দেশে কমবয়সিদের মধ্যে স্থূলতা বেড়ে চলেছে, চমকে দেওয়ার মতো তথ্য দিল ল্যানসেট। ফাইল চিত্র।
কমবয়সিদের মধ্যে ওবেসিটি বা স্থূলত্বের প্রবণতা, মাত্রাতিরিক্ত ওজন এখন বিশ্বের অন্যতম বড় সমস্যা। ‘দ্য ল্যানসেট’ মেডিক্যাল জার্নালের সমীক্ষা বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যে স্থূলত্ব বিশ্ব জুড়েই মহামারির আকার নেবে। ভারত, চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থাকবে তালিকার প্রথম দিকে। যার মধ্যে ভারতের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ স্থূলত্বের সমস্যায় ভুগবেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র হিসাব অনুযায়ী ‘বডি মাস ইনডেক্স’ (বিএমআই) ২৫-এর বেশি হলে অতিরিক্ত ওজন বলে চিহ্নিত করা হয়। আর বিএমআই ৩০-এর বেশি হলেই তা স্থূলতার অবস্থা বলে ভাবা হয়। একসময়ে মনে করা হত, কেবল উন্নত দেশগুলিতেই স্থূলতার সমস্যা বেশি। কিন্তু সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, উন্নয়নশীল দেশগুলিতেও কমবয়সিদের মধ্যে স্থূলতা ক্রমবর্ধমান। ল্যানসেটের সমীক্ষা বলছে, ১৫-৩৫ বছরের মধ্যে স্থূলতার হার সর্বাধিক ভারতে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে এ দেশে উল্লিখিত বয়সের অন্তত ২১ কোটি পুরুষ ও ২৩ কোটি মহিলা ওজন বৃদ্ধি এবং সেই সংক্রান্ত শারীরিক সমস্যায় ভুগবেন।
১৯৯০ সালে ভারতে স্থূলত্বে ভোগা মানুষের সংখ্যা ছিল ৪০ লক্ষের কাছাকাছি। ২০২১ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৬৮ লক্ষে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৫০ সালে তা দ্বিগুণের বেশি হবে। শৈশবকালীন স্থূলত্বের নিরিখে ভারতের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। এ দেশে প্রায় ১৫ শতাংশ শিশু অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতার সমস্যায় ভুগছে।
কমবয়সিদের মধ্যে স্থূলতার সমস্যা ক্রমবর্ধমান কেন? গবেষকরা বলছেন, উচ্চ ক্যালোরির ফাস্ট ফুডের সহজলভ্যতা অন্যতম বড় কারণ। সমীক্ষা বলছে, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে এ দেশে জাঙ্ক ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত চিনি দেওয়া পানীয়ের বিক্রি মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। শিশু ও কমবয়সিদের মধ্যেই এই জাতীয় খাবার খাওয়ার প্রবণতা বেশি। ফলে কম বয়স থেকেই ‘মেটাবলিক সিনড্রোম’-এ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, যা স্থূলতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। কেবল খাওয়া নয়, ট্যাব, ভিডিয়ো গেম এবং মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রাখার সময় বৃদ্ধি এবং শারীরিক কসরতের অভাবও এর কারণ। সেই সঙ্গেই কম ঘুম, মানসিক চাপ, উদ্বেগও বাড়ছে দিন দিন।
গবেষণা বলছে, শৈশবকালীন স্থূলতা শারীরিক ও মানসিক, উভয় স্বাস্থ্যকেই প্রভাবিত করে। ডায়াবিটিস, কার্ডিয়োভাস্কুলার সমস্যা, ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজ়মা-সহ বেশ কিছু গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কম বয়সে অতিরিক্ত ওজন আর স্থূলতা পরবর্তী সময়ে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের কারণও হতে পারে, যা রীতিমতো উদ্বেগের বিষয়। পরিস্থিতি যদি না বদলায়, তা হলে ২০৩০ সালের মধ্যেই এই ভয়ঙ্কর পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে এ দেশকে।