দুই হাত বদলে যায় গাছের মতো শাখা-প্রশাখায়। ছবি: সংগৃহীত।
মানুষ না গাছ!
চামড়া বদলে দাঁড়ায় গাছের ছালের মতো। ত্বকের উপর গজাতে থাকে ডালপালা। তাতে ধরে শিকড়ও। সেই শিকড় ত্বকের যত দূর অবধি পৌঁছোয়, তত দূর অবধিই শাখা-প্রশাখার বিস্তার হয়। না, কোনও কল্পবিজ্ঞানের দানবের গল্প নয়। বাস্তবেই মানুষের চামড়া বদলে যায় এমন ভাবেই। বিরল জিনগত রোগটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘ট্রি ম্যান সিনড্রোম’।
দুই হাত বদলে যায় গাছের মতো শাখা-প্রশাখায়
‘বৃক্ষমানব’ই বটে। পৃথিবীতে ৫০০-৬০০ জনের এই রোগ ধরা পড়েছে। বাংলাদেশের আবুল বাজনদার নামে এক ব্যক্তি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছিলেন। আবুলের কথায়, হাত ও পায়ের চামড়ার উপর আঁচিলের মতো দেখা দিয়েছিল প্রথমে। সেই আঁচিল ক্রমেই বাড়তে শুরু করে। গোড়ায় তেমন ভাবে নজর না দিলেও, পরে তিনি দেখেন চামড়ার মতো গজিয়ে ওঠা সেই মাংসপিণ্ড থেকে ক্রমেই আরও নানা আকারের মাংসপিণ্ডের মতো তৈরি হচ্ছে। সেগুলি সাধারণ টিউমারের মতো দেখতে নয়। বরং খসখসে, শক্ত— ঠিক গাছের ছালবাকলের মতো। ধীরে ধীরে তাতে শিকড়ের মতো গঠনও তৈরি হয় এবং সেগুলি চামড়ার ভিতর দিয়ে ছড়াতে শুরু করে। যতই সেগুলির আকার বাড়তে থাকে, ততই যন্ত্রণা বাড়ে। এক সময়ে দেখা যায়, তাঁর দুই হাত বদলে গিয়ে গাছের মতো হয়ে গিয়েছে। আঙুলের জায়গা নিয়েছে অসংখ্য ডালপালা। সেগুলি শক্ত চামড়া দিয়ে তৈরি মাংসপিণ্ডের মতো।
‘বৃক্ষমানব’ সিনড্রোম ভয়ঙ্কর রোগ
দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’ ও আমেরিকার ‘সাদার্ন মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ থেকে এই বিষয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল। গবেষকেরা জানিয়েছেন রোগটির নাম ‘এপিডার্মোডিসপ্লেজ়িয়া ভেরুফর্মিস’ (ইভি)। এটি একটি বিরল জিনগত রোগ। টিএমসি৬ এবং টিএমসি৮ জিনের রাসায়নিক বদল হলে রোগটি হয়। যাঁদের শরীরে এই দুই জিনের অস্তিত্ব আছে, তাঁদের ‘ট্রি ম্যান সিনড্রোম’ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তবে শুধু জিনের বদলই যে একমাত্র দায়ী, তা নয়, রোগটির নেপথ্যে রয়েছে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)-ও। এই ভাইরাসের সংক্রমণেও ত্বকের এমন বিরল রোগ হতে দেখা যায়।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, হাত, পা, কনুই এমনকি মুখেও হতে পারে এই রোগ। চামড়া গাছের ছালের মতো শক্ত হতে শুরু করলে তার উপর ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটতে থাকে। ফলে চামড়া আঁশের মতো শুকিয়ে যেতে থাকে। এই রোগের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হল, দীর্ঘ সময় ধরে যদি চামড়ায় এমন সংক্রমণ হয়ে থাকে, তা হলে ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি বহু গুণে বেড়ে যাবে।
‘ট্রি ম্যান সিনড্রোম’ প্রতিরোধের উপায় এখনও জানা যায়নি। এই রোগের তেমন কোনও চিকিৎসাও নেই। গাছের ডালপালার মতো মাংসপিণ্ড বা ক্ষতস্থানগুলিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। তবে সে জায়গায় আবারও ডালপালা গজাতে পারে। কাজেই বার বার অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হতে পারে। লেজ়ার থেরাপি করলেও সাময়িক সমাধান হতে পারে। অনেক সময়ে ক্রায়োথেরাপি করে তরল নাইট্রোজেনের সাহায্যে টিউমারগুলিকে অপসারণ করার চেষ্টা করা হয়। তবে এই রোগ নিয়ে গবেষণা চলছে। প্রতিরোধের উপায় খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা।