Huge weight loss story

গণেশের ৯৮ কেজি ‘নস্যি’! ৫৪২ কেজি ওজন কমিয়েছিলেন একদা বিশ্বের সবচেয়ে ভারী মানুষ খালিদ, কী ভাবে?

নাহ্, ভুল দেখছেন না। প্রতিবেদনেও কোনও তথ্যগত ভুল নেই। সংখ্যাটা ৫৪২ কেজিই। অবিশ্বাস্য হলেও ব্যাপারটা সত্যি করে দেখিয়েছেন খালিদ বিন মোহসেন শারি। আর তার জন্য যে ধৈর্যের পরীক্ষা দেখিয়েছেন, যে একনিষ্ঠতা দেখিয়েছেন, তা দেখে বিস্মিত হয়েছেন তাঁর সাহায্যকারীরাই।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৫ ১৪:৪৮
Share:

খালিদ বিন মোহসেন শারি (মেরুন রঙের পোশাকে)। ৫৪২ কেজি ওজন কমানোর আগে এবং পরে (ডান দিকে)। ছবি : সংগৃহীত।

লোকে তাঁকে চিনত ‘দুনিয়ার সবচেয়ে ভারী মানুষ’ বলে। ওজন ছিল ৬১০ কেজি! সেই মানুষটি এখন ৬৮ কেজির এক ঝরঝরে চেহারার তরুণ। নাম খালিদ বিন মোহসেন শারি। বয়স ৩৪। বাড়ি দুবাইয়ে। খালিদ তাঁর বিপুল ওজনের প্রায় ৯০ শতাংশই কমিয়ে ফেলেছেন। আড়াই বছরে ঝরিয়েছেন ৫৪২ কেজি।

Advertisement

নাহ্, ভুল দেখছেন না। এই প্রতিবেদনেও কোনও তথ্যগত ভুল নেই। সংখ্যাটা ৫৪২ কেজিই। অবিশ্বাস্য হলেও ব্যাপারটা সত্যি করে দেখিয়েছেন খালিদ। আর তার জন্য যে ধৈর্যের পরীক্ষা দেখিয়েছেন, যে একনিষ্ঠতা দেখিয়েছেন, তা দেখে বিস্মিত হয়েছেন তাঁর সাহায্যকারীরাই। একদা ‘বিশ্বের সবচেয়ে ভারী মানুষ’ (২০১৩ সালে ওই তকমা পেয়েছিলেন খালিদ, তখন তাঁর বয়স ছিল ২২) পুরনো তকমা খুইয়ে নিজের পরিচিত পরিধিতে অর্জন করেছেন নতুন নাম— ‘দ্য স্মাইলিং ম্যান’ বা সদাহাস্যময় ব্যক্তি। কিন্তু কী ভাবে ৫৪২ কেজি ওজন ঝরানো সম্ভব?

ছবি: সংগৃহীত।

১০০ কেজি ওজন ঝরানোর কাহিনি ইদানীং মাঝেমধ্যেই শোনা যাচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম বলিউডের কোরিওগ্রাফার গণেশ আচার্য। গণেশ জানিয়েছেন, তিনি ৯৮ কেজি ওজন ঝরিয়েছিলেন। আবার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ভারতীয় গায়ক আদনান সামি কিছু দিন আগে জানান, তিনি তাঁর সর্বোচ্চ ওজন থেকে ১২০ কেজি কমাতে পেরেছিলেন। ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ অম্বানীর পুত্র অনন্ত অম্বানীও ১০৮ কেজি ওজন কমাতে পেরেছিলেন। তবে তার জন্য গণেশ, আদনান বা অনন্তকে কঠোর নিয়ম মানতে হয়েছিল। পরিবর্তন আনতে হয়েছিল জীবনযাপনে। কিন্তু ৫৪২ কেজি? তার জন্য অবশ্য পরিশ্রম আর জীবনযাপনে বদল আনার পাশাপাশি আরও বাড়তি কিছু দরকার হয়েছে।

Advertisement

(বাঁ দিক থেকে) গণেশ আচার্য, আদনান সামি এবং অনন্ত অম্বানী। ছবি: সংগৃহীত।

খালিদের ক্ষেত্রে সেই বাড়তি ‘কিছু’র অনেকটা জুড়ে ছিলেন সৌদি আরবের প্রাক্তন রাজা আবদুল্লা। তিনি এক রকম জেদই ধরেছিলেন যে, খালিদের জীবন স্বাভাবিকত্বে ফিরিয়ে তবে ছাড়বেন। রাজার উদ্যোগেই খালিদের জন্য নিয়োগ করা হয় চিকিৎসক-সহ ৩০ জন স্বাস্থ্য বিষয়ক পেশাদার। সেই টিমে অস্ত্রোপচারের চিকিৎসক যেমন ছিলেন, তেমনই ছিলেন পুষ্টিবিদ, ফিটনেস প্রশিক্ষকেরা। তাঁদের নিয়েই শুরু হয় খালিদের ওজন ঝরানোর অবিশ্বাস্য এক সফর।

জাজ়ান থেকে রিয়াধে চিকিৎসার জন্য উড়িয়ে আনা হয় খালিদকে। ছবি: সংগৃহীত।

খালিদ থাকতেন সৌদি আরবের জাজ়ানে। তাঁকে নড়াতে চড়াতে অন্তত জনা পাঁচেক মানুষ লাগত। সেই খালিদকে তাঁর বাড়ি থেকে উড়িয়ে আনানো হয় রিয়াধের কিং ফাহ‌্দ মেডিক্যাল সিটিতে। সেখানেই খালিদের জন্য তৈরি করা হয় বিস্তারিত ওজন ঝরানোর পরিকল্পনা। শুরু হয় চিকিৎসা পর্ব।

প্রথম ৬ মাসেই ৩২০ কেজি ওজন কমাতে পেরেছিলেন খালিদ। ছবি: সংগৃহীত।

৬১০ কেজি থেকে ৬৮ কেজি। অবিশ্বাস্য এই ওজন ঝরানোর জন্য অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছিল খালিদকে। তাঁর ওজন ঝরানোর প্রক্রিয়ায় প্রথমেই করানো হয় গ্যাস্ট্রিক বাইপাস সার্জারি। এ ছাড়া তাঁর জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি করানো হয় একটি ডায়েট প্ল্যান। প্রতিদিন নিয়ম করে শরীরচর্চা করানো হত তাঁকে। তার সঙ্গে ফিজ়িয়োথেরাপিও চলত। এক সাক্ষাৎকারে খালিদ বলছেন, ‘‘ওই রুটিন মেনে প্রথম ছ’মাসেই আমার অর্ধেকের বেশি ওজন কমে গিয়েছিল।’’ ২০১৬ সালের নভেম্বরে ৩২০ কেজি ওজন কমানোর পরে খালিদ বহু বছর পরে প্রথম হাঁটতে পারেন। তার পরে আরও দেড় বছরের চেষ্টায় ২২২ কেজি ওজন কমান খালিদ।

খালিদ (মাঝে) এখন ৩৪ বছরের ঝরঝরে চেহারার সুদর্শন যুবক। ছবি: সংগৃহীত।

এখন ৩৪ বছরের খালিদের ওজন ৬৮ কেজি। সুস্থ ভাবেই বেঁচে আছেন তিনি। তবে যত ওজন কমেছে, ততই ঝুলে পড়া চামড়া সরাতে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে তাঁকে। তবে এত কিছুর পরে ফল মিলেছে। এক কালে শয্যাশায়ী মানুষটি এখন হেসেখেলে হেঁটে বেড়ানো এক সুদর্শন যুবক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement