আলো দিয়েই ধ্বংস হবে ক্যানসার, নির্মূল হবে রোগীর যন্ত্রণা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
এক রোগ, একই চিকিৎসা। অথচ পৃথক ফল দেখা যায় বেশির ভাগ সময়েই। বিশেষত ক্যানসারের ক্ষেত্রে দেখা যায়, একই কেমোথেরাপি নেওয়া দুই ক্যানসার-রোগীর এক জন হয়তো বেশ ক’বছর দিব্যি সুস্থ জীবন কাটিয়ে দিলেন। অথচ অন্য জনের মৃত্যু ঘনিয়ে এল কয়েক মাসের মধ্যেই! এর কারণ হল কেমোথেরাপি বা রেডিয়োথেরাপি নেওয়ার সময়ে শরীরের সুস্থ কোষগুলিও নষ্ট হতে থাকে। চিকিৎসকেরা বলেন, ক্যানসারের প্রতিটা টিউমার আলাদা আলাদা রকমের। তাই সেগুলোকে বাগে আনতেও বিশেষ রকম চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োজন, যা একাধারে নির্ভুল লক্ষ্যভেদ করে শুধু টিউমারগুলোকেই ধ্বংস করতে পারে এবং রোগীর যন্ত্রণাও কমাতে পারে। সেই লক্ষ্যে কেমোথেরাপির চেয়ে নিরাপদ আরও এক রকম চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণারত অস্টিনের ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস এবং পর্তুগালের ইউনিভার্সিটি অফ পোর্তোর গবেষকেরা।
তীব্র আলোকরশ্মিই পারে নির্ভুল লক্ষ্যে ছুটে গিয়ে ক্যানসার কোষগুলিকে ধ্বংস করতে। এমনই দাবি গবেষকদের। তাই ক্যানসার চিকিৎসায় এলইডি আলোর থেরাপি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে জোরকদমে। আলোর ছটায় থেমে যাবে ক্যানসারের বিজয়রথ। ডালপালা মেলার আগেই আলোর তাপে পুড়বে টিউমার কোষ। কেমোথেরাপি বা রেডিয়োথেরাপির চেয়েও কম সময়ে ও কম খরচে আলোর রশ্মি দিয়ে চিকিৎসা সম্ভব বলে দাবি করেছেন গবেষকেরা।
শব্দতরঙ্গ দিয়ে ক্যানসার ঘায়েল করার পদ্ধতি নিয়ে ইতিমধ্যেই গবেষণা চলছে। সেই চিকিৎসার নাম ‘হিস্টোট্রিপসি’। ক্যানসার চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি ও রেডিয়োথেরাপির মতো যন্ত্রণাদায়ক ও সময়সাপেক্ষ পদ্ধতিগুলির বিকল্প হিসেবে শব্দতরঙ্গকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। একই ভাবে আরও এক বিকল্প উপায় হতে পারে এলইডি আলোর থেরাপি। শরীরের যেখানে ক্যানসার ছড়াচ্ছে, সেই অংশে একটি বিশেষ ডিভাইসের সাহায্যে ছোট ছোট আলোর রশ্মি ফেলে চিকিৎসা করা হবে। তীব্র গতির আলোকরশ্মি ক্যানসার কোষকে এ ফোঁড় ও ফোঁড় করে দেবে চারপাশে সুস্থ কোষগুলির ক্ষতি না করেই। আলোর রশ্মি দিয়ে চিকিৎসার কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হবে না। কোলন ক্যানসার ও ত্বকের ক্যানসারের চিকিৎসায় আপাতত এলইডি থেরাপির কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
তবে এলইডি আলো দিয়ে সব রকম ক্যানসারের চিকিৎসা করা যাবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এর মধ্যে সংশয়ের সুরও যে নেই, তা নয়। চিকিৎসকেরা মনে করছেন, যে কোনও গবেষণার সাফল্য অনেক বড় চেহারা নেয়, যদি তা সাধারণ মানুষের শারীরিক কষ্ট ও আর্থিক বোঝা কমাতে পারে। তাই খুব আশান্বিত হওয়ার আগে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করা দরকার।