ছবি : সংগৃহীত।
পান বরাবরই বাঙালির উৎসবের সঙ্গী। কব্জি ডুবিয়ে খাওয়াদাওয়ারও। বিয়েবাড়ি হোক বা জামাইষষ্ঠীর ভূরিভোজ— শেষ পাতে মিষ্টি যেমন থাকতেই হবে, তেমনই মুখশুদ্ধির পানও জরুরি। এক কালে পান পাতায় চুন-সুপুরি-মৌরী-এলাচ সেজে রেকাবিতে সাজিয়ে জামাইয়ের হাতে দিতেন শ্বাশুড়ি মা। বহু বছর পরে জামাইষষ্ঠীর খাওয়াদাওয়ার পরে শ্বাশুড়ির পছন্দের মিষ্টি পান এনে দিতে দেখা গিয়েছে জামাইকেও। পান আসলে ‘মধুরেণ সমাপয়েত’-এর সাক্ষাৎ রূপ। তার সঙ্গে জুড়ে থাকে সব সুখস্মৃতি। জুড়ে থাকে মনের আরামের ঠিকানা। তবে পান শুধু মন নয়, শরীরেরও খেয়াল রাখতে পারে। ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্র তো বটেই, বহু বৈজ্ঞানিক গবেষণাতেও দেখা গিয়েছে পান শরীরে ওষুধের মতো কাজ করে।
পান কী ভাবে স্বাস্থ্য ভাল রাখে?
১। পান এক ধরনের প্রাকৃতিক প্রিজ়ারভেটিভ। কারণ তাতে আছে নানারকমের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টি-ব্যাক্টিরিয়াল উপাদান। যা রক্তকে দূষণমুক্ত করতে সাহায্য করে। তা ছাড়া, পানে আছে প্রোটিন, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম এবং উপকারী এসেনসিয়াল অয়েলও। যা নানা ভাবে শরীরের উপকারে লাগে।
২। কাশ্মীরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, লখনউয়ের ইনটিগ্রাল ইউনিভার্সিটি এবং কানপুরের হারকোর্ট বাটলার টেকনিকাল ইউনিভার্সিটির মিলিত ওই গবেষণায় এ কথাও জানা যাচ্ছে যে, পানে আছে প্রদাহনাশক উপাদান। যা পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে।
৩। পানের ঔষধি গুণের কথা লেখা আছে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও। সেখানে বলা হচ্ছে পান রক্ত থেকে দূষণ দূর করতে সাহায্য করে। কিন্তু পান সাধারণত যে ভাবে খাওয়া হয়, সে ভাবে গুলকন্দ, মেঠাই এবং বিবিধ মিষ্টি মশলা দিয়ে খেলেও কি একই উপকার হবে?
পান আসলে ‘মধুরেণ সমাপয়েত’-এর সাক্ষাৎ রূপ।
পান কখন কী ভাবে খেলে ভাল
১। খালি পেটে
সকালে পান পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। তাতে লিভার ভাল থাকবে। হজমের উন্নতি হবে। রক্তের দূষণের মাত্রাও কমবে। তাতে শরীরের বহু রোগের প্রকোপ কমে যাবে। বাড়বে রোগ প্রতিরোধ শক্তিও।
২। ডিটক্স পানীয়
পান পাতা দিয়ে তৈরি করতে পারেন ডিটক্স পানীয়। পান পাতা জলে মিনিট পাঁচেক ফুটিয়ে নিয়ে ছেঁকে নিন। ঈষদোষ্ণ অবস্থায় পান করুন। এই ভেষজ পানীয় শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বার করে দেবে। গ্যাস এবং তার থেকে হওয়া পেটফাঁপার সমস্যা কমাবে এবং বিপাকের হার বৃদ্ধি করবে। যা ওজন কমানোর জন্যও ভাল।
৩। ডিপ বা সস্
চিপ্স বা স্ন্যাকস বা টোস্ট অনেক সময় মেয়োনিজ়ের ডিপ বা টম্যাটোর সস্ দিয়ে খাওয়া হয়। পানপাতা দিয়েও বানিয়ে নিতে পারেন তেমন ডিপ বা সস্। যা মেয়োনিজ়ের মতো ক্ষতিকর তো নয়ই বরং অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর এবং উপকারী। পানপাতা, পুদিনাপাতা, ধনেপাতা এবং আদা এক সঙ্গে বেটে তাতে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে নিলেই তৈরি হবে চাটনি। যা মুখরোচক হওয়ার পাশাপাশি অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টেরও জোগান দেবে।
পান এক ধরনের প্রাকৃতিক প্রিজ়ারভেটিভ।
৪। মধ্যাহ্ণভোজের পরে
যেমনটা সাধারণত খাওয়ার চল। তবে রঙিন মিষ্টি মশলার বদলে পানের ভিতরে দিন জোয়ান, শুকনো আদা, এক চিমটে বিট নুন। আর চিবিয়ে খেয়ে নিন। এর মতো ভাল প্রাকৃতিক হজমকারক মুখশুদ্ধি আর পাবেন না।
৫। রাতের খাবার পরে
রাতের খাবার পরে পান চিবিয়ে খেতে পারেন। এটি মুখের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। পানের অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান কোনও ব্যাক্টেরিয়া জন্মাতে দেয় না। ফলে মুখে দুর্গন্ধের সমস্যাও হয় না।
৬। পানের চা
চায়েও মেশানো যেতে পারে পান। অনেকেই আদা, তুলসী, গোলমরিচ ইত্যাদি দিয়ে ভেষজ চা বানিয়ে খান। তাতে পান পাতাও দেওয়া যেতে পারে। সর্দিকাশির সমস্যায় এই চা উপকারী।
৭। পান বাটা
পানপাতা বেটে তা ব্রণ, ফুস্কুড়ি বা র্যাশের উপর লাগানো যেতে পারে। ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকজাত সংক্রমণ দূর করে মুখের ত্বক পরিচ্ছন্ন রাখতে সাহায্য করবে পান।