Firecracker Injuries

বাজি পোড়ানোর সময়ে আগুন থেকে সতর্ক থাকুন, অঘটন ঘটলে প্রাথমিক চিকিৎসার উপায়টুকু জেনে রাখা ভাল

বাজি পোড়ানোর সময়ে আগুনের ফুলকি ছিটকে এসে হাত বা পা পুড়ে গেলে বা বাজি হঠাৎ ফেটে গিয়ে গভীর ক্ষত হলে ভয় পেয়ে পরিস্থিতি জটিল করবেন না। বরং কী ভাবে সাবধান থাকতে হবে, সে উপায় জেনে রাখা ভাল।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:৩৪
Share:

বাজি পোড়ানোর সময় সতর্ক থাকুন, রইল চিকিৎসকদের পরামর্শ। ছবি: ফ্রিপিক।

সকালের রোদ্দুর দেখেই কেউ বারান্দায় তুবড়ি সারি দিয়ে সাজিয়ে রেখেছেন। আবার কেউ বিকেলে বাজি বাজার ঘুরে রংমশাল কিনে প্রস্তুতি শেষ করেছেন। আলোর উৎসবে মেতে উঠবেন আট থেকে আশি, সকলেই। কিন্তু সামান্য অসতর্কতা বদলে দিতে পারে উৎসবের রং। নিয়ম মেনে বাজি পোড়ালে ও আগুন সম্পর্কে সতর্ক থাকলে অঘটন কম ঘটবে। তবু যদি শরীরের ৫ ভাগের এক ভাগও পোড়ে, শিশুদের ক্ষেত্রে ১০ ভাগের এক ভাগ, তা হলে কিন্তু বিপদ আছে। বাজি পোড়ানোর সময়ে আগুনের ফুলকি ছিটকে এসে হাত বা পা পুড়ে গেলে বা বাজি হঠাৎ ফেটে গিয়ে গভীর ক্ষত হলে ভয় পেয়ে পরিস্থিতি জটিল করবেন না। বরং কী ভাবে সাবধান থাকতে হবে, সে উপায় জেনে রাখা ভাল।

Advertisement

আগুন থেকে সতর্কতা

বাজির কাছাকাছি মোমবাতি বা প্রদীপ রাখবেন না। এগুলি বাজির বারুদের সংস্পর্শে চলে এলে অঘটন ঘটতে দেরি হবে না।

Advertisement

একসঙ্গে অসংখ্য মোমবাতি জ্বালিয়ে বাজি পোড়াবেন না। অনেক সময় এর থেকে জামাকাপড়েও আগুন লেগে যায়।

বাজি জ্বলতে না চাইলে তাতে ফের আগুন দিয়ে পোড়ানোর চেষ্টা করবেন না। এতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তুবড়ি বা হাউই জ্বালাতে হলে মুখ দূরে রেখে জ্বালান।

বাজিতে আগুন দেওয়ার সময় আপনার মুখ এবং শরীর বাজি থেকে দূরে রাখুন। শিশু বা বয়স্কদের ফুলঝুরি বা রংমশালের মতো আলোর বাজি দিলেও তা পাটকাঠির আগায় লাগিয়ে দিন।

দেশলাই বা লাইটারের বদলে লম্বা পাটকাঠি, মোমবাতি বা ধূপকাঠি ব্যবহার করুন। বাজির উপর মুখ নিয়ে গিয়ে বা ঝুঁকে কখনওই আগুন দেবেন না।

মোম বা প্রদীপ মাটিতে না রাখাই ভাল। বরং উঁচু জায়গায় রাখুন। ছোটরা যেখানে বাজি পোড়াবে, তার কাছাকাছি আগুন না রাখাই ভাল। বরং আপনারাই জ্বালিয়ে তাদের হাতে দেবেন।

বাজি পোড়ানোর সময়ে ছোটদের একা ছাড়বেন না। ছবি: এআই।

পোড়ানো বাজি বা তার অবশিষ্টাংশ যেখানে সেখানে ছুড়ে ফেলবেন না। পোড়ানো শেষে সেগুলিকে তুলে জলে ডুবিয়ে দিন, যাতে ভিতরে থাকা দাহ্য পদার্থ পুরোপুরি নিবে যায়।

বাজি পোড়ানোর স্থানে এক বালতি জল এবং এক বালতি বালি মজুত রাখুন। ছোটখাটো আগুন লাগলে বা পুড়ে গেলে প্রাথমিক মোকাবিলা করতে কাজে আসবে।

অঘটন বলেকয়ে আসে না

বাজি পোড়ানোর সময়েই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। গায়ে আগুন লেগে যাওয়া, বাজি ফেটে শরীরে ক্ষত হওয়া, বাজির আগুনে চোখ পুড়ে যাওয়ার খবর প্রায়ই প্রকাশ্যে আসে। তাই সতর্ক থাকতেই হবে। শিশুরোগ চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পালের কথায়, “বাড়ির ছোটরা বাজি পোড়ালে তাদের একা ছাড়বেন না। সঙ্গে বড়দের থাকতেই হবে। শব্দবাজি, তুবড়ি বা রকেটের মতো বাজি ছোটদের একেবারেই দেওয়া চলবে না। আতশবাজির সম্ভার কখনওই পোড়ানোর জায়গায় মজুত রাখবেন না। সেগুলো শিশুদের নাগালের বাইরে একটি নিরাপদ জায়গায় সংরক্ষণ করুন।”

বাজি পোড়ানোর সময়ে সতর্ক থাকুন। ছবি: এআই।

বাজিতে পুড়ে গেলে বা শরীরের কোথাও ক্ষত হলে, আতঙ্কে আরও বেশি ভুলভ্রান্তি করে ফেলেন অনেকে। ওই সময়টাতে মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। অল্প পুড়লেও অবহেলা করা যাবে না।

পুড়ে গেলে বা ক্ষত হলে প্রাথমিক চিকিৎসা কী কী?

যতটাই পুড়ুক আর যেখানেই পুড়ুক, পোড়া অংশে ঠান্ডা বরফজল দিন। চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মতে, অত্যধিক পুড়ে গেলে বা খুব স্পর্শকাতর স্থান ঝলসে গেলে কখনওই বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করানো উচিত নয়। প্রথম অবস্থায় বোঝা না গেলেও ঘা শুকোনোর সময় এতে ঝুঁকি বাড়ে।

আগে বুঝতে হবে, ক্ষতটি মাইল্ড, মডারেট, না সিভিয়র বার্ন। সেই মতো শুরু হবে চিকিৎসা। চামড়ার কতটা অংশ পুড়েছে, তা দেখা দরকার। অনেক সময় শুধু উপরের ত্বক পুড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে জল বা বরফ দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করা যায়। তবে চামড়ার নীচের মাংসল অংশ পুড়ে গেলে হাসপাতালে নিয়ে যেতেই হবে।

অনেক সময় চোখে আলোর ফুলকি ঢোকে। সে ক্ষেত্রে কোনও অবস্থাতেই সে ক্ষেত্রে কোনও অবস্থাতেই চোখ ঘষা যাবে না, বরং বারে বারে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিতে হবে।

মোমবাতি বা প্রদীপ থেকে বাজি ধরাতে গিয়ে জামাকাপড়ে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনা অনেক সময়েই ঘটে। তেমন হলে আতঙ্কিত না হয়ে জল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করুন। সেই অবস্থায় ছোটাছুটি করবেন না, তাতে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়বে। একান্তই জল না পেলে ভারী কম্বল বা ভারী কাপড় চাপা দিতে হবে।

হাতে ফোস্কা পড়লে অনেকেই সেটা ফাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন অনেকে। এতে বিপদ বাড়বে।

হাত বা আঙুল পুড়ে গেলে চুড়ি, আংটি খুলে রাখতে হবে। পুড়ে যাওয়ার পরে সেই অংশ অনেক সময়ে ফুলে যায়। তখন সেই আংটি বা চুড়ি গেঁথে বসে যায় ফোলা অংশে। এতে ব্যথা বাড়বে। পোড়া জায়গায় যাতে ঘষা না লাগে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

পুড়ে গেলে সেই অংশ ঠান্ডা জলে ধুয়ে, শুকিয়ে তাতে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে রাখতে পারেন। কোনও কসমেটিক ক্রিম লাগাবেন না। জেল লাগানো এক ধরনের গজ কিনতে পাওয়া যায় দোকানে। এই গজও পোড়া অংশে বেঁধে রাখতে পারেন। এতে বাইরের ধুলো-ময়লা থেকে ক্ষতস্থান বাঁচানো যাবে। তবে এর পরেও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement