কী ধরনের মাসাজ করালেন শাহিদ কপূরের পত্নী মীরা রাজপুত কপূর? ছবি : সংগৃহীত।
অভিনেত্রী নন। তবে গ্ল্যামারে, চেহারার নিখুঁত আদলে তিনি কোনও অভিনেত্রীর থেকে কম যান না। বলিউড অভিনেতা শাহিদ কপূরের স্ত্রী মীরা রাজপুত কপূর তাই বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে থেকেছেন। কখনও তাঁর ফ্যাশনবোধের জন্য, কখনও স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য। সম্প্রতি তিনি আবার আলোচনায় উঠে এলেন অন্ত্র ভাল রাখার জন্য কিছু বিশেষ ধরনের মাসাজ করিয়ে। মীরা নিজে তাঁর ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে জানালেন ওই মাসাজ করিয়ে তিনি কী কী সুফল পেয়েছেন।
বয়স ৩১। দুই সন্তানের জননী। তার পাশাপাশি, সংসারের অনেক খুঁটিনাটিই সামলান স্বহস্তে। আর তার পাশাপাশিই চলতে থাকে মীরার নিজেকে ভাল রাখার প্রয়াস। সম্প্রতি স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্য এক বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশগ্রহণ করেছিলেন মীরা। সেখানে অন্ত্রকে পরিচ্ছন্ন করার জন্য কিছু প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছিল। মীরা সেই প্রশিক্ষণ শিবিরে হওয়া অভিজ্ঞতাই ভাগ করে নিয়েছেন নিজের অনুরাগীদের সঙ্গে। মীরা বলেছেন, ‘‘আমি গিয়েছিলাম আমার অন্ত্রের সমস্যা মেটাতে। ভাবতে পারিনি ওই প্রক্রিয়ায় আমার কিছু বাড়়তি ওজনও ঝরতে পারে। আমার পেট ভাল আছে তো বটেই। আমি দেড় কিলো ওজনও কমিয়ে ফেলেছি। নিজেকে অনেক হালকা লাগছে এখন।’’
কী ধরনের মাসাজ করিয়েছেন মীরা?
মীরা জানিয়েছেন, ওই প্রশিক্ষণ শিবিরে তাঁকে অভয়াঙ্গ মাসাজ, শিরোধারা মাসাজ এবং পোটলি মাসাজ করানো হয়েছে। শেষ দিনে হয়েছে সাউন্ড হিলিং।
অভয়াঙ্গ মাসাজ কী?
ঈষদুষ্ণ ভেষজ তেল দিয়ে পুরো শরীরে এক বিশেষ পদ্ধতিতে মালিশ করা হয়। গুরুত্ব দেওয়া হয় অস্থিসন্ধি এবং পেশিতে যাতে তেল ত্বকের গভীরে প্রবেশ করতে পারে। এতে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি হয়, পেশির টান ও ব্যথা কমায়, ত্বক নরম এবং উজ্জ্বল করে, শরীরের টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এই মাসাজ করলে ঘুমও ভাল হয়।
শিরোধারা মাসাজ কী?
শিরোধারা শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শির অর্থাৎ মাথা এবং ধারা অর্থাৎ প্রবাহ থেকে। এই পদ্ধতিতে যাঁর চিকিৎসা হচ্ছে তাঁকে কাঠের টেবিলে শুইয়ে তাঁর কপালে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে হালকা গরম তেল, দুধ বা ঘোল নির্দিষ্ট ছন্দে ফেলা হয়। মূলত কপালের ‘তৃতীয় নয়ন’-এর ক্ষেত্র বা আজ্ঞা চক্রের উপরেই ওই তরল পদার্থটি ফেলা হয়। এতে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা কমে। মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনের সমস্যা দূর হয়। স্মৃতিশক্তি এবং একাগ্রতা বৃদ্ধি পায়। স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখতেও সাহায্য করে। ফলে অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়ার রোগীদের জন্য উপকারী।
পুঁটুলি বা পোটলি মাসাজ
এটি এক ধরনের প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতি।, যা মূলত শরীরে জমা দূষিত এবং বিষাক্ত পদার্থ দিয়ে করতে ব্যবহার করা হত। এ ছাড়া, পেশির ব্যথা কমাতে এবং মানসিক শান্তি দিতেও এই মাসাজ কার্যকরী বলে মনে করা হয়। আয়ুর্বেদে একে ‘পিণ্ড স্বেদ’ বা ‘কিঝি’ও বলা হয়। ছোট একটি কাপড়ের পুঁটুলির ভিতরে নিমপাতা, আদা, হলুদ, অশ্বগন্ধা বা ল্যাভেন্ডার, বিশেষ চাল, সামুদ্রিক লবণ, বালি বা ভেষজের গুঁড়ো রেখে সেটিকে গরম তেলে ডুবিয়ে করা হয় ওই মাসাজ। এতে মানসিক চাপ বৃদ্ধির হরমোন কর্টিসলের মাত্রা কমে। শরীরে প্রদাহের সমস্যা কমিয়ে ব্যথা উপশম করে, শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করে দিতে সাহায্য করে, তার পাশাপাশি রক্ত সংকলন বৃদ্ধি করে।
সাউন্ড হিলিং
একটি অত্যন্ত প্রাচীন এবং প্রাকৃতিক নিরাময় পদ্ধতি, যেখানে বিশেষ ধরণের শব্দ তরঙ্গ বা সুর ব্যবহার করে শারীরিক, মানসিক এবং আত্মিক সুস্থতা নিশ্চিত করা হয়। বিজ্ঞান বলছে, শরীরের প্রতিটি অঙ্গ এবং কোষের নিজস্ব একটি কম্পন তরঙ্গ বা ফ্রিকোয়েন্সি আছে। মানুষ যখন অসুস্থ হয় বা মানসিক চাপে থাকে, তখন ওই ফ্রিকোয়েন্সি এলোমেলো হয়ে যায়। সাউন্ড হিলিং-এর সময় বিশেষ বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শরীরের ওই এলোমেলো হয়ে যাওয়া কম্পন তরঙ্গকে আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। মীরা জানিয়েছেন, এই পদ্ধতিতে তিনি তাঁর মধ্যে আটকে থাকা অনেক বিষয়কে অর্গল মুক্ত করতে পেরেছেন। এই প্রক্রিয়াটি তাঁকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন মীরা।