শিশু সারা ক্ষণই ঘামছে, এই লক্ষণ কি স্বাভাবিক? ফাইল চিত্র।
শিশুর অতিরিক্ত ঘাম চিন্তার বিষয়ই বটে। বিশেষ করে সদ্যোজাত শিশু বা একদম ছোটদের যদি সারা ক্ষণই ঘামতে দেখেন, তা হলে বিষয়টি চিন্তার। সাধারণত নবজাতকদের ঘর্মগ্রন্থি অপরিণত থাকে। তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার প্রক্রিয়াও বড়দের থেকে কিছুটা আলাদা। খুব বেশি গরমের সময়ে বা শিশুকে খাওয়ানোর সময়ে কপালে হালকা ঘাম হতে দেখা যায়। অনেক সময় মাথার দিকের ঘর্মগ্রন্থিগুলি প্রথম দিকে বেশি সক্রিয় থাকে, তাই নবজাতকদের মাথা অতিরিক্ত ঘামতে দেখা যায়। তবে সারা শরীর যদি ঘামতে থাকে, তা হলে সতর্ক হতে হবে।
শিশুর অতিরিক্ত ঘাম কীসের লক্ষণ হতে পারে?
ঘাম মানেই যে তা বড়সড় শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিত তা না-ও হতে পারে। এই বিষয়ে ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থের শিশুরোগ চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পালের বক্তব্য, “ঘরের তাপমাত্রা গরম থাকলে বা অতিরিক্ত পোশাক পরিয়ে রাখলে হালকা ঘাম হতে পারে। তবে যদি দেখেন আরামদায়ক পরিবেশে থেকেও সারা ক্ষণ শিশু ঘামছে, রাতে শুয়েও ঘাম হচ্ছে, এবং সে সঙ্গে আরও কিছু উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ”
ঘামের সঙ্গে যা যা লক্ষণ দেখা গেলে সতর্ক হতে হবে—
১) যদি দেখা যায় শিশুর মাথা, গাল, ঘাড় ও সারা শরীর ঘামছে এবং সেই সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, তা হলে সাবধান হতে হবে।
২) জন্মগত ভাবে হার্টের ত্রুটি থাকলে ঘাম হতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৩) হাইপারহাইড্রোসিস এমন একটি অবস্থা যেখানে শিশুর শরীরেও ঘর্মগ্রন্থিগুলি অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। মাথা ও ঘাড়ে ঘাম হতে থাকে বেশি।
৪) ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির কারণে হাড় দুর্বল থাকলেও ঘাম বেশি হয়। সে ক্ষেত্রে শিশুর পা দুর্বল হবে, হাঁটতে দেরি হবে, শরীরের অস্থিসন্ধিগুলি ফুলে থাকবে।
৫) থাইরয়েড হরমোনের অত্যধিক ক্ষরণ হলেও অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। সে ক্ষেত্রে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক আছে কি না দেখতে হবে।
৬) শ্বাসযন্ত্রে কোনও রকম সংক্রমণ থাকলে, তার থেকেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৭) মা যদি স্নায়ুর রোগের ওষুধ বেশি খান, তা হলে শিশুর শরীরে নানা রকম অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে।
শিশুর ঘাম বেশি হলে প্রথমেই কোনও বড় রোগ হয়েছে ভেবে আতঙ্কে ভোগার প্রয়োজন নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ, শিশুর হাত-পা, ঠোঁট নীল হয়ে গেলে, শ্বাসের সমস্যা হলে, বয়স অনুযায়ী ওজন কম হলে বা ঘন ঘন ভাইরাল ফিভার হলে সতর্ক হতে হবে। নিজে থেকে কোনও রকম ওষুধ না খাইয়ে, চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে শিশুকে।