হাঁটাহাঁটি, মেডিটেশনের চেয়েও কার্যকরী ১৫ মিনিটের এই ব্যায়াম। ছবি: ফ্রিপিক।
হুড়োহুড়ির এই জীবনে চাকরি, পড়াশোনা, পরিবার, দায়িত্ব— সব মিলিয়ে শরীর ও মনের ধকল বাড়ছে। ঊর্ধ্বে উঠছে সুগার, অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাচ্ছে রক্তচাপ। দশ মিনিটের ধ্যান মনকে শান্ত করতে পারে ঠিকই, তবে তা করার সময় বা ধৈর্য্য কোনওটিই নেই। হাঁটাহাঁটি করা বা জিমে গিয়ে ঘাম ঝরোনার মতো সময় বার করতে পারেন না অনেকেই। সে সমস্যার সহজ সমাধান হতে পারে তাই চি।
চিনা মার্শাল আর্টস থেকে তাই চি বা তাইজিকুয়ান-এর উৎস। চিনের অতি প্রাচীন এই ব্যায়াম আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহার করা হত। শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে চিনের সেনারাও তাই চি অভ্যাস করেন। শরীর ও মনের ক্লান্তি কাটাতেও সহায়ক। এই ধরনের শারীরিক কসরতকে ‘মুভিং মেডিটেশন’ বলেন অনেকে।
কী ভাবে করতে হবে?
শরীরের সমস্ত পেশির ব্যায়াম হয় তাই চি অভ্যাসে। তাই চি-র জন্য জরুরি শান্ত পরিবেশ আর হালকা পোশাক। খালি পায়ে অভ্যাস করাই ভাল। না হলে ফ্ল্যাট জুতো পরতে হবে।
শুরুর দিকে সহজ পদ্ধতিগুলি অভ্যাস করতে হবে। পরে আরও জটিল কিছু পদ্ধতি আছে যা প্রশিক্ষকের থেকে জেনে নিতে হবে। শুরুর সময়ে সাধারণ কিছু ভঙ্গি করতে হবে যা রোজের কাজে করা হয়, যেমন, আসবাব ঠেলা, জল তোলা, মাটি থেকে ওজন তোলা। এই সব কাজের জন্য শরীরের ভঙ্গি ঠিক যেমন হয়, তেমন ভাবেই বল প্রয়োগ করে করতে হবে। প্রথমে দুই হাত দু’দিকে প্রসারিত করুন। দুই পায়ের মধ্যে ব্যবধান রাখুন। শ্বাস ধরে রেখে দুই হাত নীচ থেকে বুকের কাছে তুলুন জল তোলার ভঙ্গিতে। কয়েক সেকেন্ড পরে ধীরে ধীরে শ্বাস ছেড়ে হাত নামিয়ে দিন।
এ বার করতে পারেন লোটাস কিক। এক পায়ে দাঁড়িয়ে অন্য পা ঘুরিয়ে কিক করুন। এই ভাবে কয়েকটি সেটে পা বদলে বদলে করুন। এতে যেমন পায়ের পেশির জোর বাড়বে, তেমনই শরীরের ভারসাম্য ও মনোযোগও বাড়বে।
ডান পা ভাঁজ করে শরীরের ওজন বাঁ পায়ে রাখুন। ডান হাত বুকের সামনে তুলুন। কিছুক্ষণ ভারসাম্য রাখুন, তার পরে পা বদলান। এটিও এক রকম তাই চি-র পদ্ধতি।
তাই চি-র আরও একটি সহজ পদ্ধতি হল ক্রস হ্যান্ডস। দুই হাত বুকের সামনে এনে ক্রস করে বন্ধ করা হয়। শরীরের সবটা শক্তি প্রয়োগ করে দুই হাত বুকের সামনে আনতে হবে আবার ফিরিয়ে নিতে হবে। হাত, বুক, কাঁধ, ও পিটের পেশির স্ট্রেচিং হবে এই ব্যায়াম করলে।
তাই চি সব বয়সের মানুষই করতে পারেন। ব্যায়াম সহজ হওয়ায় বয়স্কদের জন্য খুব ভাল তাই চি। রোজ ১৫ মিনিট করে অভ্যাস করলেই হবে। নিয়মিত অভ্যাস করলে মনঃসংযোগ বাড়বে, অবসাদ দূর হবে। মেডিটেশন যাঁরা মন স্থির করে করতে পারেন না, তাঁদের জন্যও কার্যকরী তাই চি। এতে শরীর ও মনের ব্যায়াম একসঙ্গে হবে।