সুস্মিতা সেনের হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা। ছবি: সংগৃহীত।
মাত্র ২৫ বছর বয়সে সিঙ্গল মাদার হয়েছিলেন তিনি। তা-ও আবার আদালতে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর। এখন তিনি দুই কন্যাসন্তানের মা। অবিবাহিত, কম বয়সে সিঙ্গল মাদার, সব মিলিয়ে প্রবল সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে। তিনি সুস্মিতা সেন। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর সাহসিকতা নিয়ে ধন্দের অবকাশও কম। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে আবারও তাঁর নির্ভীক মনের পরিচয় দিলেন। প্রাক্তন বিশ্বসুন্দরী জানালেন, তিনি হার্টের সার্জারির সময়ে সজাগ ছিলেন এবং সেই সিদ্ধান্ত তাঁর নিজের।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘আরিয়া ৩’-এর শুটিং চলাকালীন হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন সুস্মিতা। ধমনীর প্রায় ৯৫ শতাংশ ব্লক হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসকেরা তৎক্ষণাৎ অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সুস্মিতার একটিই শর্ত ছিল, অস্ত্রোপচারের সময়ে তিনি সচেতন থাকবেন। অ্যানাস্থেসিয়া নয়, বরং এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তাঁর ইন্দ্রিয়গুলি সজাগ থাকে। সুস্মিতার কথায়, ‘‘আমি সব কিছুই নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই। আর সেই প্রবণতা থেকেই আমি অচেতন হতে চাইনি। আসলে সব বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ রাখার ইচ্ছেটাই জ্ঞান হারাতে দেয়নি। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছিলাম, কাজটা দ্রুত করার জন্য অনুরোধ করছিলাম। কারণ তাড়াতাড়ি কাজে ফিরতে চাইছিলাম। আমার মাথার মধ্যে সবটাই ভীষণ পরিষ্কার ছিল।’’
এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কেবল যে নির্ভীকতা ছিল, তা নয়। বরং দায়িত্ববোধের নজিরও গড়েছিলেন অভিনেত্রী। ওয়েব সিরিজ়ের পুরো ইউনিট, প্রায় ৫০০ জন অপেক্ষা করছিলেন শুটিং শুরু হওয়ার জন্য। যাঁরা দৈনিক মজুরির উপর নির্ভর করেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরতে চেয়েছিলেন। আর সত্যিই, অস্ত্রোপচারের মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে তিনি আবার সেটে ফিরে যান।
সুস্মিতা জানান, এই পুরো অভিজ্ঞতা তাঁকে আরও নির্ভীক করে তুলেছে। হার্ট অ্যাটাক তাঁর মনে আতঙ্ক তৈরি করেনি, বরং মনে করিয়ে দিয়েছে, জীবন কতখানি মূল্যবান। যেখানে তাঁকে নিজের পরিবার এবং শুটিংয়ের কলাকুশলীদের জন্য আরও সুস্থ থাকতেই হবে।
এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে: অস্ত্রোপচারের সময় সজ্ঞানে থাকা যায় কি?
হার্টের চিকিৎসক উদয়শঙ্কর দাস বলছেন, ‘‘হার্টের অস্ত্রোপচার আসলে দু’ধরনের হয়। বাইপাস সার্জারির ক্ষেত্রে পুরোপুরি অ্যানাস্থেশিয়া দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয় রোগীকে। কিন্তু অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির মতো কিছু প্রক্রিয়ায় রোগীকে লোকাল অ্যানাস্থেশিয়া দিয়ে অর্ধেক সচেতন রাখা হয়। এটি নিরাপদও, দ্রুত এবং কার্যকরও। কিন্তু জটিল ও দীর্ঘ অস্ত্রোপচারে অবশ্যই অচেতন থাকাটা বাধ্যতামূলক।’’ অতএব, সিদ্ধান্ত নির্ভর করে অস্ত্রোপচারের ধরন, রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং চিকিৎসকের পরামর্শের উপর। সবার জন্য এক নিয়ম প্রযোজ্য নয়।
তবে এই সিদ্ধান্তের ফলে সুস্মিতা তাঁর দায়িত্ববোধ সম্পর্কে আরও নতুন ভাবে ভাবতে পারলেন। সার্জারির আগে ও পরে জীবনকে অন্য ভাবে দেখতে শুরু করেছেন তিনি।