Firecracker and Eye Injuries

ছিটকে আসা বাজির টুকরো ছিন্নভিন্ন করতে পারে কর্নিয়াকে, কালীপুজোয় চোখের ক্ষতি এড়াতে সতর্কতা জরুরি

পোড়া বাজির টুকরো ছিটকে এসে বা বাজিতে বিস্ফোরণ ঘটে কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনা কম নয়। বাজি ছিটকে এসে কর্নিয়া ফেটে গিয়েছে, এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তাই সতর্ক থাকতে হবে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৫ ১১:৪২
Share:

বাজি থেকে চোখ বাঁচানোর কিছু উপায়, পরামর্শ দিলেন চিকিৎসকেরা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

কালীপুজোর রাত মানেই শব্দবাজি আর মাইকের দাপট। পাড়ার মোড়ে, রাস্তার ধারে, সর্বত্র একই ছবি। তাতে উৎসবের রাত আরও রঙিন আর জমকালো হয়ে ওঠে ঠিকই। কিন্তু বাজির ধোঁয়া অনেকেরই শারীরিক অসুস্থতার কারণ হয়ে ওঠে। শহর থেকে শহরতলি, আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাজি পোড়ানো চলবে দেদার। তাতে দূষণের পাল্লা সপ্তমে চড়বে। এতে ফুসফুসের যতটা না সর্বনাশ হবে, চরম ক্ষতি হবে চোখেরও। বাজির ধোঁয়া চোখের জন্য ক্ষতিকর তো বটেই, বাজি পোড়ানোর সময়ে আগুনের ফুলকি, ছিটকে আসা বাজির টুকরো থেকেও বিপদ ঘটে যায় যখন-তখন। কালীপুজোর পরে তাই দেখা যায়, চিকিৎসকের চেম্বারে সবচেয়ে বেশি চোখ, কান ও গলার সমস্যা নিয়েই হাজির হচ্ছেন লোকজন।

Advertisement

বিপদে চোখ

বাজির ধোঁয়ায় থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক, যেমন সালফার, বেরিয়াম অক্সাইড, পটাশিয়াম নাইট্রেট এবং চারকোল বাতাসের সঙ্গে মিশে গিয়ে চোখের ক্ষতি করতে পারে। এটি চোখ জ্বালা করা, জল পড়া এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। গ্লকোমা কনসালট্যান্ট চক্ষু চিকিৎসক নিলয়কুমার মজুমদারের মতে, পোড়া বাজির টুকরো ছিটকে এসে বা বাজিতে বিস্ফোরণ ঘটে কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনা কম নয়। বাজি ছিটকে এসে কর্নিয়া ফেটে গিয়েছে, এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তখন দৃষ্টিশক্তি চলে যেতে পারে। বাজির ধোঁয়ায় থাকা ভারী ধাতুর কারণে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়, চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়তে থাকে, এমনকি কর্নিয়ার সামনের অংশে আঁচড় বা ক্ষত তৈরি হতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘কর্নিয়াল অ্যাব্রেশন’। এর ফলে চোখ ব্যথা, লালচে ভাব, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা দেখা দেয়। ক্ষত গভীর হলে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়েও যেতে পারে।

Advertisement

আগুনের ফুলকি পুড়িয়ে দেয় চোখের পাতা

বাজি বড়ই বিপজ্জনক। সে ফুলঝুরি-রংমশাল হলেও। বাজি জ্বালানোর সময়েও সতর্ক থাকতে হবে। আগুনের ফুলকি চোখের পাতা পুড়িয়ে দিতে পারে। এমনই জানালেন চক্ষুরোগ চিকিৎসক সৌমেন মণ্ডল। তাঁর কথায়, “বাজি পোড়ানোর সময়ে অতটা বোঝা যায় না। অনেক সময়েই দেখবেন, চোখ কড়কড় করছে বা লাল হয়ে গিয়েছে। তখন চোখ ঘষলে আরও বিপদ। অঝোরে জল ঝরতে থাকবে, ফুলে যাবে। পরে হয়তো দেখা যাবে, বাজির রাসায়নিক ঢুকে কর্নিয়ার ক্ষতি করেছে। এই বিপদই বেশি হয়।”

বাজি থেকে ক্ষতি হতে পারে চোখের। ছবি: ফ্রিপিক।

কী কী সমস্যা হয়?

ডায়রেক্ট ট্রমা

১) তুবড়ি বা রকেট জাতীয় বাজি থেকে ছিটকে আসা অংশ বা বাজি ফাটার সময়ে যে ধুলো বা পাথরের টুকরো ছিটকে বেরোয় তা চোখে ঢুকে চোখের সামনের স্তরে আঁচড়ের মতো ক্ষত তৈরি করতে পারে। একে বলে ‘হাইফেমা’। এতে চোখ দিয়ে রক্ত বার হতে পারে, চোখ ফুলে লাল হয়ে উঠতে পারে।

২) চোখের মণিতে ক্ষত হতে পারে। অক্ষিগোলকে আঁচড়ের দাগ পড়তে পারে।

৩) অর্বিটাল ফ্র্যাকচারও বড় সমস্যা। এ ক্ষেত্রে চোখের চারপাশের হাড়ে চিড় ধরতে পারে।

৪) চোখের আলোক-সংবেদী অংশ ছিঁড়ে যেতে পারে, এই সমস্যাকে বলা হয় ‘রেটিনাল ডিটাচমেন্ট’। এতে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যেতে পারে।

রাসায়নিক ক্ষত

বাজির ধোঁয়ায় থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক, যেমন, আর্সেনিক, ম্যাঙ্গানিজ, সোডিয়াম অক্সালেট, আয়রন ডাস্ট, সালফার, বেরিয়াম অক্সাইড, পটাশিয়াম নাইট্রেট, চারকোল বাতাসের সঙ্গে দ্রুত মিশে যায়। এর প্রভাবে চোখে জ্বালা বা চুলকানি, জল ঝরা, চোখ কড়কড় করার মতো একাধিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে। রাসায়নিকের কারণে কনজাঙ্কটিভাইটিসের প্রকোপও এই সময়ে বৃদ্ধি পায়।

ছোটরা বাজি পোড়ানোর সময়ে সতর্ক থাকতে হবে অভিভাবকদের। ছবি: ফ্রিপিক।

থার্মাল বার্ন

বাজির ধোঁয়া কেবল নয়, আগুনের তাপও চোখের জন্য ক্ষতিকর। বাজি পোড়ানোর সময়ে যে তাপ নির্গত হয় বা আগুনের ফুলকি ছিটকে বেরোয়, তা চোখের পাতা, চোখের চারপাশের নরম স্তরকে পুড়িয়ে দিতে পারে। সবুজ বাজিও এ ক্ষেত্রে নিরাপদ নয়। তাই চোখে সামান্য জ্বালা, যন্ত্রণা বা ঝাপসা ভাব এলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া ভাল। এই সময়ে চোখের যে কোনও ছোটখাটো অস্বস্তিকে অবহেলা করলে তার ফল পরবর্তী সময়ে মারাত্মক হতে পারে।

চোখ বাঁচাবেন কী করে?

১) পলিকার্বোনেট গ্লাস রয়েছে, এমন চশমা পরে বাজি ফাটান। এতে চোখ কিছুটা হলেও সুরক্ষিত থাকবে।

২) আলোর বাজি হলেও নিরাপদ দূরত্বে রেখে ফাটাতে হবে। ছোটদের হাতে বাজি দেওয়াই ঠিক নয়।

৩) বাজি পোড়ানোর জায়গায় জল রেখে দিন। চোখ জ্বালা করলে বা ঝাপসা হয়ে এলেই জলের ঝাপটা দেবেন। তবে ভুলেও চোখ ঘষবেন না।

৪) সিন্থেটিক পোশাক নয়, সুতির কাপড় পরেই বাজি পোড়ান। বাজি পোড়ানোর পরে ভাল করে হাত ধুয়ে তবেই চোখে-মুখে হাত দেবেন।

৫) চোখ কড়কড় করলে বা চোখে কিছু ঢুকেছে মনে হলে তা নিজে থেকে বার করতে যাবেন না। এতে কর্নিয়ায় ঘষা লেগে ক্ষতি বাড়বে বই কমবে না। প্রথমে জলের ঝাপটা দিন। তাতেও কষ্ট না কমলে চিকিৎসকের কাছে যান।

৬) চোখ জ্বালা করলে সেই মুহূর্তে আই ড্রপ দেবেন না বা চোখের চারপাশে কোনও মলম লাগাবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই আই ড্রপ ব্যবহার করা উচিত।

৭) বাজি পোড়ানোর আগে বা পরে রক্ত পাতলা হওয়ার ওষুধ বা আইবুপ্রোফেনের মতো ওষুধ খাবেন না।

৮) কনট্যাক্ট লেন্স পরে ভুলেও বাজি পোড়াবেন না। এতে দৃষ্টিশক্তি চলে যেতেও পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement