যক্ষ্মার জীবাণু বাসা বেঁধেছে কি না জানতে কী কী টেস্ট করাবেন? ছবি: ফ্রিপিক।
যক্ষ্মার নাম শুনলেই আতঙ্ক হত এক সময়ে। যক্ষ্মা হলে রোগী যেমন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতেন, তেমনই তাঁর ধারেকাছে ঘেঁষতেও ভয় পেতেন মানুষ। কিন্তু এখন যক্ষ্মার চিকিৎসা আছে, ওষুধও। যক্ষ্মা বা টিউবারকিউলোসিসের লক্ষণ অনেক সময়েই বোঝা যায় না। শুকনো কাশি হলে তা ঠান্ডা লাগার কারণেই ভেবে বসেন অনেকে। সাধারণ কাশি আর যক্ষ্মার কাশির মধ্যে পার্থক্য আছে। তাই লক্ষণ চেনা যেমন জরুরি, তেমনই কিছু পরীক্ষা করিয়ে রাখাও ভাল।
যক্ষ্মার কী কী লক্ষণ চিনবেন?
সপ্তাহ দুয়েকের বেশি কাশি থাকবে। কাশির সঙ্গে রক্ত উঠতে পারে। সর্দি-জ্বর সারতে চাইবে না। রাতে শুয়ে ঘাম হবে, ওজন আচমকা কমে যেতে পারে। মাথা ঘোরা, বমি ভাব থাকবে। ফুসফুসে যক্ষ্মা হলে কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্টের লক্ষণ দেখা দেবে। মাঝেমধ্যেই বুকে ব্যথা হতে পারে। আর ফুসফুসের বাইরে অন্য অঙ্গেও হতে পারে যক্ষ্মা। যেমন, অন্ত্র, লসিকা গ্রন্থি, হাড়, কিডনি ও মূত্রথলি, স্নায়ুতন্ত্রে যক্ষ্মা হতে পারে। অন্ত্রে যক্ষ্মা হলে পেটে ব্যথা, ডায়েরিয়া, ওজন কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেবে। হাড়ে যক্ষ্মা হলে গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা, কিছু ক্ষেত্রে পক্ষাঘাতও হতে পারে। তখন পেটের সমস্যা, হাড়ের ব্যথা ভোগাবে। শরীরের গ্রন্থিগুলি ফুলে উঠবে। কিডনিতে টিবি হলে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত, প্রস্রাবের জায়গায় জ্বালা হবে। লসিকা গ্রন্থিতে হলে তখন শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি ফুলে উঠবে, সেখানে প্রদাহ হবে। স্নায়ুতন্ত্রের যক্ষ্মা বিরল। সেটি হলে তখন নানা রকম স্নায়বিক জটিলতা দেখা দেবে।
কোন কোন পরীক্ষা জরুরি?
সংক্রামক রোগ বিষয়ক চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মতে, যক্ষ্মা শনাক্ত করতে হলে স্পুটাম টেস্ট করিয়ে নেওয়া ভাল। রোগীর কাশি থেকে বার হওয়া কফ বা থুতু পরীক্ষা করা হয়। মাইক্রোস্কোপের নীচে রেখে দেখা হয় থুতু বা কফের নমুনায় মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিসের জীবাণু আছে কি না।
রক্ত পরীক্ষাও জরুরি। ‘ইন্টারফেরন গামা রিলিজ় অ্যাসে’ (আইজিআরএ) টেস্ট রক্তের একরকম পরীক্ষা, যা করালে ধরা পড়ে যক্ষ্মার সংক্রমণ রয়েছে কি না। এটি দু’টি পদ্ধতিতে করা হয়—১) কোয়ান্টিফেরন-টিবি টেস্ট ও ২) টি-স্পট টেস্ট। এই দুই পরীক্ষায় যক্ষ্মার জীবাণু ধরা পড়ে।
‘টিউবারকুলিন স্কিন টেস্ট’ ত্বকের একটি পরীক্ষা, যাতে যক্ষ্মা ধরা পড়ে। এই পরীক্ষায় খুব সামান্য পরিমাণে প্রোটিন ডেরিভেটিভ (পিপিডি ) ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ত্বকে প্রবেশ করানো হয়। এর ৪৮-৭২ ঘণ্টা পরে পরীক্ষা করে দেখাহয়, ইঞ্জেকশন ফোটানোর জায়গাটি ফুলে উঠেছে কি না, বা তাতে প্রদাহ শুরু হয়েছে কি না। তেমন হলে বুঝতে হবে রক্তে যক্ষ্মার ব্যাক্টেরিয়া রয়েছে।
‘নিউক্লিক অ্যাসিড অ্যাম্পলিফিকেশন টেস্ট’ (এনএএটি) করিয়েও যক্ষ্মা চিহ্নিত করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে রোগীর শরীর থেকে নেওয়া নমুনার জিনগত বিশ্লেষণ করা হয়। যাঁদের রোগ অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়েছে শরীরে, তাঁদের জন্য এই পরীক্ষা কার্যকরী হতে পারে।