ছবি : সংগৃহীত।
দীর্ঘ গবেষণা। ৮৫ বছর ধরে চলেছে। ১৯৩৮ সাল থেকে ৭২৪ জন মানুষের জীবনে নজর রেখেছেন গবেষকেরা। যাঁরা শুরু করেছিলেন গবেষণার কাজ, তাঁদের অনেকেই হয়তো আর কর্মরত নয়। হয়তো কেউ কেউ কাজের ফল দেখতে না পেয়ে, জানতে না পেরে প্রয়াতও হয়েছেন। কিন্তু গবেষণা থামেনি। চলেছে সমানে। এক প্রজন্মের পরে আর এক প্রজন্মের গবেষকেরা নজর রেখেছেন ওই ৭২৪ জনের উপর।
গবেষণা যখন শুরু হয়েছিল, তখন এই ৭২৪ জনের অধিকাংশ শিশু। কেউ কেউ কৈশোরে। এঁদের কৈশোর, বয়ঃসন্ধি, তারুণ্য, যৌবন, প্রাপ্তবয়স, প্রৌঢ়ত্ব এবং বার্ধক্য— সব কিছুই খতিয়ে দেখা হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে এঁদের জীবনে আগমন ঘটেছে বন্ধুত্ব, প্রেম, সম্পর্কের। যাঁদের বিয়ে হয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকের স্ত্রী অথবা সম্পর্কে থাকলে সঙ্গীকেও আনা হয়েছে গবেষকদের নজরদারিতে। পরবর্তী কালে তাঁদের সন্তান, এমনকি, নাতি-নাতনিদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন গবেষকেরা। বিভিন্ন সময়ে এঁদের প্রত্যেককে কিছু কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়ে যেতে হয়েছে। আর সেই সমস্ত জবাবের মধ্যেই অবশেষে এক নিগূঢ় প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা। অন্তত তেমনই তাঁদের বিশ্বাস।
গবেষণাটি করেছিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। লক্ষ্য ছিল একটাই মানুষের জীবনের সুখের চাবিকাঠির সন্ধান। ঠিক কোন জিনিসটি হলে মানুষ সবচেয়ে সুখী হয় তা জানা। দীর্ঘ নজরদারি এবং প্রশ্নোত্তরের বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখেছেন, মানুষের সুখের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে সম্পর্কে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁদের সম্পর্কের সুতো মজবুত, যাঁরা বিপদে কাছের মানুষটিকে পাশে পেয়েছেন সব সময়, তাঁরা শুধু সুখী নন, তাঁরা বাকিদের থেকে সুস্থ জীবনও কাটিয়েছেন বেশি দিন। বেঁচেছেন বেশি দিন। তুলনায় যাঁদের সম্পর্কে জটিলতা ছিল, সমস্যা ছিল, তাঁরা অসুখী থেকেছেন। তাঁদের আয়ুতেও তার প্রভাব পড়েছে।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, আরও একটি বিষয় অবাক করেছে তাঁদের। সমাজের উঁচু স্তরে থাকা মানুষ, বা বেশি বুদ্ধিমান মানুষ বা যাঁরা ভাল জিনের অধিকারী, তাঁরা যে সকলে সুখী তা নয়। ওই তিনটি বিষয়ের কোনওটিই সুখে থাকাকে প্রভাবিত করতে পারেননি। বরং যাঁরা মিশতে পেরেছেন সমাজে, মানুষের সঙ্গে সহজেই সম্পর্ক গড়তে পেরেছেন এবং তা বজায় রাখতে পেরেছেন, তাঁদের সুখবোধ বেশি।