Hot Chocolate Benefits

ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে হট চকোলেট খান না! জানেন কি, তা ওষুধ হিসাবে খাওয়া হত?

হট চকোলেট ওষুধ হিসাবে খেতেন মায়া সভ্যতার মানুষজন। যে সভ্যতার ক্যালেন্ডার, জ্যোতিষ, স্থাপত্য, অঙ্ক কষার ধরন দেখে এ যুগেও তাজ্জব হন মানুষ, সেই মায়ানরাই কোকো চাষ করত এবং তা দিয়ে পানীয় বানিয়ে ওষুধ হিসাবে পান করতেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:২২
Share:

ছবি : সংগৃহীত।

সপ্তাহ দুয়েক পরে বড়দিন। বঙ্গের গ্রাম-মফস্‌সল পেরিয়ে শহরেও হালকা শীত জমতে শুরু করেছে। এমন দিনে সান্ধ্য আড্ডায়, প্রেমিকের সঙ্গে ক্যাফেতে কিংবা নিতান্তই বাড়িতে নিজের প্রিয় কোনটিতে একা বসে এক কাপ গরম গরম হট চকোলেটে চুমুক দিলে মনমেজাজ কোনও কারণ ছাড়াই ভাল হয়ে যায়। তবে যাঁরা স্বাস্থ্যসচেতন, তাঁদের অনেকেই মোটা হয়ে যাওয়ার ভয়ে, চিনি এড়াবেন বলে এই পানীয় থেকে দূরে থাকেন। অথচ ইতিহাস বলছে, এই হট চকোলেট এককালে ওষুধ হিসাবে খাওয়া হত।

Advertisement

তথ্য মানলে, এই হট চকোলেট ওষুধ হিসাবে খেতেন মায়া সভ্যতার মানুষজন। যে সভ্যতার ক্যালেন্ডার, জ্যোতিষ, স্থাপত্য, অঙ্ক কষার ধরন দেখে এ যুগেও তাজ্জব হন মানুষ, সময়ের থেকে অনেক বেশি ‘উন্নত’ বলে মর্যাদা দেন, সেই মায়ানরাই কোকো চাষ করতেন এবং কোকোর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের মশলা যেমন লঙ্কা, কর্নমিল ইত্যাদি মিলিয়ে এক ধরনের ফেনা ওঠা পানীয় তৈরি করতেন। ওষুধ হিসাবে যা খাওয়া হত সে যুগে। তবে সেই পানীয়ের স্বাদ ছিল কড়া। এতটাই, যে তার নাম ছিল বিটার ওয়াটার। অর্থাৎ তেতো জল।

হট চকোলেট এ যুগে যে ভাবে খাওয়া হয়, সেটি বানানো হয় ১৭০০ সালে। তবে সেটিও বানিয়েছিলেন এক চিকিৎসক। তার বেশ কিছু বছর আগে কোকো ইউরোপে আসে। তার তেতো স্বাদকে খাওয়ার উপযোগী করার জন্য তাতে চিনি এবং কিছু সুগন্ধি মশলাও মেশানো হয়। তার পরও সেই চকোলেট ইউরোপের জনতার পছন্দ হয়নি। ইংল্যান্ডের ওই চিকিৎসক স্যর হান্স স্লোয়েন কোকো-চিনির ওই মিশ্রণে দুধ মেশান। আর তাতেই স্বাদ খোলে চকোলেটের। তৈরি হয় দুধ-কোকো-চিনি মিলিয়ে সুস্বাদু পানীয় হট চকোলেট। এখন প্রশ্ন হল, যে হট চকোলেট এক চিকিৎসকের হাতে তৈরি, যা তারও আগে ওষুধ হিসাবে খাওয়া হত, তা কি অস্বাস্থ্যকরও হতে পারে?

Advertisement

হট চকোলেট খাবেন না কি খাবেন না?

ব্রিটেনেরই এক পুষ্টিবিদ মেলিশা কুমান জানাচ্ছেন, হট চকোলেটকে পুরোপুরি খারাপ ভেবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। বরং এর অনেক উপকারিতা আছে। আর চাইলে সেই ভালর সঙ্গে আপেস না করেই ওই পানীয়ের ক্ষতিকর দিকগুলি কমিয়ে নিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

হট চকোলেটে উপকারের মাত্রা কম নয়

হট চকোলেট যদি ডার্ক চকোলেট বা চিনি বর্জিত ভাল মানের অন্তত ৭০% কোকো দিয়ে তৈরি করা যায় তবে এর অনেক উপকার আছে।

১। কোকোতে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েডস থাকে, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। এটি শরীরের কোষের ক্ষতি কমায় এবং প্রদাহও কমাতে সাহায্য করে। যে প্রদাহ অতিরিক্ত হলে ব্যথা-বেদনার পাশাপাশি নানা রকম জটিল রোগও বাসা বাঁধতে পারে শরীরে।

২। ফ্ল্যাভোনয়েডস রক্তনালিকে শিথিল করতে এবং রক্ত ​​সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি এলডিএল বা ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে।

৩। মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তাকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। তাই যাঁরা ছাত্র, বা যাঁদের প্রতি মুহূর্তে মাথা খাটানোর কাজ করতে হয়, তাঁদের জন্য এই পানীয় উপকারী।

৪। মেজাজ ভাল রাখে। কারণ চকোলেট এন্ডোরফিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। যা মনমেজাজ ভাল রাখতে সাহায্য করে।

৫। ম্যাগনেশিয়ামের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ইদানীং সমাজমাধ্যমে শোরগোল উঠেছে। কোকোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম। এ ছাড়া আয়রন এবং জিঙ্কের মতো উপকারী খনিজও রয়েছে।

যা যা হট চকোলেটে ব্যবহার করবেন না

পুষ্টিবিদ মেলিশা বলছেন, বাজারচলতি হট চকোলেটে কিছু অস্বাস্থ্যকর উপকরণ মেশানো হয়। যেমন চিনি, ক্রিম, মার্শম্যালো ইত্যাদি। এই ধরনের উপাদান এড়িয়ে চলুন। বদলে স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নিন।

কী ভাবে বানাবেন স্বাস্থ্যকর হট চকোলেট

অন্তত ৭০% কোকোযুক্ত কোকো পাউডার ব্যবহার করুন বা ৭০ শতাংশ কোকো থাকা ডার্ক চকোলেটের গুঁড়ো ব্যবহার করুন।

৫০০ মিলি লিটার দুধে ২ টেবিল চামচ কোকো পাউডার, ২ চা চামচ মধু, আধ চা চামচ দারচিনির গুঁড়ো আর এক চিমটে নুন এবং দু’টুকরো ডার্ক চকোলেট দিয়ে গরম করুন।

গরম করার সময়ে বেলুন হুইস্ক দিয়ে নাড়তে থাকুন। ফেনিয়ে উঠলে আঁচ বন্ধ করে কাপে ঢেলে নিন।

আরও স্বাস্থ্যকর বানাতে চাইলে ফুল ফ্যাট দুধের বদলে স্কিমড বা লো ফ্যাট দুধ বা প্ল্যান্ট মিল্ক, যেমন আমন্ড মিল্ক বা সয়া মিল্ক বা ওট্‌স মিল্ক ব্যবহার করতে পারেন। মিষ্টি না-ও দিতে পারেন। স্টিভিয়া স্বাস্থ্যকর মিষ্টি। তা-ও দেওয়া যেতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement