গ্রীষ্মে জলে সাঁতার কেটে আরাম পান অনেকেই। ছবি: সংগৃহীত।
পুকুর হোক বা সাজানো স্যুইমিং পুল, এই গ্রীষ্মে জলে সাঁতার কেটে আরাম পান অনেকেই। তবে কেবল গরম থেকে বাঁচানো নয়, নানা ভাবে স্বাস্থ্যরক্ষায় অবদান রাখে জলের এই ক্রীড়া। চিকিৎসকদেরও পছন্দের এই শরীরচর্চা। তাঁরা জিমের থেকে বেশি নম্বর দেন সাঁতারের মতো কার্ডিয়োভাস্কুলার ব্যায়ামগুলিকে। কলকাতার হৃদ্রোগ চিকিৎসক উদয়শঙ্কর দাস বলছেন, ‘‘সাঁতার এক প্রকার অ্যারোবিক ওয়ার্কআউট। পেশিকে মজবুত করে। বাধা-প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে চলার অভ্যাসই সাঁতারের মূলমন্ত্র। হার্টে রক্তের সরবরাহ বৃদ্ধি করতে পারে বলে হার্ট ভাল থাকে। ক্যালোরি ঝরাতে পারে, তাই ওবেসিটির সমস্যা থাকে না। মনমেজাজ ভাল রাখার ক্ষেত্রেও সাঁতারের অনেক গুরুত্ব।’’
সাঁতারের উপকারিতা
সারা শরীরের ব্যায়াম: মাথা থেকে পা পর্যন্ত, গোটা শরীরকে সক্রিয় রাখতে পারে সাঁতার। সমস্ত পেশি যখন সঙ্কোচন-প্রসারণের মধ্যে থাকে, তখন কার্ডিয়োভাস্কুলার সিস্টেমও সক্রিয় থাকতে পারে।
হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যরক্ষা: হৃদ্রোগ চিকিৎসক উদয়শঙ্কর দাস বললেন, ‘‘সাঁতার হার্টের জন্য ভীষণ উপকারী। হার্টে রক্তের সরবরাহ বৃদ্ধি করতে পারে বলে হার্ট ভাল থাকে। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং হার্টের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রেও সাঁতার খুব কার্যকরী। তবে একটি সমস্যা রয়েছে সাঁতারের। যাঁদের ‘লং কিউটি সিনড্রোম’-এর মতো জিনগত রোগ আছে, তাঁদের জন্য সাঁতার বিপজ্জনক। তাই ইসিজি না করে সাঁতার শুরু করা উচিত নয়।’’
শ্বাসকষ্টের সমস্যার প্রশমন: হাত-পায়ের ছন্দ মিলিয়ে জলে ভেসে থাকাই সাঁতারের মূলমন্ত্র। কিন্তু পাশাপাশি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের চলনের সঙ্গেও ছন্দে মেলাতে হয়। ফলে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ থাকলে, এই ব্যায়াম খুবই উপকারী। শ্বাস ধরে রাখার অভ্যাস ধীরে ধীরে ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে একই সঙ্গে স্যুইমিং পুলে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে। তার চেয়ে বরং পুকুর ভাল, অথবা এমন পুল যেখানে ক্লোরিনের বদলে নোনা জলের ব্যবহার হয়। তবে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ভাল।
এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, আট মাস ধরে টানা উষ্ণ জলে সাঁতার কেটে ২০ শতাংশ মহিলার ফাইব্রোমায়ালজিয়ার সমস্যা কমে গিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
গাঁটের স্বাস্থ্য ভাল রাখে: গাঁটের সমস্যা থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসকেরা দৌড়তে বারণ করেন। তাতে নাকি গাঁটে চাপ পড়তে পারে। কিন্তু সাঁতারের ক্ষেত্রে সুবিধা রয়েছে। সাঁতারে শরীরের ভার থাকে জলের উপর, পায়ের উপরে নয়। ফলে চাপ পড়ে না গাঁটে।
ফাইব্রোমায়ালজিয়ার উপশম: মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের সংযোগ সম্পর্কিত রোগ, যার ফলে শরীরে একটানা ব্যথা হয়। সেই রোগ উপশমের জন্য নাকি সাঁতার খুব উপকারী। ‘জার্নাল অফ রিহ্যাবিলিটেশন মেডিসিন’-এর এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, আট মাস ধরে টানা উষ্ণ জলে সাঁতার কেটে ২০ শতাংশ মহিলার ফাইব্রোমায়ালজিয়ার সমস্যা কমে গিয়েছে। তা ছাড়া ৫৩ শতাংশ মহিলার দেহে আড়ষ্টতার উপশম হয়েছিল।
এ ছাড়া ক্যালোরি ঝরিয়ে ওজনহ্রাস থেকে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি, রাতে ভাল ঘুম হওয়া ইত্যাদির জন্যেও সাঁতার কাটা উচিত। তবে কিছু ব্যক্তির জন্য বিপজ্জনক হতে পারে জলের এই ক্রীড়া। তাই মাথায় রাখতে হবে, কোন রোগ রয়েছে, সেই বুঝে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে সাঁতার শুরু করতে হবে।