এডসের নতুন ওষুধ আসতে চলেছে। ফাইল চিত্র।
এডসের মতো মারণ রোগের চিকিৎসায় কি তবে আশার আলো দেখা গেল? এডস একেবারে নিরাময় করে দেবে, এমন বলা যায় না। তবে এডসের ঝুঁকি ১০০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার দাবি করেছেন গবেষকেরা। আমেরিকার ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এফডিএ)-এর অনুমোদনে এইচআইভি-র মতো মারণ ভাইরাসকে জব্দ করার নতুন ওষুধ আসতে চলেছে বাজারে। তিন পর্যায়ে মানুষের শরীরে ট্রায়ালের পরে গবেষকেরা দেখেছেন, এই ওষুধই এডসকে কাবু করতে পারবে মাত্র দু’টি ডোজ়েই।
গিলিয়েড সায়েন্সেস ও ভারতের ডক্টর রেড্ডি’জ় ল্যাবরেটরির যৌথ উদ্যোগে ওষুধটি তৈরি করা হয়েছে। এর নাম ‘লেনাক্যাপাভির’। ওষুধটি আপাতত আমেরিকাতেই অনুমোদন পেয়েছে। অন্য দেশেও খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে বলে খবর। হায়দরাবাদের ওষুধ নির্মাতা সংস্থা ডক্টর রেড্ডি’জ় ল্যাবরেটরি জানিয়েছে, ভারতেও ওষুধটি নিয়ে আসার প্রচেষ্টা চলছে। কেন্দ্রীয় ড্রাগ নিয়ামক সংস্থার অনুমোদন পেলে সেটি এ দেশের বাজারেও চলে আসবে।
লেনাক্য়াপাভির খাওয়ার ওষুধ নয়। সেটি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হবে। ৬ মাস অন্তর দু’টি ডোজ় দিলে এডসের ঝুঁকি কমবে বলেই দাবি।
কী ভাবে কাজ করবে লেনাক্যাপাভির?
এইচআইভি (হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস) শরীরে ঢুকলে সবচেয়ে আগে শরীরের রোগ প্রতিরোধী টি-কোষকে নিশানা করে। খুব দ্রুত জিনগত ভাবে বদলে যেতে পারে এই ভাইরাস। তাড়াতাড়ি বিভাজিত হয়ে সংখ্যাতেও বাড়তে পারে। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে শুরু করে। সাধারণ কোনও সংক্রমণ হলেও তা বড় ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রাণসংশয় দেখা দেয়। লেনাক্যাপাভিরের কাজ হল শরীরে ঢুকে অ্য়ান্টিবডি তৈরি করা। পাশাপাশি, রক্তের লিম্ফোসাইট কোষগুলিকে (বি ও টি লিম্ফোসাইট) সক্রিয় করে তুলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষাবলয় তৈরি করা। লেনাক্যাপাভির নির্দিষ্ট ডোজ়ে নিলে আর কড়া ওষুধ খাওয়ার দরকার পড়বে না।
ট্রায়ালের রিপোর্ট কেমন?
তিন পর্যায়ের ট্রায়াল হয় ওষুধটির। প্রথমটি হয় আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে। ২১৩৪ জনের উপর প্রয়োগ করে গবেষকেরা দেখেন, এডসের ঝুঁকি প্রায় ৯০ শতাংশ কমে গিয়েছে।
দ্বিতীয় ট্রায়াল হয় আমেরিকা-সহ আরও কয়েকটি দেশে। অন্তত ২১৭৯ জনকে লেনাক্য়াপাভির ইঞ্জেকশন দিয়ে দেখা যায়, এডসের ঝুঁকি ৯৯.৯ শতাংশ কমে গিয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে আরও বেশি জনের উপর নিরীক্ষা করেন গবেষকেরা।
নতুন ওষুধটির কার্যকারিতা ১২ মাস থাকবে বলেই জানা গিয়েছে। বছরে অন্তত দু'টি ইঞ্জেকশন নিতে হবে। এডস আক্রান্তদের ওষুধটি দিয়ে দেখা গিয়েছে, রোগ নিরাময় না হলেও তার তীব্রতা কমেছে। শরীরে প্রতিরোধ শক্তিও বেড়েছে।