বেশি বয়সে মা হওয়ার আগে কোন কোন শারীরিক পরীক্ষা করানো জরুরি? ছবি: শাটারস্টক।
অনেক মহিলাই এখন বেশি বয়সে নিজের কর্মক্ষেত্রে একটি ভাল জায়গায় পৌঁছনোর পরেই মা হওয়া সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। চাইলেন আর মা হয়ে গেলেন, ব্যাপারটা কিন্তু অত সহজ নয়। ৩০-এর পর থেকে মেয়েদের শরীরে ডিম্বাণুর সংখ্যা ও গুণমান কমতে থাকে। ৩৫-এর পর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার সম্ভাবনা দ্রুত কমে যেতে থাকে। অন্তঃসত্ত্বা হলেও হরমোনের গোলমালের জন্য গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আবার ডিম্বাণুর গুণমান ভাল না হলে শিশু বিকলাঙ্গ হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে। শুধু তা-ই নয়, মায়েরও স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে। তাই বেশি বয়সে সন্তানধারণের পরিকল্পনা করলে মাথায় রেখে চলতে হবে কিছু জরুরি বিষয়। বেশি বয়সে গর্ভধারণ করার আগে কী কী শারীরিক পরীক্ষা করাতে হবে, জানালেন চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়।
১) এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে আগে দু’রকম টেস্ট করিয়ে নেওয়া খুব দরকার। ক) আলট্রাসাউন্ড- এই পরীক্ষা করালে বোঝা যাবে, জরায়ু ঠিক কেমন পর্যায়ে রয়েছে এবং ডিম্বাণুর গুণগত মান কেমন। খ) এএমএইচ টেস্ট- এই পরীক্ষা করালে বোঝা যাবে, জরায়ুতে কতগুলি ডিম্বাণু অবশিষ্ট আছে, মা হওয়া সম্ভব কি না।
২) থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া দরকার। মা ও বাবা দু’জনেই যদি বাহক হন, তা হলে ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে শিশুরও থ্যালাসেমিয়া হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।
৩) রুবেলা টেস্ট করানো খুবই জরুরি। চিকিৎসক বলে দেবেন, কখন রুবেলার টিকা নিতে হবে। রুবেলার টিকা নেওয়া থাকলে গর্ভাবস্থায় সংক্রমণের ভয় কম থাকবে। তা না হলে, গর্ভাবস্থায় যদি কোনও রকম সংক্রমণ ঘটে, তা হলে শিশু সুস্থ ও স্বাভাবিক হবে না।
৪) এখন এন্ডোমেট্রিয়োসিস, পলিসিস্টিক ওভারির মতো সমস্যা ঘরে ঘরে। তাই মা হওয়ার কথা ভাবলে আগে থেকে এ সবের চিকিৎসা করিয়ে নেওয়া ভাল।
৫) বয়স ৩৯ বছর পার করে গেলেই সেই মহিলার রক্তের এনআইপিটি টেস্ট করে নেওয়া হয়। তাতেই ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে বলে দেওয়া যায়, শিশুর ডাউন সিন্ড্রোম হতে পারে কি না।
এ ছাড়া বেশি বয়সে মা হওয়ার পরিকল্পনা করলে ‘প্রি-কনসেপশনাল কাউন্সেলিং’ খুব জরুরি। ভারতে এমন ধারণা আগে কম ছিল, এখন বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে আগে আলট্রাসাউন্ড ও এএমআইচ পরীক্ষা করিয়ে দেখে নেওয়া হয়, স্বাভাবিক ভাবে মা হওয়া সম্ভব কি না। তা ছাড়া, আরও দেখা হয়, সন্তান ধারণ ও প্রসবের সময়ে কোনও জটিলতা হতে পারে কি না। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, থাইরেয়ড আছে কি না, তা-ও পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হয়। হার্টের রোগ থাকলেও মা হওয়া যায়। তখন আগে থেকেই শরীরকে এমন ভাবে তৈরি করা হয়, যাতে গর্ভস্থ শিশু ও মা দু’জনের শরীরই সুস্থ থাকতে পারে।