Home remedies of Diarrhoea

শিশুদের ডায়রিয়া হলে কী করণীয়

এই রোগ আটকাতে পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। এ ছাড়াও কী কী নিয়ম মেনে চলা জরুরি?

Advertisement

সুনীতা কোলে

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৫৪
Share:

শিশুদের ছোটখাটো শরীরখারাপ লেগেই থাকে। তার মধ্যে অন্যতম হল পেট খারাপ বা ডায়রিয়া। বিশেষত, গরমে এর প্রকোপ বাড়ে। তবে ডায়রিয়া অনেক ক্ষেত্রেই দ্রুত সেরে যায় এবং তেমন চিন্তার বিষয় হয় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে তা ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই জেনে নেওয়া যাক কেন হয় ডায়রিয়া? তা ঠেকানোর উপায়ই বা কী।

Advertisement

ডায়রিয়া কী?

দিনে তিন বা তার বেশি বার তরল মলত্যাগ করলে তাকে ডায়রিয়া বলেন চিকিৎসকেরা। এর সঙ্গে থাকতে পারে পেটে ব্যথা এবং বমির মতো উপসর্গ। তবে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী জানাচ্ছেন, সদ্যোজাত শিশু যারা মায়ের দুধ খায়, তারা দিনে দুইয়ের বেশি বার, কিছুটা তরল মলত্যাগ করতে পারে। পাশাপাশি, তাদের ক্ষেত্রে কখনও কখনও মলের রং কিছুটা সবুজ হতে পারে। তবে শিশু যদি স্বাভাবিক ভাবে খেলাধুলো করে এবং প্রস্রাবে অস্বাভাবিকতা না থাকে, তা হলে চিন্তার কোনও কারণ নেই বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

ডায়রিয়ার কারণ

বিভিন্ন বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে বয়স অনুযায়ী ডায়রিয়ার কারণ আলাদা হতে পারে বলে জানাচ্ছেন শিশুরোগ চিকিৎসকেরা। সাধারণত ভাইরাস এবং ব্যাক্টিরিয়ার সংক্রমণের জেরে শিশুদের ডায়রিয়া হয়ে থাকে। ভাইরাসের ক্ষেত্রে রোটাভাইরাস, অ্যাডিনোভাইরাস, নরওয়াক এবং এন্টেরোভাইরাসের কথা বলছেন চিকিৎসকেরা। তবে বর্তমানে রোটাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়া হয় শিশুদের। যে ভ্যাকসিনগুলি শিশুদের অবশ্যই দিতে হবে বলে সরকার নির্ধারণ করেছে, তার মধ্যেই পড়ে এটি। ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলে এখন শিশুদের মধ্যে রোটাভাইরাস ঘটিত ডায়রিয়ার প্রকোপ কমেছে বলে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন।

ই কোলাই, সালমোনেলা, কলেরার ব্যাক্টিরিয়ার জন্যও ডায়রিয়া হতে পারে শিশুদের। এর পাশাপাশি, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অপূর্ব ঘোষ জানাচ্ছেন, কারও কারও ক্ষেত্রে জন্মগত কিছু কারণ যেমন দুধ, গমজাতীয় খাবারে অ্যালার্জি বা ইনটলারেন্স থেকেও হয় ডায়রিয়া। তিনি আরও জানাচ্ছেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা, ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজ়িজ়, ক্ষুদ্রান্ত্রে সমস্যা, খাদ্য শোষণের সমস্যার মতো কিছু উপসর্গও থাকতে পারে এই রোগে।

লক্ষণ কী কী

বার বার তরল মলত্যাগ ছাড়াও মলের সঙ্গে রক্ত পড়া, পেটে ব্যথা, বমি হতে পারে ডায়রিয়ার জন্য। তবে ডায়রিয়ার সবচেয়ে গুরুতর লক্ষণ হল জলশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন।

জলশূন্যতা বোঝা যাবে কী ভাবে

ডা. অপূর্ব ঘোষ বললেন, “জলশূন্যতার লক্ষণ হল— ঠিক মতো প্রস্রাব না হওয়া, শিশুর মধ্যে আলস্য ভাব, চোখের চারপাশ বসে যাওয়া, জিভ-ঠোঁট-গালের ভিতরের চামড়া শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এ ছাড়া, জলশূন্যতায় পেটের চামড়া দু’আঙুলের মধ্যে টেনে চেপে ছেড়ে দিলে স্বাভাবিক অবস্থায় যেতে সময় লাগে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী। দেড় বছরের কমবয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে ব্রহ্মতালুর নরম অংশও কিছুটা ভিতরের দিকে ঢুকে যেতে পারে। জলশূন্যতার মাত্রা বেশি হলে জল খেতেও অনীহা দেখা যায়। এমনকি, শুকিয়ে যেতে পারে চোখের জলও।”

চিকিৎসা কী

প্রাথমিক ভাবে, ডায়রিয়ার চিকিৎসায় ওআরএস ছাড়া অন্য কিছুর প্রয়োজন পড়ে না বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। যে পরিমাণ জল শরীর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, তার ঘাটতি পূরণের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অনুমোদিত ফর্মুলা মেনে তৈরি ওআরএস দিতে হবে। তা না পাওয়া গেলে এক গ্লাস জলে এক চামচ চিনি ও এক চিমটে নুন মিশিয়ে সেই মিশ্রণও দেওয়া যেতে পারে। তবে মলের সঙ্গে রক্ত পড়লে, বেশি জ্বর থাকলে, প্রস্রাব না হলে, বাচ্চা ঝিমিয়ে পড়লে এবং বারবার বমির জন্য ওআরএস না দেওয়া গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বা হাসপাতালে ভর্তি করার কথা চিন্তা করতে হবে।

চিকিৎসক দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী বললেন, “শিশুদের ডায়রিয়া হলে ভাত খাওয়ানো বন্ধ করা চলবে না। ডালের জল, ভাতের মাড়ও দেওয়া যেতে পারে। তিনি বিশেষ জোর দিচ্ছেন মায়ের দুধ খাওয়ানোর উপরে। কারণ মায়ের দুধ নিরাপদ খাবার হওয়ার পাশাপাশি তাতে ডায়রিয়া আটকানোর উপাদানও থাকে।” এর পাশাপাশি, ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করছেন তিনি। তিনি জানাচ্ছেন, খুব কম ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন পড়ে। প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াও, ‘কস্ট-বেনিফিট রেশিয়ো’ বিচার করে দেওয়া যেতে পারে প্রোবায়োটিক।

ডায়রিয়া আটকাতে

এই রোগ আটকাতে পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই বলে মত চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষের। বাড়িতে সার্বিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার পাশাপাশি শিশুদের খাওয়ানোর আগে ভাল করে সাবান দিয়ে ধুতে হবে হাত। নখের তলা এবং আঙুলের ফাঁকের দিকে বিশেষ নজর রেখে হাত ধোয়ার দরকার। এ ছাড়া, নজর রাখতে হবে বাসনপত্র পরিষ্কার রাখার দিকেও। শিশুরা স্কুলে যেতে শুরু করলে শৌচাগার ব্যবহার করার পরে এবং খাওয়ার আগে হাত সাবান দিয়ে ধোয়ার অভ্যেস করানো জরুরি।

পাশাপাশি নজর দিতে হবে নিরাপদ পানীয় জলের দিকেও। জলের শুদ্ধতা নিয়ে সন্দেহ থাকলে জল ফুটিয়ে ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন