মুখের ছবি দেখে ক্যানসার নির্ণয় করবে ‘ফেসএজ’! নতুন প্রযুক্তি আসতে চলেছে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
কেউ কেউ বলেন, এটা স্রেফ ‘পাগলামি’। আবার অনেকেই মনে করেন খালি নিজেকে জাহির করার চেষ্টা। নিজস্বীর প্রতি আসক্তিকে ‘মানসিক রোগ’ বলেও দাগিয়ে দিয়েছেন অনেকেই। নিজস্বী-স্রোতে শুধু যে তরুণ প্রজন্ম গা ভাসিয়েছে তা নয়, প্রবীণেরাও কিন্তু নিজস্বী জ্বরে আক্রান্ত। নিজস্বী নিয়ে যতই কটাক্ষ হানার চেষ্টা হোক না কেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিন্তু এই নিজস্বীকে ক্যানসার নির্ণয়ের অন্যতম অস্ত্র বানাতে চলেছে। মুখ দেখে রোগ নির্ণয়ের ক্ষমতা খুব কম চিকিৎসকেরই থাকে। এই কাজে তাই প্রযুক্তিকেই ব্যবহার করতে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। নিজস্বীতে তোলা মুখের ছবিই বলে দেবে, শরীরে ক্যানসার বাসা বেঁধেছে কি না। এখানেই শেষ নয়, আরও এক ধাপ এগিয়ে জানিয়ে দেবে, ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা ঠিক কতটা।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিজস্বীর বৈশিষ্ট্য ও মুখের ধরন নিখুঁত ভাবে বিশ্লেষণ করে শরীরের অসুখবিসুখের খুঁটিনাটি বলে দিতে পারবে। এমনটাই দাবি করা হয়েছে। আমেরিকার হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অধীনস্থ ‘মাস জেনারেল ব্রিগহ্যাম’ গবেষণাকেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে নতুন প্রযুক্তি তৈরি করে দাবি করেছেন, সেটি চোখ ও মুখের সূক্ষ্ম রেখা বিশ্লেষণ করে ধরতে পারবে শরীরে ক্যানসার বাসা বেঁধেছে কি না। সেই প্রযুক্তির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফেসএজ’।
‘দ্য ল্যানসেট ডিজিটাল হেল্থ’ জার্নালে ‘ফেসএজ’ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ‘ফেসএজ’ হল ‘ডিপ লার্নিং অ্যালগরিদ্ম’। মুখের রেখা ও রেটিনা দেখে শরীরের আসল বয়স কত তা নির্ণয় করা যাবে। জন্মতারিখ অনুযায়ী একজন মানুষের বয়স যা-ই হোক, তাঁর শরীরের বয়স কিন্তু আলাদাই হবে। অর্থাৎ, যাকে বলে ‘বায়োলজিক্যাল এজ’। এই বয়স নির্ভর করে খাওয়াদাওয়া, জীবনযাপনের পদ্ধতি, অসুখবিসুখের উপর। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত কমবে, ততই বুড়িয়ে যাবে শরীর। যিনি হার্টের রোগে ভুগছেন, যাঁর ডায়াবিটিস অথবা কোনও ক্রনিক রোগ রয়েছে, তাঁর ‘বায়োলজিক্যাল এজ’ কিন্তু বেশিই হবে। আবার ক্যানসার হলে শরীর খুব দ্রুত বুড়িয়ে যেতে থাকে। তার ছাপ পড়ে চোখেমুখেও। ত্বকের বৈশিষ্ট্যে অনেক বদল আসে, যা খালি চোখে বোঝা সম্ভব নয়। সেই কাজটিই করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত ‘ফেসএজ’।
নতুন প্রযুক্তিটি কতটা নির্ভরযোগ্য, তা জানতে প্রাথমিক ভাবে হাজার ছয়েক ক্যানসার রোগীর উপরে পরীক্ষা করা হয়েছে। ‘ফেসএজ’ প্রযুক্তি দিয়ে নিজস্বী তুলে গবেষকেরা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন ক্যানসার কাকে ঠিক কতটা কাবু করেছে। কেবল তা-ই নয়, কোন রোগী চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন, নিরাময়ের সম্ভাবনা কার কতটা, তা-ও নাকি ধরা যাচ্ছে ওই প্রযুক্তিতে। গবেষকেরা দেখেছেন, ক্যানসার বাসা বাঁধলে শরীরের বয়স অন্তত পাঁচ বছর বেড়ে যায়। আবার যে রোগীর রেডিয়োথেরাপি বা কেমোথেরাপি চলছে, তাঁর শরীরের বয়স আরও বেশি। চিকিৎসায় যিনি নিরাময়ের পথে, তাঁর শরীরের বয়স এক রকম, আবার যাঁর আরোগ্য সম্ভবই নয়, তাঁর ‘বায়োলজিক্যাল এজ’ আলাদা। সেটিও ওই বিশেষ অ্যালগরিদ্মে ধরা পড়বে।
‘ফেসএজ’ কতটা সঠিক হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে বিজ্ঞানীমহলে। হাজার হাজার রোগীর উপরে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তবে মেকআপ, কসমেটিক সার্জারি, আলোর কমা-বাড়া নিজস্বীতে প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন গবেষকেরা। তাই সেই ত্রুটিগুলি এড়াতে কী ভাবে অ্যালগরিদ্মকে সাজাতে হবে, সে চেষ্টাও চলছে।