ছবি: ফ্রিপিক।
টানা বসে কাজ করা উচিত নয় জেনেও কাজের প্রয়োজনেই চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারেন না অনেকে। মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপ একটা কারণ। ৮-৯ ঘণ্টার মধ্যে পাহাড় প্রমাণ দৈনিক লক্ষ্য পূরণের তাগিদ চেয়ার ছেড়ে ওঠার কথা ভুলিয়েই দেয় প্রায়। ফলে একই জায়গায় বসে কম্পিউটার-ল্যাপটপের পর্দায় মুখ গুঁজে নিরন্তর চলতে থাকে সময়ে কাজ শেষ করার জল খাওয়া, খাবার খাওয়া সবই হতে থাকে ওই চেয়ারে বসেই। এমনকি, কর্পোরেট অফিসে চা-কফি খাওয়ার জন্যও উঠতে হয় না অনেক সময়ে। প্রয়োজন হলে সেই চা-কফি সময় মতো পৌঁছে যায় টেবিলে।
এতো গেল কর্পোরেট কর্মক্ষেত্রে চেয়ার থেকে না উঠতে পারার কারণ। যে সমস্ত কর্মক্ষেত্রে সরাসরি জনসাধারণের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়, যেমন ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, টেলিফোন বা বিদ্যুতের বিল সংক্রান্ত অফিস বা সরকারি পরিষেবার অফিসেও চেয়ার ছেড়ে ওঠা মুশকিল হয়ে প়ড়ে। কারণ জনতা পরিষেবা নিতে এলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় না। অনেক সময় এই বসে থাকার সময় দিনে ৬ ঘণ্টাও পেরিয়ে যায়। কেউ যদি দিনে ৬ ঘণ্টাই চেয়ারে বসিয়ে কাটিয়ে দেন তবে তার প্রভাব শরীরে কী ভাবে প়ড়বে? চিকিৎসকেরা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানিয়েছেন।
১। বিপাক হার বিপাকে
টানা ৫-৬ ঘণ্টা চেয়ারে বসে থাকলে শরীরের মেটাবলিজ়ম রেট বা বিপাকের হার সবার আগে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক মঞ্জুষা আগরওয়াল বলছেন, ‘‘টানা অনেক ক্ষণ বসে থাকলে তা শরীরে বিপাকের হারকে মন্থর করে দেয়। ফলে খাবার খাওয়ার পরে পাচন প্রক্রিয়াও মন্থর হয়। ক্যালোরি খরচ হয় কম। ধীরে ধীরে ওজন বাড়তে থাকে। শরীরে আসে স্থূলত্ব। যাঁরা ওজন ঝরানোর চেষ্টা করছেন, তাঁদের ওজন ঝরাতেও সমস্যা হবে সেক্ষেত্রে।’’
২। মধুমেহ মধুর নয়
চেয়ারে টানা ৫-৬ ঘণ্টা বসে থাকার অভ্যাসস শরীরে মধুমেহ রোগেরও জন্ম দিতে পারে বলে জানাচ্ছেন ফিটনেস প্রশিক্ষক শিখা সিংহ। তিনি বলছেন, ‘‘দিনের দীর্ঘ সময় হাঁটা-চলা কম হলে শরীরের ভিতরেরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে, বিশেষ করে শরীরে উর্ধ্বাঙ্গে যে সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ রয়েছে, তার চারপাশে চর্বি জমতে শুরু করে।’’ এই ধরনের চর্বি জমে মূলত পেটে। পেটের ভিতরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গে চর্বি জমলে তা ইনস্যুলিনের কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয় বলে জানাচ্ছেন শিখা। তিনি বলছেন, ‘‘ইনস্যুলিন কাজ না করলে ধীরে ধীরে ঝুঁকি বাড়তে থাকে ডায়াবিটিস বা মধুমেহ রোগের।’’
৩। চাপে বাড়বে রক্তচাপ, হৃদরোগের ঝুঁকিও
কমবয়সিদের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা যে ইদানীং বাড়ছে, তার একটা বড় কারণ এই টানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই জায়গায় বসে কাজ করার প্রবণতা। চিকিৎসক মঞ্জুষা বলছেন, ‘‘প্রতিদিন ৫-৬ ঘণ্টা একই জায়গায় বসে কাজ করলে, তার প্রভাব পড়ে হার্টেও। রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের সমস্যা বাড়তে পারে। যা বাড়িয়ে দেবে হৃদরোগের ঝুঁকি।’’
এ ছাড়াও টানা একই জায়গায় বসে কাজ করার যে অবশ্যম্ভাবী ক্ষতি, যেমন অস্থিসন্ধির ব্যথা, স্নায়ুর সমস্যা, ঘাড়়ে-পিঠে ব্যথা এমনকি, চোখে অস্বস্তিও হতে পারে। তা হলে সমাধান কী? সেই উত্তর অবশ্য জানা। টানা বসে না থেকে আধ ঘণ্টা অন্তর অন্তত ৫-৭ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা জরুরি। শিখা বলছেন, এতে আরও একটি সুবিধা হতে পারে। যেহেতু আধ ঘণ্টা অন্তর উঠতে হবে, তাই সময়ের হিসাবের পাশাপাশি কাজে গতিও আসবে। তাতে দু’ভাবেই লাভ হবে।