৯ বছর থেকে নেওয়া যায় টিকা, কারা নেবেন, দাম কত? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ভারতে মহিলাদের মধ্যে যে ধরনের ক্যানসার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তার মধ্যে এই জরায়ুমুখের ক্যানসার রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। দেশে প্রতি বছর অন্তত ১ লক্ষ ২০ হাজার মহিলা এই রোগে আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় বছরে কমপক্ষে ৭৭ হাজার মহিলার। অল্প বয়সেই যাতে এই ক্যানসারের সম্ভাবনা কমানো যায়, তাই এই টিকা নিয়ে কর্মসূচিও শুরু হয়েছে। জরায়ুমুখের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে এইচপিভি টিকা যা এখন এ দেশেও এসে গিয়েছে। কোন বয়স থেকে টিকা নেওয়া জরুরি, দাম কত, সে বিষয়ে ধারণা থাকা দরকার।
জরায়ুমুখের ক্যানসারের জন্য দায়ী ‘হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস’ (এইচপিভি)। এর ২০০ রকম প্রজাতি রয়েছে, যার মধ্যে ১২টি ক্যানসারের জন্য দায়ী। বিশেষ করে এইচপিভি ১৬ ও এইচপিভি ১৮ জরায়ুমুখের ক্যানসারের কারণ। এইচপিভি ভাইরাস ঠেকাতে প্রতিষেধক দেওয়াই সবচেয়ে আগে জরুরি। তবে এইচপিভি টিকা কতটা কার্যকরী, তা আদৌ ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারবে কি না, এ বিষয়টি নিয়ে সংশয় ছিলই। সম্প্রতি ব্রিটেনের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেল্থ অ্যান্ড কেয়ার রিসার্চ’ (এনআইএইচআর) জানিয়েছে, জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকা প্রায় ৯০ শতাংশ কার্যকরী হচ্ছে। শুধু সময়মতো টিকাটি নিতে হবে।
কোন বয়স থেকে টিকা নেওয়া যাবে?
৯ থেকে ৪৫ বছর বয়স অবধি টিকা নেওয়া যাবে। তবে বয়স অনুপাতে টিকার ডোজ় ভিন্ন হবে।
টিকা নেওয়া আদর্শ বয়স ৯ বছর। কারণ এই বয়সে টিকা নিলে ভাইরাসটির সংস্পর্শে আসার আগেই সুরক্ষা তৈরি হয়ে যায়। সাধারণত এই বয়সে দু’টি ডোজ়ে টিকা নিতে হবে ৬-১২ মাসের ব্যবধানে। সঠিক সময়টা চিকিৎসকের থেকে জেনে নিতে হবে।
১১ থেকে ১২ বছরেও টিকা নেওয়া যাবে দু'টি ডোজ়ে।
বয়স ১৫ বছর বা তার বেশি হলে তিনটি ডোজ়ে টিকা নিতে হবে। প্রথম ডোজ় নেওয়ার ১ থেকে ২ মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ় এবং ৬ মাস পরে তৃতীয় ডোজ় নিতে হবে।
২৭ থেকে ৪৫ বছর বয়সে টিকা নিতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সে ক্ষেত্রে কারা টিকা নেবেন ও কারা নিতে পারবেন না, তা শারীরিক অবস্থা বিচার করেই জানাবেন চিকিৎসক।
টিকা কারা নিতে পারবেন না?
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় টিকা নেওয়া যাবে না। প্রসবের পরে টিকা নিতে পারবেন কি না, তা চিকিৎসকের থেকে জেনে নিতে হবে।
আগে কোনও টিকা নেওয়ার পরে যদি অ্যালার্জির সংক্রমণ ঘটে থাকে অথবা অ্যানাফাইল্যাক্সিসের মতো প্রাণসংশয়ের কারণ হয়ে থাকে, তা হলে এইচপিভি টিকা নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অসুস্থ থাকলে বা বিশেষ কোনও ওষুধ খেলে টিকা নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কী কী টিকা আছে, দাম কত?
টিকার দাম এ দেশে ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। তবে এর বেশি দামেরও রয়েছে। এইচপিভি ভাইরাসের কোন কোন উপরূপকে টিকা প্রতিহত করতে পারবে, সেই অনুযায়ী দাম নির্ভর করবে। দেশে এখন জরায়ুমুখের ক্যানসারের চার রকম প্রতিষেধক রয়েছে— ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথ ক্লাইনের তৈরি সার্ভারিক্স, আমেরিকার মার্ক কোম্পানির গার্ডাসিল ৪ ও গার্ডাসিল ৯, পুণের সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার তৈরি সার্ভাভ্যাক।
১) সার্ভাভ্যাক এইচপিভি ভাইরাসের ৬,১১, ১৬ ও ১৮ উপরূপ ঠেকাতে পারবে। এর দাম বেসরকারি হাসপাতালে ২ থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে।
২) গার্ডাসিল ৪ টিকাও সার্ভাভ্যাকের মতোই ৬,১১, ১৬ ও ১৮ উপরূপ ঠেকাতে পারবে। এর দাম ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে।
৩) সার্ভারিক্স ভাইরাসের ১৬ ও ১৮ উপরূপের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারবে, এর দাম আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার মধ্যে।
৪) গার্ডাসিল ৯ টিকা ভাইরাসের অনেকগুলি উপরূপ যেমন ৬, ১১, ১৬, ১৮, ৩১, ৩৩, ৪৫, ৫২, ৫৮ উপরূপের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারবে। এই টিকার দাম অনেক বেশি। ডোজ় প্রতি দাম পড়বে ৯ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকা।