রাস্তার খাবার মানেই তা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর নয়। স্বাস্থ্যকর খাবার কী কী থাকতে পারে তালিকায়? ছবি: সংগৃহীত।
অফিসপাড়া দিয়ে যাবেন অথচ নাকে গন্ধ আসবে না, তা-ও কি হয়! ঘরে যাঁদের খিদে পায় না, তাঁদেরও ফুটপাতের খাবার দেখে জিভে জল আসে। কী নেই সেই তালিকায়? গরম গরম তন্দুরি রুটি, মাংসের লাল ঝোল, অকৃপণ হাতে মাখন দেওয়া টোস্টের সঙ্গে গরম ঘুগনি আর অর্ধ সেদ্ধ ডিম, বিরিয়ানি, চাউমিন, ইডলি, দোসা, লিট্টি, মোগলাই—তালিকা শেষ হওয়ার নয়।
খাবার যতই লোভনীয় হোক না কেন, আদতে তো তা রাস্তারই। সে কারণেই মন খুঁত খুঁত করে অনেকের। না জানি, কোন জল, কোন তেল দিচ্ছে? কিন্তু রাস্তার খাবারের স্বাদ এবং বিপুল সম্ভারের আকর্ষণ এড়ানো ভীষণ কঠিন। তা ছাড়া পকেট বাঁচিয়ে খেতে হলে ফুটপাতের খাবারের চেয়ে ভাল কিছু হয় নাকি! কিন্তু যদি ভাজাভুজিতে আপত্তি থাকে, স্বাস্থ্যের কথা ভাবতে হয় কিংবা নিয়মিত রাস্তা থেকেই দুপুর বা সান্ধ্য খাওয়া সারতে হয় তখন কী খাবেন? রোজ মোগলাই পরোটা, তেল চুপচুপে তেলেভাজা কিংবা লাল ঝোলওয়ালা মাংস দিয়ে রুটি তো বিশেষ স্বাস্থ্যকর নয়। বদলে কি খেতে পারেন?
ঝালমুড়ি
ঝালমুড়ি থাক স্বাস্থ্যকর রাস্তার খাবারের তালিকায়। ছবি: সংগৃহীত।
সকাল হোক বা বিকেল কিংবা সন্ধ্যা, মুড়ির দোকানে লাইন থাকে সবসময়ই। মুড়ি এমন একটি খাবার চপ, চানাচুর দিয়ে মেখেও যেমন খাওয়া যায় তেমনই কম তেল, ছোলা, বাদাম কিংবা শসা, টম্যাটো, কাঁচালঙ্কা দিয়েও মাখিয়ে নেওয়া যায়। কী দিয়ে মুড়ি মাখা হবে, তার উপর নির্ভর করবে তার খাদ্যগুণ। যেমন কাঁচালঙ্কায় মেলে ভিটামিন সি। শসা, টম্যাটোও পুষ্টিকর। বাদাম, ছোলায় রয়েছে প্রোটিন। আর মুড়ির মশলায় যদি জিরে, লঙ্কা ব্যবহার হয়, তারও গুণাগুণ আছে। তাই স্বাস্থ্যকর খুঁজলে খেতে পারেন ঝালমুড়ি।
দই বড়া
দই বড়াও খেতে পারেন। ছবি:সংগৃহীত।
রাস্তার খাবারের তালিকায় জুড়ে গিয়েছে দই বড়াও। ভাজাভুজি এড়াতে চাইলে এটি কিন্তু ভাল খাবার। বড়া তৈরি হয় বিউলির ডাল দিয়ে। ডালে থাকে প্রোটিন। আর টক দইয়ে মেলে প্রোবায়োটিক। খুব সামান্যই দেওয়া হয় মিষ্টি চাটনি। এটি তেঁতুলের ক্বাথ এবং গুড় দিয়ে তৈরি। ফলে উপর থেকে ছড়ানো ঝুরিভাজা বাদ দিলে এই খাবারও স্বাস্থ্যকর।
বাদাম মাখা
সন্ধ্যার মুখে চপ, তেলেভাজায় মন না দিয়ে বাদাম বা ছোলামাখা হতে পারে বিকল্প খাবার। ছবি:সংগৃহীত।
বাদাম কিংবা ছোলা মাখাও কলকাতার রাস্তার খাবারের তালিকায় জনপ্রিয়। চিনেবাদামে ভরপুর মাত্রায় প্রোটিন মেলে। এতে থাকে স্বাস্থ্যকর ফ্যাটও। বাদাম পেঁয়াজকুচি, লঙ্কাকুচি, মশলা, পাতিলেবুর রস এবং সৈন্ধব লবণ বা নুন দিয়ে মাখা হয়। চানাচুর যোগ না করলেই এর স্বাস্থ্যগুণ নিয়ে প্রশ্ন থাকে না। আর স্বাদ তো যিনি খান তিনিই জানেন।
ডিম এবং ঘুগনি
রাস্তায় বেরিয়ে ঘুগনি খাননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কলকাতা হোক বা শহরতলি, ঘুগনির কদর এখনও। কলকাতার অফিসপাড়া কিংবা ব্যস্ত রেলস্টেশনগুলিতে ঢুঁ মারলে ঘুগনির সঙ্গে ডিম সেদ্ধও মিলবে। শক্ত, অর্ধ সেদ্ধ যেমন চাইবেন তেমন ডিমই মিলবে। ঘুগনির উপর ছড়িয়ে দেওয়া পেঁয়াজ, লঙ্কাকুচি বা তেঁতুলের জল—কোনওটাই কিন্তু শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর নয়।
লিট্টি চোখা
ছাতু দিয়ে তৈরি লিট্টিও স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকাতেই পড়ে। ছবি:সংগৃহীত।
বিহারি খাবার লিট্টি-চোখাও শহর থেকে শহরতলির অংশ। ছাতু দিয়ে তৈরি লিট্টি এবং আলু, বেগুনের চোখাকেও কিন্তু অস্বাস্থ্যকর ফাস্টফুডের তালিকায় ফেলা যায় না। বরং ছাতু প্রোটিনে ভরপুর।
খাবার অস্বাস্থ্যকর না হলেও, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বা নোংরা হাতে সেগুলি বানালে বা খেলে অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা এড়ানো যায় না। সে ব্যাপারে সতর্ক হওয়া দরকার। ঘরে বা বাইরে যেখানেই খান, হাত ধুয়ে নেওয়া সবসময়েই জরুরি।