পুজোর ক’টা দিন ছুটিতে সমস্ত রকম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটিয়ে উঠতে এই অ্যাপগুলির সাহায্য নিতেই পারেন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। মনে হল, অফিসের শেষ কাজটা ঠিক মতো করা হয়েছিল তো? কিংবা ভালবাসার মানুষটি আঘাত দেবে না তো? ছেলেমেয়ের পড়াশোনা থেকে বয়স্ক বাবা-মায়ের স্বাস্থ্য— এমন হাজারো চিন্তা প্রতিনিয়ত মাথায় ঢেউয়ের মতো উঠছে-নামছে। চিন্তার এই দুলুনিতে জন্ম ‘স্ট্রেস’ শব্দটির। যার দৌলতে মন অস্থির, মাথায় দুশ্চিন্তার পাহাড়। লাগামহীন প্রতিযোগিতা, ব্যর্থতার ভয়, মনকে অশান্ত করে তুলছে। অথচ দু’দণ্ড মনের কথা বলে হালকা হবেন, সে সময় কই! ধৈর্য ধরে কথা শোনার মানুষের সংখ্যাও কমছে। মনোবিদেরা বলছেন, অশান্ত মনকে শান্ত করার উপায় হল মেডিটেশন। সেখানেও নিজেকেই চেষ্টা করে মন স্থির রাখতে হবে। চোখ বন্ধ করে ধ্যানে বসলেই কি সমস্যার সমাধান হবে? মনকে ধরেবেঁধে রাখার সে কৌশল কি সকলে আয়ত্ত করতে পারেন? মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকা ভাল-মন্দের দ্বন্দ্ব সমাধানে সাহায্য করতে পারে কিছু অ্যাপ। শরীরের খেয়াল রাখার পাশাপাশি মনের খেয়াল রাখতেও তৈরি হয়েছে নানা রকম ‘মেন্টাল হেল্থ অ্যাপ’। নেপথ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
বাড়িতে একা, প্রিয়জন পাশে নেই, মনের অশান্তি কাটাতে ভরসা হতে পারে অ্যাপ। আবার ধরুন, বয়স্ক বাবা বা মা বাড়িতে একাকী। পুজোর সময়টা তাঁদের কাছে যেতে পারলেন না। সেই সময়টাতে তাঁদের নিঃসঙ্গতা কাটাতে পারে অ্যাপ। কোনও কারণে মন ভারাক্রান্ত। কাউকে কিছু বলতেও পারছেন না। খানিক প্রশান্তির জন্য রিল দেখে সময় নষ্ট না করে, সাহায্য নিতে পারেন অ্যাপের। কেমন সেই সব অ্যাপ? কাজ করে কী ভাবে? পুজোর ক’টা দিন ছুটিতে সমস্ত রকম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটিয়ে উঠতে এই অ্যাপগুলির সাহায্য নিতেই পারেন।
মাইন্ডফুলনেস অ্যাপ
'কাম' এবং 'হেডস্পেস' নামের দু’টি অ্যাপ আছে, যেগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত। এই অ্যাপগুলি নানা ভাবে কাজ করে। তাদের মেডিটেশন সেশন আছে, আপনাকে শিখিয়ে দেবে কী ভাবে ধ্যান করলে দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারেন। ঠিক মনোবিদের মতোই মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে কাউন্সেলিং করে তারা, নানা রকম ব্যায়াম শেখায়। নিশ্চিন্তে যাতে ঘুমোতে পারেন, তার জন্য মিউজ়িক থেরাপিও করে। এমনকি, ঘুম পাড়ানোর জন্য নানা রকম গল্পও বলে। গুগ্ল প্লে স্টোর থেকে দু’টি অ্যাপই ইনস্টল করা যাবে।
মুড ট্র্যাকিং অ্যাপ
ঘণ্টায় ঘণ্টায় বদলে যাচ্ছে মেজাজ। অনেকেই বলবেন, মন ভাল নেই। ইচ্ছে, প্রয়োজন, আবেগ, অনুভূতিগুলিকে আপনি একসূত্রে গাঁথতে না পারলেও, এআই অ্যাপ তা পারবে। কখন আপনার মন ভাল থাকে, কখন থাকে না, কোন সময়ে আপনি রেগে ওঠেন, কখন দুঃখ পান, কোন সময়ে অবসাদ গ্রাস করে, তার খুঁটিনাটির রেকর্ড রাখবে কিছু অ্যাপ। ‘মুডনোটস’, ‘ডেলিয়ো’, ‘রিফ্লেক্টলি’—এই সব অ্যাপের মাধ্যমে বোঝা যাবে, আপনি কতটা ‘মুড সুয়িং’-এ ভুগছেন, অথবা বারে বারে ‘প্যানিক অ্যাটাক’ হয় কি না। যে সমস্যাটা আপনি বা আপনার চারপাশের মানুষজন ধরতে পারছেন না, তারই গোড়ায় গিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারবে এই সব অ্যাপ। সমস্যা সমাধানের পথও দেখাবে।
কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি
কোথাও যেতে লজ্জা, বহু মানুষের মধ্যে বসে খেতে লজ্জা, উচিত কথা বলতে লজ্জা— এ তো মহা বিপদ! এ ভাবে চললে যে জীবন থেমে যাবে! কাজেই এ রকম সমস্যা থাকলে দেরি না করে নিজেকে বদলাতে উঠেপড়ে লাগুন৷ প্রথমে বুঝে দেখুন, আপনি লাজুক না অবসেসিভ৷ অবসেসিভ হলে কাজটা একটু কঠিন৷ কারণ যে কোনও বিষয়ে তাদের বিশ্বাস ও ধারণা এত বদ্ধমূল থাকে যে, তা বদলাতে বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয়৷ অবিবেচকের মতো অগ্রপশ্চাৎ না ভেবে কাজ করা, অতিরিক্ত জেদ, সব কাজেই খুঁতখুঁতে হওয়া বা অত্যধিক বাতিক— এমন সব সমস্যার সমাধানে মনোবিদেরা যে চিকিৎসা করেন, তার নাম ‘কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি’ বা সিবিটি। মনের এমন স্থিতির সাময়িক সমাধানে সাহায্য করতে পারে কিছু অ্যাপ। আপনার হোক বা পরিবারের কারওর, ‘মুডমিশন’, ‘হ্যাপিফাই’ জাতীয় কিছু অ্যাপ মুঠোফোনে থাকলে সুবিধাই হবে।
উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, ভয় এবং প্যানিক অ্যাটাকের মতো সমস্যা মোকাবিলায় এই অ্যাপগুলি কার্যকর হতে পারে। চ্যাটবটের মাধ্যমে আপনার সমস্যা শোনা ও তার সমাধান করার চেষ্টা করে অ্যাপগুলি।
সাইকোলজি চ্যাটবট অ্যাপ
‘রেপ্লিকা’, ‘ওয়াইসা’ নামের কিছু অ্যাপ আছে, যেখানে এআই চ্যাটবটের কাছে মনের কথা খুলে বলতে পারেন। খুবই সহানুভূতিশীল প্রতিক্রিয়া দিয়ে সেই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবে চ্যাটবট। ওয়াইসা অ্যাপ মনোবিদের সঙ্গে যোগাযোগও করিয়ে দেয়। অ্যাপের মাধ্যমে কাউন্সেলিং, থেরাপিও চলে।