অসুস্থতার অত্যাচারে ঝিমিয়ে পড়ে শিশু। রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস বা আরএসভির সংক্রমণে আকছার এমন রোগে আক্রান্ত হয় শিশুরা। ছবি : সংগৃহীত।
শিশুদের ফুসফুসের রোগ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছলে অনেক সময় তাদের হাসপাতালেও ভর্তি করতে হয়। শ্বাসকষ্টের সমস্যা গুরুতর হলে দরকার হয় আইসিইউ সাপোর্টের। এক গবেষণা অবশ্য বলছে, বাড়িতে থেকে একটি ইঞ্জেকশনেই ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনা যায়। সে ক্ষেত্রে অনেক সময়েই হাসপাতালে না নিয়ে গিয়েও সুস্থ হয়ে উঠতে পারে সন্তান।
ফুসফুসের অসুখে ঘন ঘন ভোগে বাড়ির ছোট্ট সদস্যেরাই। বছরভর তাদের সর্দি-কাশি লেগেই থাকে। বেশি গরম পড়লেও হতে পারে আবার বেশি শীত পড়লেও। হঠাৎ জলবায়ু বদলালে, এমনকি, বর্ষাকালের স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়াতেও আচমকা নাক দিয়ে জল গড়ানো শুরু হয়। তার পরে একে একে সর্দি-কাশি-জ্বর। সাধারণ ওষুধে তা ঠিক হলে ভাল। না হলে ফুসফুসের সংক্রমণ ভোগাতে পারে দীর্ঘ দিন। কাশি সারতে চায় না। জ্বর ফিরে আসতে থাকে। অসুস্থতার অত্যাচারে ঝিমিয়ে পড়ে শিশু। রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস বা আরএসভির সংক্রমণে আকছার এমন রোগে আক্রান্ত হয় শিশুরা।
ভারতে তো বটেই, এ রাজ্যের শিশুদেরও প্রায়ই এই রোগ হয়। ছবি: সংগৃহীত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর সমীক্ষা বলছে, প্রতি বছর অন্তত ৩৬ লক্ষ শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় আরএসভি সংক্রমণের জন্য। আরএসভি বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছলে আক্রান্ত শিশুদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অনেক সময় তাদের আইসিইউতেও ভর্তি করাতে হতে পারে। ভারতে তো বটেই, এ রাজ্যের শিশুদেরও প্রায়ই এই রোগ হয়। সাম্প্রতিক গবেষণাটি বলছে, এই সব কিছুরই সমাধান করতে পারে নার্সিভিমাব নামের একটি ইঞ্জেকশন। যাতে রয়েছে গবেষণাগারে তৈরি এক ধরনের কৃত্রিম অ্যান্টিবডি।
‘দ্য ল্যানসেট চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট হেল্থ’ নামের জার্নালে এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, নার্সিভিমাব ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরে আরএসভি আক্রান্ত শিশুদের ৮৩ শতাংশ ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়নি। শুধু তা-ই নয় ৮১ শতাংশ ক্ষেত্রে আইসিইউতেও নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি।
সমস্যা তীব্র হলে শিশুর শরীরে এই কৃত্রিম অ্যান্টিবডি প্রয়োগ করা হলে, তা ভিতর থেকে সংক্রমণকে ঠেকাতে সাহায্য করে। ছবি: সংগৃহীত।
কানাডা এবং আমেরিকার গবেষকেরা জানাচ্ছেন, গবেষণাগারে তৈরি এক কৃত্রিম মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির সাহায্যেই বিষয়টি সম্ভব হচ্ছে। কৃত্রিম ভাবে তৈরি ওই মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি হল এক ধরনের প্রোটিন। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধকের কাজ নকল করতে পারে। শরীরের সাধারণ রোগ প্রতিরোধ শক্তি যা পারছে না, তা ওই মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি করে দেখায়। আরএসভির সমস্যা তীব্র হলে শিশুর শরীরে এই কৃত্রিম অ্যান্টিবডি প্রয়োগ করা হলে, তা ভিতর থেকে সংক্রমণকে ঠেকাতে সাহায্য করে। তবে ওই ইঞ্জেকশন টিকা হিসাবে আগে থেকে নয়, রোগ হলে তবেই দেওয়া যেতে পারে।
২০২৩ সালে নার্সিভিমাব ওষুধটিকে অনুমোদন দেওয়া হয়ছে। সেই সময়ে ওষুধটি নিয়ে গবেষণা করেছিল ফ্রান্স, ইতালি, লুক্সেমবুর্গ, স্পেন, আমেরিকা। পরে আমেরিকা এবং কানাডার গবেষকেরা সেই গবেষণাজাত ফল বিশ্লেষণ করার পাশপাশি, ছোটদের উপর ওষুধটির প্রয়োগ পরীক্ষা করেছেন। তার পরেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।