ঝাঁকে ঝাঁকে পালাবে মশা, সঙ্গে রাখবে হবে একটি যন্ত্র। ছবি: ফ্রিপিক।
মশার কামড় বাঁচিয়ে রাতের ঘুম নিশ্চিন্ত করতে আর বিষাক্ত ধূপের ধোঁয়া সহ্য করতে হবে না। রাতভর তেল ভরা যন্ত্রের রাসায়নিকও ঢুকবে না শরীরে। মশারিতে যাঁদের ঘোর অনীহা, তাঁরাও নিশ্চিন্তে ঘরে রাখতে পারেন এক বিশেষ রকম মশানাশক যন্ত্র, যাতে সম্প্রতি অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। গবেষকদের দাবি, এই যন্ত্রটি রাখলে মশার দল আর ঘরমুখো হবেই না।
ল্যানসেট গ্রুপের অধীনস্থ ‘ই-বায়োমেডিসিন’ জার্নালে এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা দাবি করেছেন, ম্যালেরিয়ার মশা তো বটেই, ডেঙ্গির মশা, জিকা, এমনকি ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস বহনকারী মশাও ধারেকাছে ঘেঁষবে না। যন্ত্রটি ঘরে থাকলে মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যাবে।
২৫ বছর ধরে গবেষণার পর এমন যন্ত্র তৈরি হয়েছে। এটি আসলে এক ধরনের ‘রিপ্যালেন্ট শিট’। দেখতে পাতলা কাগজের মতো। এর থেকে রাসায়নিক মেশানো বাষ্প বার হবে, যা মশার বংশ ধ্বংস করবে অথচ মানুষের ক্ষতি হবে না। ঘরের ভিতরে বা বাইরে রাখা যাবে সেটি। সঙ্গে করে নিয়েও যাওয়া যাবে। এটি চালাতে বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে না। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, মশারি সব জায়গায় টাঙানো সম্ভব নয়। তাই এটি কাছে রাখলে মশার কামড় থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। অথচ, মশা মারার লোশন বা ক্রিমের মতো গায়ে মাখার দরকার পড়বে না বা বিষাক্ত ধূপের ধোঁয়ায় কষ্ট পেতেও হবে না। প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে, যেখানে মশার দাপট বেশি, সেখানে কাজে আসবে এই যন্ত্র।
মশানাশক তেল বা ধূপের ধোঁয়া থেকে মাথা ধরা, চোখ জ্বালা, গলায় অস্বস্তি হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের যদি হাঁপানির সমস্যা থাকে অথবা সিওপিডির রোগীদের ক্ষেত্রে তা বিপজ্জনক হতে পারে। এগুলি থেকে শ্বাসকষ্ট যেমন হতে পারে, তেমনই অ্যালার্জির সমস্যাও হতে পারে। মশানাশক ধূপের ধোঁয়া থেকে ঘরের বাতাস দূষিত হয়, যে পরিবেশে শ্বাস নেওয়া সিগারেটের ধোঁয়ার মতোই বিপজ্জনক। কিন্তু এই যন্ত্রটিতে রয়েছে পাইরিথ্রয়েড নামক এক ধরনের কীটনাশক, যা মশার ক্ষতি করলেও, মানুষের ক্ষতি কমই করে।
আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার মতো দেশগুলিতে, যেখানে মশার উপদ্রব বেশি, সেখানে যন্ত্রটি দ্রুত নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। ট্রায়ালের ফল সব ক্ষেত্রে নিরাপদ মনে হলেই যন্ত্রটি সকলের ব্যবহারের জন্য নিয়ে আসা হবে।