Come Back in Work

হইচই, আড্ডা, বেড়ানোর আবর্তেই পাক খাচ্ছে মন? লম্বা ছুটির পর কাজে মন বসাতে কী কী করবেন?

বেড়িয়ে আসার পরে সেই স্মৃতিতে ডুবে? চিন্তার জাল কেটে কি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে অসুবিধা হচ্ছে? কী করবেন তখন?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৫ ১০:১১
Share:

লম্বা ছুটির সুখস্মৃতিতেই মজে মন? কী ভাবে কাজে মন বসাবেন? ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

পুজো আসার অপেক্ষায় যেমন মাসের পর মাস দিন গোনা চলে, তেমনই যেন নিমেষে কেটে যায় উৎসব। এটা করব, সেটা করব, ভাবনা থাকে অনেক। সেই সব কিছু সম্পূর্ণ করে ওঠার আগেই ফুরিয়ে যায় ছুটি। ঠাকুর দেখা, আড্ডাই হোক বা পুজোর ছুটিতে লম্বা সফর, তার পর ছোটদের যেমন পড়ায় মন বসে না, তেমনই বড়দেরও কাজে ফিরতে বেগ পেতে হয়। লম্বা ছুটির পরে কাজে ফেরার নামেই গায়ে জ্বর আসে। মনোবিদেরা বলেন, এর কোনওটাই কিন্তু অস্বাভাবিক নয়। সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যেই সবটা স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে খারাপ লাগাটা রয়ে যায়। মনো-সমাজকর্মী মোহিত রণদীপ বলছেন, ‘‘সাধারণত অসুস্থতা বা কাজের প্রয়োজনে লম্বা ছুটি নিয়ে পেশাগত ক্ষেত্রে আবার প্রবেশে ততটা অসুবিধা হয় না, যতটা হয় পুজো বা বেড়ানোর পরে। কারণ, এই সময় আনন্দ উদ্‌যাপনে দিন কাটে। সুন্দর স্মৃতি তৈরি হয়। এক দিকে আনন্দ, আবার একই সঙ্গে সেই সব ফুরিয়ে যাওয়ার দুঃখে মন ভার হয়ে যায়। সেই কারণে, দৈনন্দিন একঘেয়ে জীবন, কাজে ফেরাটা বিরক্তিকর বোধ হয়। এটা সাময়িক এবং স্বাভাবিকও।’’

Advertisement

স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ক্ষেত্রে কোন কৌশল কাজে আসবে?

১। বেড়ানো মানেই হইহল্লা, ঘোরাঘুরি— ছুটির যাবতীয় মুহূর্ত কাজে লাগাতে চান অনেকেই। কেউ কে‌উ অফিসে যোগ দেওয়ার আগের রাতে ফেরেন বা সকালে। এর পর অফিস করা একটু কষ্টকর, বিরক্তিকর হয় বইকি!

Advertisement

তবে পুজো হোক বা ছুটিতে বেড়ানো, কাজে যোগ দেওয়ার আগের দিনটি যদি আবার ছন্দোবদ্ধ জীবনের রুটিনে ফেরার চেষ্টা করেন, কাজ সহজ হতে পারে। ঠিকমতো ঘুম, বাড়ির খাওয়া, অফিসে আসার আগে টুকিটাকি মেল দেখা বা কাজ নিয়ে ভাবা পরিবেশ সহজ করে দেয়।

২। রাতভর আড্ডা, পার্টি কিংবা লম্বা সফরের ধকল না কাটিয়ে অফিস এলে কাজ করা আরও ক্লান্তিকর মনে হতে পারে। সবচেয়ে ভাল হয়, যদি কাজে যোগ দেওয়ার এক দিন আগে থেকে দৈনন্দিন জীবনের রুটিন শুরু করা যায়। বেড়াতে গিয়ে ভোর পাঁচটায় উঠতে আপত্তি থাকে না। কিন্তু কাজের প্রয়োজনে বাড়ি ফিরে পাঁচটায় উঠতে হলে অদ্ভুত এক ক্লান্তি কিন্তু চেপে বসে। বেড়ানো মানে শুধু কোনও স্থান উপভোগ করা নয়, বরং নিজেকেও চেনা, নিজের সঙ্গে সময় কাটানো। সেখান থেকে ভাল কিছু অভ্যাসও কিন্তু দৈনন্দিন জীবনের অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

৩। বেড়ানো মানে নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন শিক্ষা। তবে পুরনোকে ভুলে নয়। নতুন এবং পুরনো অভ্যাসের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা প্রয়োজন।

৪। সমাজমাধ্যমে বেড়ানোর প্রতিটি মুহূর্তের ছবি পোস্ট করা, কে, কী মন্তব্য করছেন, কত লাইক পড়ল— সেই দিকেও মন থাকে অনেকেরই। বিশেষত কাজের সময় এগুলি না করলেই ভাল। দিনের শেষে গিয়ে বেড়ানো, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার ছবিগুলি দেখা যেতে পারে।না হলে কাজের সময় মন বেশি বিক্ষিপ্ত হতে পারে।

৫। অফিসে গিয়ে প্রথম দিনে একটু হালকা কাজ বেছে নেওয়া যেতে পারে। সহকর্মীদের সঙ্গে একটু আড্ডা, বেড়ানো-খাওয়ার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিতে পারেন। প্রথম এক-দু’দিন একটু বিরতি নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। এতে ধীরে ধীরে মনঃসংযোগ করা সহজ হবে।

মোহিত রণদীপ বলছেন, ‘‘একঘেয়ে জীবন থেকে বেড়ানো বা পুজোর আনন্দ-উৎসব মুক্তির স্বাদ দেয়। সেই সময়টা ফুরিয়ে গিয়েছে, এটা ভেবেই মনখারাপ হয়। কিন্তু আনন্দ-ভাললাগা, বেড়ানো এগুলি শেষ হবে, আবার গতানুগতিক জীবনে ফিরতেও হবে, এই বাস্তবকে সহজ ভাবে গ্রহণ করতে হবে। তা হলেই মনখারাপ কমবে।’’

তবে অনেক মানুষ একই চিন্তায় আবর্তিত হন। যেমন, পাহাড়ে গিয়েছেন, ফিরেও সেই স্মৃতিতেই ডুবে থাকেন। বেড়ানোর আনন্দঘন মুহূর্ত, প্রকৃতির ছবি মানসপটে রয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক হলেও, কারও ক্ষেত্রে দেখা যায়, তিনি চিন্তার জাল ছিঁড়ে বেরোতেই পারছেন না। কোনও কাজেই মন বসছে না। অফিস যাওয়াতেও তীব্র অনীহা। এমন ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।

সমাধান হিসাবে মোহিত জানাচ্ছেন, মনের ভাব ডায়েরিতে লিখে ফেলা যায়। এতে মন কিছুটা হালকা লাগে। কিংবা বেড়ানোর অভিজ্ঞতা মন খুলে কাউকে বলে ফেলতে পারলেও সুরাহা হতে পারে। তবে যদি দেখা যায়, একই চিন্তার জালে তিনি জড়িয়ে পড়ছেন, দৈনন্দিন জীবনকে তা ব্যাহত করছে, তা হলে পেশাদার কোনও মনোবিদ বা মনোরোগ চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। কারণ, অনেক সময় হরমোনের ভারসাম্যের অভাব বা স্মায়বিক কারণেও এমন সমস্যা হতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement