রাতে একসঙ্গে বসে খেলে মেধাবী হবে শিশু, কেন বললেন গবেষকেরা? ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
টেবিলে বসে খাওয়া, খাওয়ার টেবিলের আদবকায়দা ছোট থেকেই শেখালে শিশু স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। এমনই বলেন পেরেন্টিং কনসালট্যান্টেরা। তবে আদবকায়দা শেখালেই তো হল না, সন্তান যাতে দেখেও শিখতে পারে, সে ব্যবস্থাও করা জরুরি। তার জন্য সকলের সঙ্গে বসে খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে শিশুকে। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, রাতের খাওয়া যদি পরিবারের সঙ্গে বসে খায় শিশু, তবেই তার চিন্তাভাবনা, ব্যবহারে বদল আসবে। শুধু ব্যবহারে নয়, শিশুর মেধারও বিকাশ হবে। তুখোড় হবে পড়াশোনায়। আর পাঁচজনের সঙ্গে মেলামেশার ভীতিও কাটবে।
টেবিলে একসঙ্গে বসে নৈশভোজ সারতে সারতে নির্ভেজাল গল্পের দিন এখন আর কই! হাতে গোনা কিছু পরিবারে এখনও একসঙ্গে বসে খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। না হলে কর্মব্যস্ততার জন্য যে যার মতো রাতের খাওয়া সেরে নেন। আর যদি একসঙ্গেও সকলে খেতে বসেন, তা হলেও দেখা যায়, পরিবারের অনেকেই মোবাইল ঘাঁটতে ব্যস্ত। কারও চোখ ঠায় টিভির দিকে। একে অপরের সঙ্গে গল্পের সময়ই নেই। পরিবার পরিজনের সঙ্গে একত্রে সময় কাটানো বা একসঙ্গে বসে খাওয়ার উপকারিতা যে কতটা, সে নিয়ে গবেষণা চলছে এখন। নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি এবং হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ এডুকেশনের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, শিশু যদি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসে খাবার খায়, তা হলে তার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। গত ২০ বছর ধরে গবেষণা ও সমীক্ষা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছেছেন গবেষকেরা। দাবি করা হয়েছে, শিশুর চরিত্র গঠন শুধু নয়, মানসিক বিকাশেও তা সহায়ক হবে।
পরিবারের সঙ্গে বসে খেলে শিশুর চিন্তাভাবনা ও ব্যবহারে বদল আসবে। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
বাঙালি বাড়িতে, বিশেষ করে যৌথ পরিবারগুলিতে একসঙ্গে বসে রাতের খাওয়া সারার রেওয়াজ বহু দিনের। এখনকার ছোট পরিবারগুলিতেও তেমনই আছে। গবেষণা বলছে, খাওয়ার টেবিলে যে কোনও বিষয়ে নিয়েই আলোচনা হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ের ঘটে যাওয়া ঘটনা, রাজনৈকি বা খেলাধূলা অথবা বিনোদন সবই শিশুর জ্ঞানের ভান্ডার পরিপূর্ণ করবে। একসঙ্গে যাপনের এই পদ্ধতি দেখে শিশুও আর পাঁচজনের সঙ্গে মেলামেশা করতে শিখবে। অতিরিক্ত জেদ বা স্বার্থপর মনোভাবেরও অবসান হবে এতে। শিশু অনেক কিছু জানবে, শিখবে, এতে তার মেধারও বিকাশ হবে। অনেক সময়েই দেখা যায়, অনেক ছোট ছোট সমস্যাই ছোটরা বাড়ির বড়দের বলতে ভয় পায়। মনে চেপে রাখে, যা পরবর্তী সময়ে গিয়ে মানসিক চাপের কারণ হয়ে ওঠে। সকলের মাঝে থাকলে তারাও ভরসা পাবে এবং পরিবারের সকলের প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতাও তৈরি হবে।
একসঙ্গে বসে খাওয়ার আরও অনেক উপকারিতা আছে। খাওয়ার টেবিলে কেমন ব্যবহার করা উচিত, তা শেখানোও সহজ হবে বাবা-মায়ের কাছে। শিশুকে আলাদা ঘরে খাওয়ালে কোনও দিনই আদবকায়দা শিখবে না। তাই প্রথম থেকেই বাড়ির সকলের সঙ্গে তাকে টেবিলে বসতে শেখানো জরুরি। খাবার টেবিলে মোবাইল নয়, থালা-বাসন, কাঁটা-চামচের ব্যবহার শেখাতে হবে। কোন পদে কী ধরনের চামচ ব্যবহার করতে হয়, মিষ্টি কেন আলাদা পাত্রে খেতে হয়, এমন সব ছোট ছোট বিষয় শেখাতে থাকলে টেবিলে বসে খাওয়ার আদবকায়দা শিখে যাবে ছোট থেকেই। এর পর কারও বাড়িতে গেলে বা রেস্তোরাঁয় গেলে, নিজে থেকেই সেই নিয়ম মেনে চলবে। খেয়ে উঠে নিজের থালা-বাটি তুলে নিয়ে গিয়ে কোথায় রাখতে হবে, সে অভ্যাসও রপ্ত করানো ভাল। ছেলে হোক বা মেয়ে, কোনও পার্থক্য করলে চলবে না। এতে নিজের কাজ নিজেই করার অভ্যাস তৈরি হবে। তাতে দায়িত্ববোধও তৈরি হবে ছোট থেকেই।