Male Infertility

ফল-সব্জিতে কীটনাশকের বাড়বাড়ন্ত, এতেই কি কমছে পুরুষের শুক্রাণুর মান? উদ্বিগ্ন গবেষকেরা

হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা জানিয়েছেন, ২০০৫ থেকে ২০২৫ সাল অবধি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যত বেশি কীটনাশক রক্তে মিশছে, শুক্রাণুর মান ততটাই খারাপ হচ্ছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৫ ১২:৪২
Share:

খাবারে থাকা কীটনাশকের কারণে শুক্রাণু উৎপাদন কমছে? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

চাষের সময় ব্যবহার করা কীটনাশকের যেটুকু খাদ্যপণ্যে থেকে গেলে শরীরের ক্ষতি হয় না, সেই সর্বোচ্চ সীমা মেনে চলা নিয়ে কঠোর নিয়ম আছে কেন্দ্রের। যে কোনও খাদ্যেই বেশি পরিমাণ কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ আছে কি না, তা পরখ করে দেখে খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফএসএসএআই (ফুড সেফটি অ্যান্ট স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া)। কিন্তু এর পরেও ফাঁক থেকে যাচ্ছে বলেই দাবি করা হয়েছে। ফল, সব্জি ও যে কোনও খাদ্যপণ্যে থাকা অত্যধিক মাত্রায় কীটনাশকের উপস্থিতি শরীরের ক্ষতি করছে নানা ভাবে। বিশেষ করে, খাবারে থাকা কীটনাশকের কারণে শুক্রাণুর মান কমছে বলেও দাবি করা হয়েছে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায়। ‘জার্নাল এনভায়রনমেন্ট রিসার্চ’-এ এই গবেষণা সম্পর্কিত নানা তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

Advertisement

হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা জানিয়েছেন, ২০০৫ থেকে ২০২৫ সাল অবধি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যত বেশি কীটনাশক রক্তে মিশছে, শুক্রাণুর মান ততটাই খারাপ হচ্ছে। শুক্রাণুর সংখ্যা কমছে এবং যা পুরুষ বন্ধ্যত্বের কারণ হয়ে উঠছে। এই কীটনাশক খাবারের মাধ্যমে শরীরে পৌঁছলে, তা রক্তের সঙ্গে মিশে নানা রকম রোগের জন্ম দেয়। স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বিঘ্নিত করে। শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘ দিন ধরে এই বিষ শরীরে মিশতে থাকলে ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও এড়িয়ে চলা যায় না। খাবারে দেওয়া এই কীটনাশক প্রজননে, এমনকি ভ্রূণের বিকাশেও সমস্যা তৈরি করতে পারে।

কোন কোন কীটনাশক ক্ষতিকর?

Advertisement

জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটির গবেষক ভেরোনিকা জি স্যানচেজ় জানিয়েছেন, নিওনিকোটিনয়েড নামক এক ধরনের কীটনাশক খাবারে বেশি মাত্রায় পাওয়া যাচ্ছে। পুরুষ ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এই কীটনাশকের প্রভাবে ইঁদুরের শুক্রাশয়ের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হরমোনের গোলমাল দেখা গিয়েছে, ফলে শুক্রাণুর উৎপাদনও কমেছে।

অর্গানোফসফেট এবং এন-মিথাইল কার্বামেট নামে আরও দু’ধরনের কীটনাশকও খাবারে বেশি পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। এই সব কীটনাশক রক্তে মিশতে থাকলে হরমোনের ভারসাম্যই নষ্ট হয়ে যাবে। গবেষকেরা দেখেছেন, কাঁচা আনাজে এই ধরনের কীটনাশক লেগে থাকে। ধোয়ার পরেও তার অবশিষ্টাংশ আনাজের মধ্যে থেকে যায়। এই ধরনের কীটনাশকই শরীরে বেশি পরিমাণে প্রবেশ করছে।

বাঁচার উপায় কী?

বাজার থেকে কিনে আনা সব্জি বা ফল সব সময়ে ভাল করে ধুয়ে তবেই খেতে হবে। তবে কয়েক রকম সব্জি ও ফলে ধোয়ার পরেও কীটনাশক লেগে থাকে। যেমন পালং শাক। বাজার থেকে কেনা ৭৬ শতাংশ পালং শাকে পার্মাথ্রিন নামে এক ধরনের কীটনাশকের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এটি এক ধরনের নিউরোটক্সিন, যা মানুষ ও পশুদের জন্য ক্ষতিকর। তাই শাকপাতা খাওয়ার আগে তা নুন-জলে ভিজিয়ে রেখে ভাল করে ধুয়ে তবেই খাওয়া উচিত। যে কোনও রকম শাকপাতাতেই প্রচুর রাসায়নিক লেগে থাকে। প্রায় ১০৩ রকম কীটনাশক উপাদানের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে বিভিন্ন শাকপাতা থেকে। নটে, কলমি বা যে কোনও রকম শাকই কিনুন না কেন, ভাল করে নুন-জলে ধুয়ে তবেই রান্না করবেন।

আরও কিছু উপায় আছে কীটনাশক পরিষ্কার করার। দোকান থেকে কিনে আনা রাসায়নিক মিশ্রিত কোনও দ্রবণে সব্জি ধোবেন না। বরং বাড়িতেই বানিয়ে নিন বেকিং সোডা ও জলের দ্রবণ। এই দ্রবণে সব্জি ভিজিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। তার পর সেটি তুলে নিয়ে পরিষ্কার কলের জলে ধুয়ে নিন। ৯০ শতাংশ কীটনাশক ধুয়ে বেরিয়ে যাবে।

সম পরিমাণে জল ও ভিনিগার মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করুন। এই দ্রবণে এক চিমটে নুন মিশিয়ে দিন। এ বার কাঁচা সব্জি, শাকপাতা, ফল এই দ্রবণে ডুবিয়ে রাখুন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। তার পর দ্রবণ থেকে তুলে পরিষ্কার জলে ভাল করে ধুয়ে নিন। কাঁচা স্যালাড খেলে এই উপায়ে সব্জি আগে ভাল করে ধুয়ে নেবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement