দূষণের জেরে ফুসফুসের রোগ বাড়ছে, কী টিকা নিয়ে রাখবেন? ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
আজ জ্বর, তো কাল সর্দি। কাশি থামার লক্ষণ নেই কিছুতেই। অ্যান্টি-বায়োটিক, কাফ সিরাপ, অ্যান্টি-অ্যালার্জিকের প্রভাবে কিছু দিন চাপা পড়ে থাকছে, এই যা। কিন্তু পুরোপুরি সারছে না। কারও কারও আবার মাসখানেক ধরে নাগাড়ে চলা কাশি থেকেই আচমকা দেখা দিচ্ছে ফুসফুসের রোগ। শ্বাসকষ্টের সঙ্গে জ্বর, গায়ে আর মাথায় যন্ত্রণা। অতএব ফের কড়া কড়া ওষুধ। এর জেরে শরীর কাহিল, কাজের দফারফা। শহরাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষেরই এখন এই দশা। শীতের শুরুতেই বাতাসে দূষণের পাল্লা ভারী। আর তাতেই হাজারো রোগ এসে হানা দিচ্ছে। এর থেকে বাঁচার উপায় কী?
এই সময়ে বাতাসে ভাসমান দূষণবাহী কণার পরিমাণ যা থাকা উচিত, আছে তার প্রায় দ্বিগুণ। যানবাহনের ধোঁয়া, নির্মাণস্থলের ধুলোময়লা তো আছেই, সঙ্গে জুড়েছে বাজির ধোঁয়া ও তার থেকে নির্গত বিষাক্ত সব গ্যাস। এর জেরেই শ্বাসনালির সংক্রমণ বাড়ছে। রাস্তায় বেরোলে চোখ জ্বালা করার সমস্যা হয়ে চলেছে। এত সব সামাল দিয়ে ফুসফুস বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। বাতাসে ভাসমান বিভিন্ন সূক্ষ্ম কণা বিষাক্ত রাসায়নিক নিয়ে ফুসফুসে ঢুকে কষ্ট আরও বাড়াচ্ছে। চিকিৎসকদের বক্তব্য, না-ঠান্ডা, না-গরম আবহাওয়ায় জীবাণু, বিশেষ করে ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত হয়। তার জেরেই শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, সিওপিডি, নিউমোনিয়ার সংক্রমণ বেড়ে চলে। এর থেকে রেহাই পেতে টিকা নিয়ে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ ও সেন্টার ফর ডিজ়িজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্য বলছে, নিউমোকক্কাল টিকা ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। টিকাটি নিয়ে রাখলে সংক্রমণজনিত অসুখ থেকে অনেকটাই রেহাই পাওয়া যাবে।
নিউমোকক্কাল টিকা নিউমোনিয়ার জীবাণু স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনিকে প্রতিরোধ করতে দেওয়া হয়। এই টিকাকে অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। এ দেশে ‘নিউমোকক্কাল পলিস্যাকারাইড কনজুগেট ভ্যাকসিন’ (পিপিএসভি২৩) টিকাটি অনেক আগেই কেন্দ্রের ড্রাগ নিয়ামক সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে। ২৩ রকমের নিউমোনিয়ার ব্যাক্টেরিয়াকে আটকাতে পারে এটি। পাশাপাশি, বাতাসে ভাসমান বিষাক্ত কণা থেকে ফুসফুসকে রক্ষাও করতে পারে। সিওপিডি, হাঁপানি বা ফুসফুসের সংক্রমণ যাঁদের রয়েছে, তাঁরা এই টিকা নিয়ে রাখলে জটিল অসুখের হাত থেকে বাঁচতে পারেন।
কারা নিতে পারেন টিকা?
বয়স পঞ্চাশ বা তার বেশি ব্যক্তিরা নিতে পারেন। ফুসফুসের রোগ ভোগালে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে টিকা নেওয়া যেতে পারে।
হাঁপানি, সিওপিডি, ডায়াবিটিস বা কিডনির রোগ আছে, হাইপারটেনশনে ভোগেন, এমন রোগীরা প্রতিষেধকটি নিয়ে রাখলে সুরক্ষিত থাকবেন।
পাঁচ বছরের নীচে শিশুরা, যাদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি খুব কম, তারা নিতে পারে।
দূষণ কবলিত এলাকায় যাঁরা থাকেন অথবা পেশার জন্য দূষিত এলাকা, নির্মাণস্থল, শিল্পকারখানায় কাজ করতে হয়, তাঁদের প্রতিষেধকটি নিয়ে রাখা জরুরি।
নিউমোনিয়ার দু’রকম টিকা আছে— নিউমোকক্কাল কনজ়ুগেট ভ্যাকসিন (পিসিভি) এবং নিউমোকক্কাল পলিস্যাকারাইড ভ্যাকসিন (পিপিএসভি)। পিসিভি টিকা শিশু ও বয়স্কদের জন্য। আর পিপিএসভি টিকা তাঁদেরই দেওয়া হয়, যাঁদের বয়স ষাট পেরিয়েছে এবং ফুসফুস দুর্বল বা সিওপিডি, হাঁপানির মতো রোগ বা অন্য কোনও জটিল অসুখ রয়েছে। তাই চিিৎসকের পরামর্শ নিয়েই টিকা নিতে হবে।