‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ করে রোগা হয়েছেন মিলিন্দ সোমন। ছবি: সংগৃহীত।
বয়স ৬০ পেরিয়েছে। তবে মিলিন্দ সোমনের চেহারা ও ফিটনেস দেখে বোঝার উপায় নেই। চুল, দাড়িতে পাক ধরলেও চিরযুবক যেন! ভারতের এই সুপারমডেল তাঁর সুঠাম, মেদহীন, পেশিবহুল চেহারায় সকলের চোখেই ঈর্ষণীয়। মহিলারা তো বটেই, বহু পুরুষের কাছেও মিলিন্দ অনুপ্রেরণা। শুটিং হোক বা ভ্রমণের মাঝে, ফিটনেসের সঙ্গে কখনও আপস করেন না মিলিন্দ। সম্প্রতি মিলিন্দ বলেন, ফিট থাকতে ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ করে ওজন ঝরিয়েছেন তিনি। অভিনেতা বলেন, ‘‘নভেম্বর মাসে আমি ১৬ ঘণ্টার উপোস আর ৮ ঘণ্টার মধ্যে খাওয়াদাওয়া করে দেখতে চেয়েছিলাম শরীরে কী কী বদল আসে। ফলাফল দেখে সত্যিই চমকে গিয়েছি।’’
উপোসের ফলাফল দেখে বেশ খুশি মিলিন্দ। অভিনেতা বলেন, ‘ দিনে ১৬ ঘণ্টার উপোস করে আমি ৬-৭ কেজি ওজন ঝরিয়ে ফেলেছি। ওজন ঝরিয়ে আরও বেশি তরতাজা লাগছে শরীর। আমি ভাবতাম আমার ওজন একেবারে ঠিক আছে, তবে ওজন কমার পর শরীরে শক্তি যেন আরও বেড়েছে। তাই আমার ভুল ধারণা ভেঙেছে। এখন আপাতত বন্ধ রেখেছি ম্যারাথনের জন্য। তবে এই উপোস পদ্ধতি আমার বেশ উপকারে লেগেছে।’’
চটজলদি ওজন ঝরাতে ইদানীং বলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দেখাদেখি অনেকেই এখন ভরসা রাখছেন ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ ডায়েটের উপর। এই ডায়েটে খাবারের ক্ষেত্রে তেমন কড়া বিধি-নিষেধ থাকে না বলেই হয়তো এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এই ডায়েটে দিনে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রয়োজনীয় খাবার খেয়ে ফেলতে হয়। আর বাকি সময়টা উপোস করেই কাটাতে হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে সঠিক কায়দায় ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ মেনে চললে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, কোলেস্টেরল হ্রাস পায় এবং শরীরও থাকে চাঙ্গা। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার খেলে বিপাক হারও নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে ক্যালোরিও কম যায় শরীরে। এই ডায়েটের ফলে মেদ ঝরে দ্রুত। অনেকেই আছেন যাঁরা পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে এই ডায়েট শুরু করেন না। নেট দেখেই ডায়েট করতে শুরু করেন। দিনের পর দিন ডায়েট করেও সে ক্ষেত্রে সুফল মেলে না। জেনে নিন, ভুলটা কোথায় হয়।
১) এই ডায়েটে খাবার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে খুব বেশি বিধিনিষেধ থাকে না। তাই বলে এই ডায়েট চলাকালীন অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে নিলে চলবে না। এই ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস মেনে চলতে হবে। এই ডায়েট চলাকালীন প্রচুর শাকসব্জি, মাছ-মাংস এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। তবে সবই খেতে হবে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায়। আপনি যতটা পরিমাণ ক্যালোরি গ্রহণ করছেন সেই পরিমাণ ক্যালোরি খরচ হচ্ছে কি না সেটাও লক্ষ রাখা যে কোনও ডায়েটের ক্ষেত্রেই ভীষণ জরুরি।
২) অনেকেই ধারণা, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাওয়া সারতে পারলেই বুঝি এই ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ করা হয়। এই ডায়েট কিন্তু অনেক ধরনের হয়। এই ডায়েট করার সময় পুষ্টিবিদেরা অনেককেই দিনে কেবল এক বার খাওয়ার পরামর্শ দেন। অনেকের ক্ষেত্রে আবার ঠিক কত ঘণ্টা অন্তর কতটা পরিমাণ খাবার খাবেন তা-ও বেঁধে দেওয়া হয়। তাই আপনার শরীরের জন্য ঠিক কোন প্রকার ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং-এর প্রয়োজন, তা একমাত্র পুষ্টিবিদই বলতে পারেন।
৩) যে কোনও ডায়েট করলে শুরুর দিকে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়। আর এই সমস্যার জন্যই অনেকেই ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ দীর্ঘ দিন চালিয়ে যেতে পারেন না। ফলে ওজন ঝরানোর স্বপ্ন অধরাই থাকে যায়। এই সমস্যা এড়াতে প্রচুর জল খেতে হবে আর ডায়েটে যেন পর্যাপ্ত মাত্রায় ফাইবার থকে সে দিকেও নজর রাখতে হবে।
৪) এই ডায়েটে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খেয়ে ফেলতে হয়। তবে সেই সময় খাওয়াদাওয়ায় ফাঁকি দিলে কিন্তু চলবে না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অল্প অল্প করে বেশি বার খাওয়ার খাওয়ার চেষ্টা করুন, সেই সময় খালি পেটে থাকলে কিন্তু মুশকিল।
৫) খাবারের মধ্যে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবারের সঠিক ভারসাম্য রাখা ভীষণ জরুরি। সুষম খাদ্য না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন, তখন কিন্তু খুব বেশি দিন এই ডায়েট চালাতে পারবেন না।