নিলেই তা খাওয়ার জন্য প্রস্তুত। কেউ কেউ আবার টুকরো করে কেটে মিশিয়ে নেন ফ্রুট স্যালাড, চিঁড়ে-দইয়ের ফলার কিংবা রায়তায়। উপরে ছড়িয়ে দেন ভাজা জিরের গুঁড়ো বা চাট মশলা। কাঁচ কলা সেদ্ধ করে তাতে নুন তেল ছড়িয়ে কিংবা কোফতা বানিয়েও খাওয়ার চল রয়েছে বঙ্গে। কিন্তু কলার উপরে কখনও গোলমরিচ ছড়িয়ে খেয়ে দেখেছেন কি?
মিষ্টি স্বাদের সুস্বাদু এই ফল এক দিকে যেমন পুষ্টিগুণে ভরপুর, তেমনই সহজলভ্য। সারা বছর পাওয়া যায়। আবার মহার্ঘ্যও নয়। দেখা যাচ্ছে এর বাইরেও কলার আরও গুণ আছে। যার মধ্যে একটি লিভারকে যত্নে রাখা। আর তার জন্যই কলা খাওয়ার আগে তাতে সামান্য গোলমরিচ ছড়িয়ে খেতে বলছেন পুষ্টিবিদেরা। কিন্তু কেন? তাতে ঠিক কী ভাবে উপকৃত হতে পারে লিভার?
গোলমরিচের ভূমিকা কী?
তার আগে জানা দরকার কলার কোন কোন পুষ্টিগুণ লিভারের জন্য উপকারী? পুষ্টিবিদ শ্রেয়া চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘কলা হজম করা সহজ। তা ছাড়া তাতে রয়েছে ভরপুর পটাশিয়াম যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। আছে ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, ডোপামিন নামের অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট যা লিভারে জমা দূষিত পদার্থ বার করে দেয়। কাঁচকলার রেজ়িস্ট্যান্ট স্টার্চ লিভারে ফ্যাট জমতে দেয় না। কলায় থাকা সল্যুবল ফাইবার পেকটিন অন্ত্রের উপকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলোকে সুস্থ রাখে। এ ছাড়া কলা শরীরের অতিরিক্ত প্রদাহও কমাতে পারে। সবক’টি গুণই লিভার ভাল রাখার জন্য জরুরি।’’ আর এই সমস্ত গুণ আরও কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে কলার সঙ্গে গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে বলছেন দিল্লির আরও এক পুষ্টিবিদ গুঞ্জন তানেজা।
কেন লিভার নিয়ে চিন্তা করা জরুরি?
গুঞ্জনের বক্তব্য, ‘‘এই যুগে যে ভাবে আমাদের নিত্য দিনের খাওয়াদাওয়ার রুটিনে নানা ধরনের প্রক্রিয়াজাত, প্যাকেটজাত খাবার, বাইরের তেলে ভাজা বা মশলাদার খাবার এবং ফাস্টফুড ঢুকে পড়েছে, তাতে লিভারকেও তার কাজে সাহায্য করার জন্য কিছু দেওয়া দরকার। ফ্যাটি লিভারের মতো রোগ বাড়ছে কারণ, ওই প্রচুর পরিমাণে দূষিত পদার্থ লিভার একা দূর করতে পারছে না।’’
ফ্যাটি লিভার বিশেষত নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বা এনএএফএলডি (যে ফ্যাটি লিভার অ্যালকোহল পান করার কারণে হয়নি)-এর সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে দেশে। দিল্লির এমসের একটি সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে ভারতে শহুরে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এনএএফএলডি-র প্রবণতা ৩৮.৬ শতাংশ। এই একই রোগের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে কমবয়সিদের মধ্যেও। তাদের ক্ষেত্রে আবার এই প্রবণতা ৩৫.৪ শতাংশ। অবস্থা এমনই যে, প্রতি তিন জন মানুষের লিভার পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, তার মধ্যে অন্তত এক জনের ফ্যাটি লিভার ধরা পড়ছে, অথচ তাঁরা হয়তো নিজেরা এখনও জানেন না রোগের কথা। যে লিভার শরীর থেকে যাবতীয় বিষাক্ত পদার্থ টেনে বার করে বলে শরীর সুস্থ থাকতে পারে, সেটিই যদি অল্প বয়সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা হলে তো বিপদ।
কলা+গোলমরিচ = ?
কলার সঙ্গে গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে যে উপকার মিলতে পারে, সে কথা বলছে নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রও। সেখানে বলা হচ্ছে, গোলমরিচে রয়েছে এক ধরনের একটি জৈব সক্রিয় উপাদান পিপেরিন। যা নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। দিল্লির পুষ্টিবিদ গুঞ্জন তানেজা বলছেন, ‘‘বহু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গোলমরিচে থাকা পিপেরিন শরীরে থাকা সেই সমস্ত ফ্রি র্যাডিক্যাল কমাতে পারে, যা শরীরে থেকে গেলে লিভারের কোষের ক্ষতি করে।’’
এ ছাড়া নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণের জন্য যে প্রদাহ কমানো জরুরি, তাতেও গোলমরিচে থাকা পিপেরিন সাহায্য করে। গুঞ্জন জানাচ্ছেন, সিওয়াইপি২ই১, গ্লুটাথিয়োন এস ট্রান্সফেরাসের মতো বেশ কিছু এনজ়াইম ক্ষরণেও সাহায্য করে পিপেরিন। যা লিভারকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ থেকে মুক্ত করতে পারে।
দেখা যাচ্ছে, কলা এবং গোলমরিচ দু’টি উপাদানই আলাদা আলাদা ভাবে লিভারের উপকারে লাগে। তবে দু’টি খাবার যদি এক সঙ্গে খাওয়া যায়, তবে সেই উপকার আরও অনেকটা বেড়ে যায় বলে জানাচ্ছেন গুঞ্জন। পুষ্টিবিদের পরামর্শ, ‘‘কলা একটি অত্যন্ত সহজলভ্য ফল। গোলমরিচও প্রায় সব রান্নাঘরেই পাওয়া যায়। তাই প্রতি দিন যদি কেউ প্রাতরাশে একটি করে কলা গোলমরিচ ছড়িয়ে খেতে পারেন, তবে তা তাঁদের লিভারের জন্য ভাল বলেই প্রমাণিত হবে।’’
সতর্কতা
যদিও পুষ্টিবিদ শ্রেয়া বলছেন, এই উপশম সবার জন্য নয়। কেউ যদি লিভারের রোগী হওয়ার পাশাপাশি ডায়াবিটিসেরও সমস্যায় ভোগেন তবে, তাঁর এই টোটকা এড়িয়ে চলাই ভাল। যাঁদের আলসারের সমস্যা রয়েছে, তাঁদেরও গোলমরিচ বেশি খাওয়া উচিত নয়।