অন্ধও দেখবেন, ঝাপসা দৃষ্টি স্বচ্ছ হবে, কী আবিষ্কার হল? ছবি: ফ্রিপিক।
বয়সকালে চোখে চশমা এঁটেও বইয়ের পাতার খুদে খুদে অক্ষর পড়তে নাকানিচোবানি খেতে হয়। আর যাঁদের দৃষ্টিই চলে গিয়েছে, তাঁদের সামনে গোটা জগৎই অন্ধকার। দৃষ্টি ফিরিয়ে আনার পথ যেখানে বন্ধ হয়ে যাবে, সেখানে আশার আলো দেখাতে পারে ‘স্মার্ট গ্লাস’। নতুন গবেষণা তা-ই বলছে। ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এমন এক ডিভাইস তৈরি হয়েছে, যা চোখে বসিয়ে দিলে অন্ধও দৃষ্টি ফিরে পাবেন। সেই সঙ্গে পরানো হবে একটি চশমা। তাতেই নাকি ঝাপসা দৃষ্টি স্বচ্ছ হবে।
বয়স বাড়লে দৃষ্টিজনিত নানা সমস্যা শুরু হয়। বিশেষ করে যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, হার্টের রোগ বা কোলেস্টেরল রয়েছে, তাঁদের চোখের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। ডায়াবিটিস থাকলে তার প্রভাব ভাল রকমই পড়ে রেটিনায়। ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’-এর তথ্য অনুসারে, বিশ্বব্যাপী ৫০ পেরোনো প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ দৃষ্টিশক্তির সমস্যায় ভুগছেন। গ্লকোমার ঝুঁকিও বাড়ছে। তা ছাড়া আরও এক রকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে যার নাম ‘এজ-রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশন’ (এএমডি)। ডায়াবিটিসের রোগীদের এই সমস্যা বেশি হচ্ছে। ডায়াবেটিক ম্যাকুলার এডিমাতেও ভুগছেন অনেকে। এতে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হচ্ছে কারও, আবার কারও দৃষ্টিশক্তি একেবারেই চলে যাচ্ছে। ‘ডিজেনারেশন’ মানে হল ক্ষয়। এই সব রোগে রেটিনার ক্ষয় হতে শুরু করে। রেটিনার একেবারে কেন্দ্রে থাকে ছোট বিন্দু ম্যাকুলা, যা যে কোনও বস্তুকে স্পষ্ট দেখতে সাহায্য করে। ম্যাকুলার ক্ষতি হলে বা তার চারপাশের কোষ নষ্ট হলে দৃষ্টি অস্বচ্ছ হয়। কিছু পড়তে হলে বা কোনও কিছু দেখার সময়ে গোল কালো ছায়া বা কালো পর্দা এসে পড়ে চোখের সামনে। সোজা লাইন এঁকেবেঁকে যায়। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে হতে একেবারে চলে যেতে পারে। বয়সকালে দৃষ্টি এমনিতেও ঝাপসা হয়ে আসতে থাকে। এমন সমস্যা হলে ওই ‘স্মার্ট গ্লাস’ কাজে আসতে পারে বলে দাবি করেছেন গবেষকেরা।
৬০ বছর বা তার বেশি বয়সি ৩৮ জনকে নিয়ে প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষাটি করেছেন গবেষকেরা। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই বয়সজনিত ঝাপসা দৃষ্টির সমস্যায় ভুগছিলেন, বাকিদের দৃষ্টিশক্তি চলে গিয়েছিল। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, রেটিনায় ডিভাইসটি বসিয়ে দেখা গিয়েছে আলো চলাচলের পথ উন্মুক্ত হয়েছে। তার পর বিশেষ চশমাটি পরিয়ে দেখা গিয়েছে, যাঁরা দেখতে পেতেন না, তাঁরাও দিব্যি দেখতে পারছেন ও লেখাও পড়তে পারছেন। তবে কাদের চোখে ডিভাইস বসানো হবে আর কারা শুধু স্মার্ট গ্লাসেই উপকৃত হবেন, তা বিবেচনা করবেন চিকিৎসকেরা। গবেষণাটি আপাতত ৮০ শতাংশ সাফল্যের মুখ দেখেছে বলে দাবি করা হয়েছে। আগামী দিনে বয়সজনিত কারণে দৃষ্টিশক্তির যে কোনও সমস্যারই সমাধান সম্ভব হবে বলে আশা রাখছেন গবেষকেরা।