ক্যানসার ধরবে চুম্বক,চিনিয়ে দেবে টিউমার কোষগুলিকে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
স্তন ক্যানসার নির্ণয়ে এক নতুন পদ্ধতি আবিষ্কারের পথে বিজ্ঞানীরা। ক্যানসার চিহ্নিত করার যে সব পরীক্ষা বা স্ক্রিনিং পদ্ধতি আছে, সেগুলির চেয়ে এটি একেবারেই আলাদা। সাধারণ পদ্ধতিগুলিতে ধরা পড়ে স্তনে ক্যানসার কোষের বিভাজন শুরু হয়েছে কি না। আর এই পদ্ধতিটি যে কেবল টিউমার চিহ্নিত করবে তা নয়, তাকে ধাওয়া করে তার গতিবিধি, ঠিকুজি-কোষ্ঠী অবধি জানিয়ে দিতে পারবে। ক্যানসার কোষ কত গভীরে গিয়ে সংখ্যায় বাড়ছে, ঠিক কোন পথে এগিয়ে চলেছে, তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে দেবে। পদ্ধতিটি একটি বায়োমার্কার টেস্ট, যা করা হবে চুম্বক দিয়ে।
চুম্বক দিয়ে স্তন ক্যানসারের পরীক্ষা?
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষকেরা তৈরি করেছেন এক প্রকার চুম্বকীয় তরল, যা শরীরে ঢুকিয়ে দিলে ক্যানসার সৃষ্টিকারী কোষগুলিকে খুঁজে বার করতে পারবে। ক্যানসার কতটা ছড়িয়েছে তা যেমন ধরবে, তেমনই ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি আছে কি না, কোনও কোষের অস্বাভাবিক বিভাজন হতে পারে কি না, তা-ও ধরতে পারবে।
সাধারণ বায়োপসি এতটা দ্রুত ও নির্ভুল রিপোর্ট দিতে পারবে না, যতটা এই চৌম্বকীয় তরল দেবে, এমনই দাবি হার্ভার্ডের গবেষকদের। চুম্বকটির নাম দেওয়া হয়েছে, ‘ম্যাগট্রেস’। খয়েরি রঙের তরলটি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে ঢোকানো হবে। তরলটি তার চৌম্বকীয় শক্তিতে ক্যানসার কোষের গতিবিধি চিহ্নিত করবে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড কেয়ার এক্সেলেন্স (এনআইসিই)-এর গবেষকেরা ম্যাগট্রেস নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ক্যানসার কোষ শরীরের ভিতরে কোন কোন জায়গায় ছড়াচ্ছে, তা সঠিক ভাবে জানতে তেজস্ক্রিয় বিকিরণেরও সাহায্য নেওয়া হয়। এতে সুস্থ কোষগুলির ক্ষতি হয়। তবে ম্যাগট্রেসে তেজস্ক্রিয়তা নেই, পুরোপুরি চৌম্বকীয় শক্তিতে সেটি কাজ করবে। তাই এটি শরীরে ঢুকলে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না।
স্তন ক্যানসারের অতি বিরল ধরন লোবিউলার কার্সিনোমা ধরতে এই পদ্ধতিটি সবচেয়ে বেশি কাজে আসবে বলেই জানিয়েছেন গবেষকেরা। ইদানীংকালে মহিলাদের মধ্যে এই ধরনের ক্যানসারের প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। দুধ উৎপাদনকারী গ্রন্থি লোবিউলে ছোট ছোট টিউমার জন্মায়। এই টিউমার কোষ খুব দ্রুত বিভাজিত হয়ে সংখ্যায় বাড়তে থাকে। এই ধরনের ক্যানসার ভিতরে ভিতরে কোষগুলিকে নষ্ট করতে থাকে তবে তার কোনও বাহ্যিক লক্ষণ সে ভাবে প্রকাশ পায় না। সাধারণ স্তন ক্যানসারে স্তনের আকার বদলে যায়, হাত দিয়ে পরীক্ষা করলে শক্ত পিণ্ডের মতো মনে হয়, কিন্তু লোবিউলার কার্সিনোমায় নিজে থেকে পরীক্ষা করে কিছু বোঝা সম্ভব নয়। ম্যামোগ্রামেও ধরা পড়ে না। কেবল আলট্রাসাউন্ড করলে ক্যানসারের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে চৌম্বকীয় তরল সরাসরি ক্যানসার কোষের কাছে পৌঁছে যেতে পারবে ও দেখিয়ে দেবে, ঠিক কোন কোন জায়গায় কোষের বিভাজন হচ্ছে। সেই জায়গাগুলি থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলিকে ধ্বংস সম্ভব হবে। বাকি সুস্থ কোষগুলির কোনও ক্ষতি হবে না। স্তন ক্যানসারের নির্ভুল চিকিৎসায় এই নতুন পদ্ধতিটি কার্যকরী হবে বলেই আশা রাখছেন গবেষকেরা।