কয়েক বছর আগেও যে মানুষটি নির্দ্বিধায় মিষ্টি খেয়েছেন, এখন তিনিও দু’বার ভাবেন, মিষ্টি খাওয়া ঠিক হচ্ছে কি না। ময়দার পরোটা, লুচি খাওয়া বাঙালি এখন মাঝেমধ্যে ভাজাভুজি খেলে আটার পুরি বেছে নিচ্ছেন। সমাজমাধ্যমে হইচই— স্বাস্থ্য ভাল রাখতে হলে বর্জন করতে হবে সাদা। মানে সাদা চিনি, ময়দা, ভাত। এসব নাকি সিনেমার নায়ক-নায়িকারাও করেন!
দিনে দিনে স্বাস্থ্য নিয়ে যতই সচেতনতা বাড়ছে, ততই ‘চিরশত্রু’র তকমা পাচ্ছে চিনি এবং ময়দা। তাই খাদ্যতালিকা থেকে বাদ পড়ছে ময়দায় তৈরি সাদা পাউরুটি। অথচ প্রাতরাশে মাখন মাখানো পাউরুটির সঙ্গে আধসেদ্ধ ডিম বা পোচের যুগলবন্দি অনেকের কাছেই তৃপ্তিদায়ক খাবার।
পাউরুটিতে সমস্যা কেন?
সাদা পাউরুটি তৈরি হয় ময়দা দিয়ে। ময়দা রিফাইনড কার্বোহাইড্রেট। এতে ফাইবারের মাত্রা খুবই কম। ফলে পাউরুটি দ্রুত শরীরে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে। পুষ্টিগুণ তেমন থাকে না বলে শুধুই শরীরে ক্যালোরি বৃদ্ধি করে। ফলে ওজন বৃদ্ধিরও ভয় থেকে যায়।
তবে ২০১৯ সালে ‘ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্র বলছে, কার্বোহাইড্রেট শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। পুষ্টিবিদেরাও বলছেন, কার্বোহাইড্রেটকে শত্রু বানিয়ে ফেলাটা মোটেই ঠিক নয়। বরং কোন ধরনের কার্বোহাইড্রেট স্বাস্থ্য-উপযোগী তা বোঝা প্রয়োজন। সিম্পল কার্বোহাইড্রেটের বদলে তাঁরা বলছেন কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বেছে নিতে। দানাশস্য, নানা রকম সব্জিতে থাকা এই ধরনের কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করা ধীরে ধীরে নির্গত করে। ফলে আচমকা রক্তে শর্করার বৃদ্ধির ভয় থাকে না এতে। ‘আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন’-এ প্রকাশিত ২০১৪ সালের এক গবেষণালব্ধ রিপোর্টে প্রকাশ, খাদ্যতালিকায় দানাশস্য রাখলে তা মেদ গলাতে বিপাকহার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
কোন পাউরুটি খাওয়া যায়?
সমস্যা পাউরুটিতে নয়, রয়েছে উপকরণে। সব ধরনের পাউরুটি ওজনবৃদ্ধির কারণ হয় না। নানা রকম দানাশস্য দিয়েও পাউরুটি তৈরি হয়। রাগি, মিলেট, মাল্টিগ্রেন ব্রেড দিয়েও পাউরুটি তৈরি হয়। সাওয়ারডো নামে এই ধরনের পাউরুটি হয়, যা প্রাকৃতিক ইস্টের দ্বারা তৈরি হয়। ইস্ট এবং ল্যাক্টোব্যাসিলাস ব্যাক্টেরিয়া এই ধরনের পাউরুটিগুলিকে ফাঁপাতে সাহায্য করে। এগুলি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। এতে ফাইবারও থাকে।
কী ভাবে খাবেন?
পাউরুটি কতটা খাচ্ছেন, কী দিয়ে খাচ্ছেন, তার উপর নির্ভর করে তা ওজন বৃদ্ধিতে না কি কমাতে সহায়ক হবে। যেমন বাদামের মাখন শরীরে প্রোটিনের জোগান দেয়। পাউরুটির সঙ্গে অ্যাভোকাডো, বাদামের মাখন, সঙ্গে ডিম সেদ্ধ বা পোচ খেলে শরীরে কার্বোহাইড্রেটের পাশাপাশি প্রোটিনের জোগানও থাকবে। জুড়বে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। সঙ্গে স্যালাড রাখলে ভিটামিন-খনিজও পাওয়া যাবে। আবার চিজ়-মেয়োনিজ় ক্যালোরির পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে।