পাকা চুল নিয়ে চিন্তার দিন শেষ! গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বয়সের চাকা বার্ধক্যের দিকে ছুটবেই। মনে করা হয়, বুড়িয়ে যাওয়া প্রথম ধরা পড়বে চুলের পাকে আর গলার কুঁচকে যাওয়া চামড়ার ভাঁজে। বছর ত্রিশের যুবক-যুবতীর সিঁথির পাশেও উঁকি দেয় সাদা চুল। তবে আর পাকা চুল নিয়ে যে দুঃখ তা আর বলে বোঝানোর নয়। ডাই করিয়ে, ঘরোয়া টোটকা কাজে লাগিয়েও লাভ বিশেষ হয় না। রং উঠে গেলে পাকা চুল যে কে সে-ই থাকে। পাকা চুল নিয়ে এত দিন যদি মাথা ঘামিয়ে থাকেন, তা হলে আর চিন্তা করে কাজ নেই। কারণ গবেষকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, পাকা চুল মোটেই বার্ধক্যের লক্ষণ নয়, বরং চুল পাকছে মানেই আপনি ক্যানসার থেকে সুরক্ষিত। একমাথা পাকা চুল নিয়ে এ বার সন্তুষ্টই থাকুন।
পাকা চুল ক্যানসার থেকে বাঁচায়?
জাপানের টোকিও ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা পাকা চুলের সঙ্গে ক্যানসারের একটা যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন। কী রকম? গবেষকেরা জানাচ্ছেন, চুল পাকছে মানে চুলের গোড়ায় থাকা মেলানোসাইট কোষের বাড়বৃদ্ধি বন্ধ হচ্ছে। আর কোষের বিভাজন বন্ধ হওয়া মানেই তার জীবনীশক্তি শেষ। অতএব সেই কাজেই সেই কোষ আর চাইলেও ক্যানসারের দিকে বাঁক নিতে পারবে না।
বিষয়টি বুঝিয়ে বলা যাক। চুলের রং ধরে রাখে মেলানোসাইট কোষ। কোষটি জন্মায় চুলের গোড়ায়। এই কোষ আবার তৈরি হয় স্টেম কোষ থেকে। স্টেম কোষ সারা শরীরেই থাকে। এই স্টেম কোষ থেকেই বিভিন্ন রকম কোষের জন্ম হয়। তার মধ্যে মেলানোসাইট কোষও আছে। ত্বক, চুলের রঙের জন্য দায়ী এই কোষ। মেলানোসাইট কোষ থেকে যে রঞ্জক তৈরি হয়, তার নাম মেলানিন। এই মেলানিনের কারণেই একমাথা কুচকুচে কালো চুল হয়। কিন্তু সমস্যাটা তৈরি হয় অন্য জায়গায়। এই মেলানোসাইট কোষ চুলের গোড়ায় তৈরি হয় এবং সেখানেই মেলানিন তৈরি করে। প্রতিটি চুলের গোড়াতেই মেলানোসাইট থাকে। এখন এই কোষের সংখ্যায় যদি তারতম্য ঘটে অথবা মেলানোসাইট নষ্ট হয়ে গিয়ে মেলানিন তৈরি করতে না পারে, তখন চুলের স্বাভাবিক রং ফিকে হতে থাকে। এক সময়ে সমস্ত রং উঠে গিয়ে সাদা হয়ে যায়।
এই চুল সাদা হওয়া নিয়েই যত ঝামেলা ছিল এত দিন। চুল পাকছে মানেই বয়স হচ্ছে। এতএব রং করাও, প্রসাধনী লাগাও। কিন্তু টোকিও ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এত সবের আর দরকার নেই। মাথায় যদি পাকা চুলের উঁকিঝুঁকি দেখেন, তা হলে বুঝবেন আপনি ক্যানসারের ঝুঁকি থেকে অনেকটাই সুরক্ষিত। কারণ মেলানোসাইট কোষটির জন্যই নাকি যত গন্ডগোল হয়। ত্বকের ক্যানসারের ভয়াবহ রূপ মেলানোমার কারণও কিন্তু এই মেলানোসাইট কোষই। এই কোষের যদি অনিয়মিত ও অস্বাভাবিক বিভাজন শুরু হয়ে যায়, তখন টিউমার তৈরি হয় আর তা দ্রুত ছড়াতে থাকে। কিন্তু যদি কোষটির বৃদ্ধিই বন্ধ হয়ে যায়, তার রঞ্জকগুলি নষ্ট হয়ে যায়, তা হলে কোষটি অকেজো হয়ে যাবে। আর অকেজো হওয়া মেলানোসাইটের কারণে চুলের রং উঠে গিয়ে তা সাদা দেখাবে ঠিকই, কিন্তু ক্যানসারের ঝুঁকিও কমবে।
গবেষণাগারে ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে এই তথ্য জেনেছেন জাপানি বিজ্ঞানীরা। তাঁরা দেখেছেন, ইঁদুরের শরীরের মেলানোসাইট কোষগুলি যদি অকেজো করে দেওয়া যায়, তা হলে কোষের ভিতরে থাকা ডিএনএ ভেঙেচুরে গিয়ে নষ্ট হতে থাকে। তখন কোষের বৃদ্ধি ও বিভাজন থেমে যেতে পারে স্থায়ী ভাবে।
আবার উল্টোটাও পরীক্ষা করে দেখেছেন গবেষকেরা। তাঁরা দেখেন, অকেজো হওয়া মেলানোসাইট কোষের উপর যদি অতিবেগনি রশ্মি বা কোনও রাসায়নিকের প্রভাব তৈরি করা যায়, তা হলে কোষগুলির বিভাজন আবার শুরু হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ নিয়েই কোষগুলি সংখ্যায় বাড়তে বাড়তে ক্যানসারের দিকে মোড় নিতে পারে। অর্থাৎ, যদি পাকা চুল ঢাকতে অত্যধিক রাসায়নিক যুক্ত রং মাখতে থাকেন, তা হলে কিন্তু আবারও মেলানোসাইট কোষ সক্রিয় হতে থাকবে এবং তা ভাল না করে উল্টে ক্ষতি করবে। তাই যেমন আছে, তেমনই বরং থাক। গবেষকদের মত, বয়স একটু বাড়লে পাকা চুল থাক না। তাকে অযথা কৃত্রিম আবরণে মুড়ে রাখার কোনও প্রয়োজনই নেই।