Volcanic ash

আগ্নেয়গিরির ছাই থেকে কী কী মিশছে বাতাসে? আগামী দিনে কতটা ক্ষতি হতে পারে ফুসফুসের?

শীতের সময়ে দূষণবাহী কণার আধিক্যের জন্য তা আরও খারাপের দিকেই যায়। এর মধ্যেই সুদূর আগ্নেয়গিরি থেকে ভেসে আসা ছাইয়ের স্তর বাতাসকে যে আরও বিষাক্ত করে তুলেছে তা বলাই বাহুল্য। এর থেকে কতটা ক্ষতি হতে পারে?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:০৭
Share:

আগ্নেয়গিরির ছাইমেঘ কতটা ক্ষতি করতে পারে, কী কী মিশে রয়েছে এতে? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ইথিয়োপিয়ার হায়েলি গুব্বি আগ্নেয়গিরির বিষাক্ত ছাইমেঘ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে তিন হাজার কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছে। রাজধানী দিল্লি-সহ ভারতের বিভিন্ন এলাকার উপর দিয়ে ভেসে গিয়ে ক্রমশ পূর্বে সরতে শুরু করেছে। আবহবিজ্ঞানীরা যদিও বলছেন, ছাইমেঘের কালো স্তর ভূপৃষ্ট থেকে প্রায় ৩৫ হাজার ফুট উপরে থাকায় ক্ষতির আশঙ্কা কম, তবুও বিপদ যে একেবারেই নেই তা বলা যায় না। বরং পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, ছাইমেঘে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক, ভারী ধাতু বাতাসে মিশেছে। এমনিতেই দেশের অনেক রাজ্যেরই বাতাসের গুণগত মান খারাপের দিকেই। শীতের সময়ে দূষণবাহী কণার আধিক্যের জন্য তা আরও খারাপের দিকেই যায়। এর মধ্যেই সুদূর আগ্নেয়গিরি থেকে ভেসে আসা ছাইয়ের স্তর বাতাসকে যে আরও বিষাক্ত করে তুলেছে তা বলাই বাহুল্য। আগামী দিনে এই ছাই মিশ্রিত বাতাসের কারণে ফুসফুসের ক্ষতি হতে পারে বলেই অনুমান করা হচ্ছে।

Advertisement

কী কী মিশে রয়েছে আগ্নেয়গিরির ছাইমেঘে?

ছাইমেঘের যে উপাদানটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে আছে তা হল কার্বন ডাই অক্সাইড ও সালফার ডাই অক্সাইড, যা বাতাসের কণায় মিশে সালফিউরিক অ্যাসিড তৈরি করতে পারে। এর থেকে অ্যাসিড বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা বাড়তে পারে। আগ্নেয়গিরি থেকে বেরিয়ে আসা ছাইয়ের আরও একটি উপাদান হল সিলিকা, এর সূক্ষ্ম কণাগুলি শ্বাসযন্ত্রের জন্য বিষ। ছাইয়ে মিশে থাকে হাইড্রজেন ফ্লুয়োরাইড যা জলে মিশলে জলকে বিষাক্ত করে তুলতে পারে। এছাড়াও রয়েছে আর্সেনিক, সিসা, ক্যাডমিয়ামের মতো ভারী ধাতু ও হাইড্রেজেন ক্লোরাইড, হাইড্রোডেন সালফাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস, যা শরীরে ঢুকলে ফুসফুসের জটিল রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। পাশাপাশি এই বিষাক্ত গ্যাসগুলির কারণে চোখের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

Advertisement

কতটা ক্ষতি হতে পারে ফুসফুসের?

আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক হাঁপানি, সিওপিডি, ব্রঙ্কাইটিসের ঝুঁকি বহু গুণে বাড়িয়ে তুলতে পারে। এমনিতেও শীতকালীন দূষণের কারণে সিওপিডি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলেই সতর্ক করা হয়েছে। তার উপরে ছাইয়ে থাকা রাসায়নিক বাতাসে মেশার পর এই আশঙ্কা আরও বেড়ে গিয়েছে। ছাইয়ের কণা শ্বাসনালীর প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে যে কারণে শ্বাসকষ্ট বাড়তে পারে হাঁপানির রোগীর।

ছাইয়ে থাকা স্ফটিকের মতো সিলিকা থেকে সিলিকোসিস রোগ হতে পারে ফুসফুসের। ছাইয়ে মিশে থাকা ভারী ধাতুও এর কারণ হতে পারে। সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত মানুষের ফুসফুস সংক্রমিত হয়। এই রোগের নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা পদ্ধতিও নেই।

দীর্ঘমেয়াদে কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং ছাইয়ের কণা থেকে চোখের সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। দূষণবাহী কণার কারণে চর্মরোগ হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

ভয়ের কারণ রয়েছে হার্টের রোগীদের ক্ষেত্রেও। রাসায়নিকের সূক্ষ্ম কণাগুলি রক্তনালিতে প্রবেশ করলে প্রদাহ বাড়তে পারে, এতে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।

ছাইমেঘ নিয়ে সতর্কতা রয়েছে। যদিও বিপদের আশঙ্কা এখনই করা হচ্ছে না, তবুও সাবধানে থাকারই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে যে এলাকাগুলিতে প্রকোপ বেশি সেখানে এন৯৫, এফএফপি২ মাস্ক পরতে বলা হচ্ছে। ফুসফুসের রোগ, হাঁপানি থাকলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া অবধি বাইরে না বেরনোই ভাল। ঘরের ভিতরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement