প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমাবে দু’টি ওষুধ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
প্রস্রাবের সময়ে জ্বালা-যন্ত্রণা বা ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ মানেই মূত্রনালির সংক্রমণ, তা নয়। রাতের বেলা বারে বারে প্রস্রাবের বেগ এলে ডায়াবিটিস ভেবেও ভুল করেন অনেকে। প্রস্টেট ক্যানসারের উপসর্গ সকলের ক্ষেত্রে এক রকম হয় না। অনেক সময়ে পিঠ-কোমর ও নিতম্বের নিদারুণ যন্ত্রণাও ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। প্রস্টেট ক্যানসারে মৃত্যুর হার ক্রমেই বাড়ছে। এ দেশেও আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। ক্যানসার জয় করতে তাই নিত্যনতুন ওষুধ নিয়ে গবেষণা চলছে বিশ্ব জুড়েই। সম্প্রতি দু’টি নতুন ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সাফল্যের মুখ দেখেছে বলে দাবি করা হয়েছে। ওষুধ দু’টিতে অনুমোদন দিয়েছে আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনও।
এনজ়ালুটামাইড এবং লিউপ্রোলাইড নামে দু’টি ওষুধের প্রয়োগ চলছে ক্যানসার রোগীদের উপরে। ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ এই গবেষণা সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরেই ওষুধ দু’টি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছিল। হাজারের বেশি রোগী যাঁদের প্রস্টেট ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি, অথবা যাঁদের শরীরে ক্যানসারের প্রোটিন পাওয়া গিয়েছে, তাঁদের উপর ওই ওষুধের পরীক্ষা চলে। তিনটি দলে ভাগ করে এক দলকে শুধু এনজ়ালুটামাইড, অন্য দলকে শুধুমাত্র লিউপ্রোলাইড দেওয়া হয়। আর বাকিদের দেওয়া হয় দুই ওষুধের ‘কম্বিনেশন’। তিন পর্যায়ের ট্রায়ালের পরে দেখা যায়, যাঁরা দু’টি ওষুধই একসঙ্গে খেয়েছিলেন তাঁদের প্রস্টেট ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি ৭৮.৯ শতাংশ কমে গিয়েছে।
এনজ়ালুটামাইড ওষুধটির কাজ হল পুরুষদের হরমোনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করা এবং ক্যানসার কোষের বিভাজন ঠেকানো। লিউপ্রোলাইড ওষুধটি হরমোন থেরাপিতে কাজে লাগে। এরও কাজ হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণে রাখা, যাতে কোনও কোষের অস্বাভাবিক বিভাজন শুরু না হয় অথবা টিউমার কোষ তৈরিই না হয়। গবেষকেরা দাবি করেছেন, ওষুধ দু’টি আলাদা আলাদা খাওয়ার চেয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে বেশি উপকার হচ্ছে রোগীদের।
প্রস্টেট ক্যানসারের লক্ষণ খুব বেশি প্রকাশ পায় না অনেক সময়েই। তাই বয়স চল্লিশ পেরোলেই কিছু পরীক্ষা করিয়ে রাখতে বলেন চিকিৎসকেরা। সেই পরীক্ষায় যদি বোঝা যায়, ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে, তখন ওষুধের থেরাপি শুরু করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে। ক্যানসার কোষ ডালপালা মেলার আগেই তাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। তাই সবচেয়ে আগে প্রয়োজন শনাক্তকরণ। তার জন্য আলট্রাসোনোগ্রাফি (ইউএসজি), হিস্টোপ্যাথোলজিক্যাল টেস্ট, পিএসএ টেস্ট করিয়ে রাখতে বলেন চিকিৎসকেরা। এই পরীক্ষাগুলিতে ধরা পড়বে, প্রস্টেটের আকার অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গিয়েছে কি না, সেখানকার গ্রন্থির আকার বড় হচ্ছে কি না, রক্তের মধ্যে ক্যানসারের প্রোটিন মিশে রয়েছে কি না। তখন সেই মতো চিকিৎসা শুরু করা যায়। রোগীরও নিরাময়ের সম্ভাবনা অনেকখানি বেড়ে যায়।