কেন এত জন্ডিস হচ্ছে শিশুদের, বাবা-মায়েরা কী ভাবে খেয়াল রাখবেন? ছবি: এআই।
রাস্তায় দু’পা হাঁটলেই তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ। প্রবল তাপে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে কাটা ফল, লেবু দেওয়া ঠান্ডা জলের শরবত, বরফ দেওয়া রঙিন জল আর হরেক রঙের আইসক্রিম। আর এই স্বস্তিই ডেকে আনছে বিপদ। কখনও গরম, আবার ঝমঝম করে বৃষ্টি, এমন খামখেয়ালি আবহাওয়ায় হেপাটাইটিসের জীবাণুদের বাড়বাড়ন্ত। দূষিত জল ও খাবার থেকে রোগে আক্রান্ত আট থেকে আশি।
কেন বাড়ছে জন্ডিস?
জলবাহিত ভাইরাস থেকেই রোগের প্রকোপ বেশি। শিশুরোগ চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল জানিয়েছেন, একেবারে ছোটদের জন্ডিসের প্রকোপ তেমন নেই। কারণ, তাদের বেশির ভাগেরই হেপাটাইটিস এ এবং ই-এর টিকাকরণ হয়ে যায়। সমস্যা বেশি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে। কারণ, বছর দশেক আগেও হেপাটাইটিস এ এবং ই-এর টিকাকরণ নিয়ে বেশি সচেতনতা ছিল না। তা ছাড়া, এই বয়সি ছেলেমেয়েদের মধ্যে স্কুল থেকে ফেরার পথে রঙিন শরবত, আইসক্রিম খাওয়ার প্রবণতা সব চেয়ে বেশি। ফলে জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তাদের বেশি। বাবা-মায়েদের এই দিকটা খেয়াল রাখতেই হবে। জন্ডিস হলে কম করে এক থেকে ছ’মাস লাগে পুরোপুরি সুস্থ হতে।
লক্ষণ চেনা, এড়িয়ে গেলে চলবে না
রক্তের লোহিত কণিকাগুলি একটা সময়ে স্বাভাবিক নিয়মেই ভেঙে গিয়ে বিলিরুবিন তৈরি করে। এই বিলিরুবিন পরবর্তী কালে লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে পরিপাকতন্ত্রে ঢোকে। এর পর অন্ত্র থেকে শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়। বিলিরুবিনের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় কোনও অসঙ্গতি দেখা দিলে বা রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে তখন জন্ডিস হয়। হেপাটাইটিসের ভাইরাস শরীরে ঢুকলে বিলিরুবিনের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে, একে চিকিৎসার পরিভাষায় বলে ‘হাইপারবিলিরুবিনেমিয়া’। তখন চোখ, ত্বক হলুদ হতে থাকে। প্রস্রাবের রং গাঢ় হলুদ হয়, হালকা জ্বর থাকে। শিশুর পেটের উপরের ডান দিকে ব্যথা হতে পারে, সেই সঙ্গেই বমি ভাব থাকে।
সতর্ক থাকুন বাবা-মায়েরা
জল অবশ্যই ফুটিয়ে খেতে হবে। বিশুদ্ধ জল শুধু নয়, যে পাত্রে জল বা খাবার খাওয়া হচ্ছে, সেটিও পরিষ্কার হতে হবে।
বাইরের খাবার, যেমন রোল-চাউমিন, কাটা ফল, রঙিন শরবত, লস্যি-আইসক্রিম একেবারেই খাওয়া চলবে না।
বাড়িতে তেলমশলা ছাড়া হালকা খাবার দিতে হবে শিশুকে, কাঁচা স্যালাড না খাওয়ানোই ভাল।
বেশি করে জল ও তরল খাবার খাওয়াতে হবে। শরীর যেন জলশূন্য না হয়। শরীরের সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্যটাও জরুরি। একবারে ভারী খাবার খাওয়ালেই বমি হবে। বারে বারে অল্প করে খাওয়াতে হবে। কিছু কিছু খাবার জন্ডিসের ক্ষেত্রে খুব ভাল কাজ করে, যেমন আখের রস। এ ছাড়াও টম্যাটোর রস, খেজুর জন্ডিস রোগীদের জন্য খুব ভাল। বাটারমিল্ক, বিট, ডাবের জল বা লেবুর রসও নিয়মিত দিতে পারেন। তবে সবই কিন্তু বাড়িতে বানিয়ে দিতে হবে।