ছবি : সংগৃহীত।
যন্ত্রের মতো কাজ করে যাচ্ছেন, কিন্তু কাজে মন নেই! বা হয়তো কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভেবেই চলেছেন, অথচ চূড়ান্ত কিছু ভেবে উঠতে পারছেন না। প্রায়ই এটা-সেটা ভুলে যাচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চেষ্টা করেও মনে করতে পারছেন না। মাঝেমধ্যেই মনে হচ্ছে মাথা আর শরীরের মধ্যে যে অদৃশ্য তার বাঁধা থাকে, সেটা ছিঁড়ে গিয়েছে। কেউ কারও সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। এমনটা ঘটতে পারে প্রদাহের কারণে।
প্রদাহ কী?
প্রদাহ হল শরীরের রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা শরীরে থাকা ক্ষতিকারক পদার্থকে নির্মূল করতে এবং কোষের ক্ষতি মেরামত করতে সাহায্য করে। সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য প্রদাহ অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু প্রদাহ দীর্ঘায়িত হলে তা শরীরের ক্ষতিও করতে পারে। এই ধরনের থামতে না চাওয়া প্রদাহ থেকে শরীরে নানা সমস্যা হতে পারে। যার মধ্যে অন্যতম হল ‘ব্রেন ফগিং’। যা এই প্রতিবেদনের একেবারে শুরুতে বলা সমস্যাগুলির কারণ। তবে এ ছাড়াও শরীরে প্রদাহ বাড়লে আরও নানা রকমের সমস্যা হতে পারে।
কী কী সমস্যা হতে পারে প্রদাহ থেকে?
১। ত্বকের সমস্যা: প্রদাহ বাড়তে পারে এমন খাবার খেলে ত্বকে ব্রণ, ফুস্কুড়ি, র্যাশ, চুলকানির মতো সমস্যা হতে পারে।
২। ফোলা ভাব: প্রদাহজনিত কারণে শরীরে জল জমলে হাতের কব্জির চারপাশ, মুখ এবং পায়ে ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে।
৩। ক্লান্তিবোধ: বিশ্রামের পরে শরীরের যে আবার আগের ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়া, তা ব্যাহত হয় প্রদাহ হলে। ফলে প্রদাহ কমতে না চাইলে তা থেকে টানা ক্লান্তিবোধ আসতে পারে। কাজের শক্তি বা ইচ্ছা নষ্ট হতে পারে।
৪। ওজন বৃদ্ধি: প্রদাহের সমস্যা শরীরের স্বাভাবিক বিপাকের হারকেও প্রভাবিত করে। সে ক্ষেত্রে হঠাৎ ওজন বাড়তে বা কমতে পারে।
৫। হজমের সমস্যা: খাদ্যনালীতে প্রদাহ হলে গ্যাস-অম্বল, পেটফাঁপা, এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও হতে পারে।
৬। গাঁটের ব্যথা: হাঁটু, কনুই অথবা শরীরের অন্যান্য অস্থিসন্ধিতে ব্যথা অথবা আড়ষ্ট ভাব হতে পারে প্রদাহজনিত কারণে।
প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করতে কী কী খেতে পারেন?
১। অ্যালোভেরার রস: ৩০ মিলিলিটার জলে গুলে দুপুরের খাবার বা রাতের খাবারের আগে খান। এতে প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
২। পুদিনা পাতা ভেজানো চা: দিনে দু’কাপ খাওয়া গেলে তা প্রদাহ কম করতে সাহায্য করবে।
৩। ভেজানো কালো কিশমিশ: এটি প্রদাহ কমানোর প্রাচীনতম পন্থা। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস এবং পলিফেনল প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তবে ভেজানো কিশমিশের সঙ্গে সেটি ভিজিয়ে রাখা জলটিও খেতে হবে।
৪। আদা: প্রদাহনাশের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী উপায় আদা। আদায় থাকা জিঞ্জেরল প্রদাহবর্ধক এনজাইমগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রদাহ কমায়। সকালে খালি পেটে আদা খেতে পারলে সুফল পাওয়া যাবে।
৫। প্রোবায়োটিক: দই, পনির, কিমচি স্যালাডের মতো প্রোবায়োটিক খাবার রোগপ্রতিরোধ শক্তিকে ভাল রাখে। ফলে মাত্রাছাড়া প্রদাহ হওয়ার ঝুঁকি কমে। পাশাপাশি পেটের স্বাস্থ্যও ভাল রাখে প্রোবায়োটিক।
প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী খাবেন না?
১। পরিশোধিত সাদা তেল: না খাওয়াই ভাল। এটি প্রদাহ বাড়িয়ে শরীরের কোষ এবং ডিএনএ-র ক্ষতি করতে পারে।
২। গ্লুটেন: গ্লুটেনযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল। তাতে পেটের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। পুষ্টি গ্রহণ করতে সুবিধা হবে শরীরের।
৩। চিনি: প্রদাহ বৃদ্ধি করে। যা থেকে বাড়তে পারে স্থূলত্ব, রক্তচাপ। নষ্ট হতে পারে হজমে সাহায্যকারী ভাল ব্যাকটিরিয়া।