Pros and Cons of using Breast Pump

স্তনদুগ্ধ নিষ্কাশন করার যন্ত্র কি শুধু কর্মরতা মায়েদের জন্য? ‘ব্রেস্ট পাম্প’ কতটা নিরাপদ?

কর্মরতা মায়েদের পক্ষে সময়ে সময়ে সন্তানকে স্তনদুগ্ধ খাওয়ানো একটু ঝক্কির। তবে স্বাভাবিক ভাবে স্তন্যপান করাতে না পারলে ‘ব্রেস্ট পাম্প’-এর সাহায্য নেওয়া যায়। কাজটি কি যথোপযুক্ত?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৩৩
Share:

‘ব্রেস্ট পাম্প’ ব্যবহার করা কি ভাল? ছবি: সংগৃহীত।

এক হাতে স্তনদুগ্ধ নিষ্কাশন করার যন্ত্র। আর অন্য হাতে শ্যাম্পেনের গ্লাস হাতে বসে রয়েছেন। বাড়ির বাইরে কর্মস্থলের শৌচাগারে! সমাজমাধ্যমে অভিনেত্রী রাধিকা আপ্তের এমনই একটি ছবি ঘোরাফেরা করছে। বোঝাই যাচ্ছে, কাজের পাশাপাশি মা হওয়ার দায়িত্ব সমান তালে পালন করছেন তিনি।

Advertisement

সন্তান জন্ম দেওয়ার পর থেকে অন্তত ছ’মাস সদ্যোজাতকে স্তনদুগ্ধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। তা যেমন খুদের জন্য ভাল, তেমন মায়ের শরীরে ক্ষেত্রেও তা উপকারী। তবে কর্মরতা মায়েদের জন্য সময়ে সময়ে সন্তানকে স্তনদুগ্ধ খাওয়ানো একটু ঝক্কির। বিশেষ করে সেই সব মায়েদের জন্য, যাঁদের বাঁধাধরা মাতৃত্বকালীন ছুটি নেই। বাড়ির বাইরে সর্বত্র এমন পরিসরও থাকে না, যেখানে বসে সন্তানকে সরাসরি স্তনদুগ্ধ পান করানো যায়। সেই সব মুশকিল আসান করতে ‘ব্রেস্ট পাম্প’ যন্ত্রটির আবির্ভাব। এখন প্রশ্ন হল সেই যন্ত্রটি সদ্যোজাতের কোন কাজে লাগবে?

আসলে ‘ব্রেস্ট পাম্প’ হল এমন একটি যন্ত্র, যেটি ব্যবহারে স্তন থেকে সহজেই দুগ্ধ নিষ্কাশন করা যায়। স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সন্তানের জন্ম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মায়ের স্তনবৃন্তে স্বাভাবিক ভাবে দুধ আসতে চায় না। এ দিকে স্তন ভারী হয়ে ফুলে ওঠে। প্রদাহের কারণে ব্যথাও হতে পারে। তখন এই যন্ত্রটির সাহায্যে দুধ নিষ্কাশন করা যায়। এ ছাড়া, সদ্যোজাতটির শারীরিক কোনও সমস্যা থাকলে কিংবা নির্দিষ্ট সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ হলে তারা জন্মগত ভাবেই দুর্বল হয়। মুখ দিয়ে টেনে স্তন থেকে দুধ খাওয়ার মতো ক্ষমতা তাদের থাকে না। সে ক্ষেত্রে এই যন্ত্রটি বিশেষ ভাবে উপযোগী।”

Advertisement

স্তনদুগ্ধ নিষ্কাশন করার যন্ত্র সাধারণত দু’ধরনের হয়। একটি ‘ম্যানুয়াল’ অর্থাৎ, হাত দিয়ে পাম্প করে দুধ নিষ্কাশন করতে হয়। অন্যটি ‘ইলেকট্রিক’ বা বিদ্যু|চালিত। বিশেষ প্রক্রিয়ায় স্তনবৃন্তের উপর মেশিনটি আটকে সুইচ দিলেই দুগ্ধ নিষ্কাশিত হয়ে যায়। হাত দিয়ে পাম্প করার প্রয়োজন পড়ে না। হাতের দ্বারা চালিত মেশিনের তুলনায় বৈদ্যুতিনটির দাম বেশি হলেও চিকিৎসকেরা বলছেন, এটি সব দিক থেকে নিরাপদ।

(বাঁ দিকে) ‘পাওয়ার্ড’ এবং ‘ম্যানুয়াল’ ব্রেস্ট পাম্প (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

‘ব্রেস্ট পাম্প’ ব্যবহরা করা কি আদৌ ভাল?

বিদেশে নতুন মায়েরা অনেক কাল ধরেই ‘ব্রেস্ট পাম্প’ ব্যবহার করছেন। মা কিংবা সদ্যোজাত, কারও ক্ষেত্রেই তেমন সমস্যার কথা শোনা যায়নি। এ দেশেও কর্মরতা মায়েরা স্তনদুগ্ধ নিষ্কাশনের জন্য এই যন্ত্রটির সাহায্য নিয়ে থাকেন। স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মঞ্জরী চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “এমনিতে যন্ত্রটি নিরাপদ। তবে সঠিক পদ্ধতি না জানা ব্যবহার করলে সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া, যন্ত্রটি কেনার সময়েও বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকা উচিত। কারণ, এটি বিভিন্ন মাপের হয়। স্তনের মাপ অনুযায়ী না কিনলে মায়েদের স্তনবৃন্তে সমস্যা হতে পারে।”

কৃত্রিম ভাবে নিষ্কাশিত স্তনদুগ্ধ কি সদ্যোজাতের জন্য ভাল? মায়েদের শারীরিক কোনও সমস্যা হয় কি?

বাড়িতে থাকলে আলাদা কথা। তবে সন্তানের সার্বিক সুস্থতার জন্য কর্মরতা অনেক মা চান, যে কোনও পরিস্থিতিতে তাঁদের সদ্যোজাতটিকে স্তনদুগ্ধ খাওয়াতে। তবে মাতৃত্বকালীন ছুটি পেরিয়ে গেলে, বাড়ির বাইরে থেকে সময়ে সময়ে সেই কাজটি করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু ব্রেস্ট পাম্প দিয়ে স্তনদুগ্ধ নিষ্কাশন করে তা বেশ কিছু ক্ষণ পর্যন্ত ফ্রিজে রেখে দেওয়া যায়। প্রয়োজনে বাড়ির অন্যান্য সদস্যেরা সেই দুধ শিশুটিকে খাওয়াতে পারেন। তাতে সদ্যোজাতের কোনও সমস্যা হয় না। তবে মঞ্জরীর কথায়, “এই যন্ত্রটি যত খুশি ব্যবহার করা যায় না। সারা দিনে মোট ১২০ মিনিট, অর্থাৎ ২ ঘণ্টা। যে যত বারই ব্যবহার করুন না কেন, তা যেন ঘণ্টা দুয়েকের বেশি না হয়।”

কখন ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহার করবেন?

কর্মরতা মায়েরা বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে স্তনদুগ্ধ নিষ্কাশন করে রাখতে পারেন। সদ্যোজাতটি দীর্ঘ ক্ষণের জন্য শারীরিক ভাবে মায়ের থেকে দূরে থাকলে, তখন ব্রেস্ট পাম্প দিয়ে স্তনদুগ্ধ নিষ্কাশন করে তা সংরক্ষণ করে রাখা যেতে পারে। যে সব মায়েদের স্তনবৃন্তে কোনও রকম সমস্যা রয়েছে, তাঁরাও এই যন্ত্রটির সাহায্য নিতে পারেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement