দু’ঘণ্টা হার্টে ধুকপুকুনি নেই, কী ভাবে বাঁচালেন চিকিৎসকেরা? ছবি: এআই।
জন্ম থেকেই হার্টে সমস্যা ছিল যুবকের। বয়স যত বাড়ে, ততই সমস্যা আরও বড় দেখা দেয়। অফিসে কাজ করার সময়ে ক্লান্তি, মাঝেমধ্যেই শ্বাসকষ্ট, এমনকি সাধের ব্যাডমিন্টন খেলাও বাতিলের তালিকায় চলে যাওয়ার পরেই টনক নড়ে। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখেন, হার্টের উপরের দুই প্রকোষ্ঠে দু’টি অতিরিক্ত শিরা রয়েছে, যা সেখানে থাকার কথাই নয়। এমন জটিলতা হাতেগোনা কয়েক জনের হয়। তার মধ্যে ওই যুবক একজন। এমনই তাঁর শরীরের পরিস্থিতি যে, হার্টে অস্ত্রোপচার করতে গেলে প্রাণের ঝুঁকি বাড়বে। কিন্তু সে সমস্যারও সমাধান হল এক আশ্চর্য উপায়ে।
১২০ মিনিটের জন্য হার্টে স্পন্দন ছিল না যুবকের। সাড়াও ছিল না শরীরে। তার মধ্যে হার্টে অস্ত্রোপচার চলে টানা ৫ ঘণ্টা ধরে। বুকের হাড় না কেটেই ছোট্ট ছিদ্রের মাধ্যমে হার্টের জটিল সমস্যার সমাধান করে রোবট। নেপথ্যে থাকেন অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা। ‘দা ভিঞ্চি রোবটিক অ্যাসিস্টেড সার্জারি’-তে যুবকের জন্মগত হার্টের রোগের নিরাময় হয়।
অস্ত্রোপচারটি হয়েছে হায়দরাবাদের একটি হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ‘কনজেনিটাল হার্ট ডিজ়িজ়’ ছিল যুবকের। অর্থাৎ, জন্মের সময় থেকেই হার্টের গঠনে কিছু ত্রুটি ছিল। হৃদ্যন্ত্রের উপরের দু’টি প্রকোষ্ঠের মধ্যে একটি ছিদ্র ছিল, ফলে দূষিত রক্ত হার্টে প্রবেশ ও বিশুদ্ধ রক্ত বেরিয়ে যাওয়ার মধ্যে সমতা ছিল না। তা ছাড়া ‘সুপিরিয়র ভেনা কাভা’ নামে যে শিরাটি শরীরের উপরিভাগ থেকে দূষিত রক্ত হার্টের ডান অলিন্দে বয়ে আনে, সেই শিরাটিরও গঠনগত ত্রুটি ছিল। এই কারণে হৃৎস্পন্দনও অনিয়মিত হয়ে যায় যুবকের।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এমন জটিল অবস্থা বিশ্বে ৪ থেকে ১০ শতাংশের হয়। এই ত্রুটি সারানোও খুব জটিল। সামান্য ভুলে বিপদ বাড়ে। রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়ে। সেখানে রোবটিক সার্জারিতেই সমস্যার সমাধান হয়। রোবট তার হাতের কব্জি ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরাতে পারে, যা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই শরীরের যে কোনও জায়গায় পৌঁছে গিয়ে জটিল অস্ত্রোপচার করা সম্ভব। নিখুঁত ভাবে সেলাইও করতে পারে রোবট। এই যন্ত্রের একটি ‘চোখ’ আছে, যা দিয়ে থ্রি-ডি বা রোগীর শরীরের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, শিরা-উপশিরার খুব স্পষ্ট ত্রিমাত্রিক ছবি দেখা যায়। যন্ত্রের চোখ দিয়ে দেখলে চিকিৎসক রোগীর শরীরের ভিতরের অংশগুলি প্রায় ৪০ গুণ বেশি বড় করে দেখতে পারেন। যুবকের হার্ট যখন প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ধরে অচল ছিল, তখন রোবটই হয়ে ওঠে একমাত্র ভরসা। রোবটিক সার্জারিতেই প্রাণ বাঁচে যুবকের।