লিভার সিরোসিসের কী কী লক্ষণ দেখা দেয় আগেই? ছবি: ফ্রিপিক।
লিভারের রোগ সারে না, এমন ভুল ধারণা আছে অনেকেরই। সঠিক সময়ে রোগ চিহ্নিত করে চিকিৎসা শুরু হলে লিভারের অসুখ সারিয়ে তোলা সম্ভব। দীর্ঘদিনের লিভারের কোনও অসুখ থাকলে, জন্ডিস হয়ে থাকলে কিংবা অতিরিক্ত মদ্যপান করলে লিভারের ক্ষত বাড়তে থাকে। এক সময়ে তা জটিল লিভারের রোগে পরিণত হয়, যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলে ‘লিভার সিরোসিস’। লিভারের এই অসুখে আক্রান্ত হন অনেকে। লিভারে ক্ষত হতে থাকলে তার লক্ষণ আগে থেকেই প্রকাশ পায়। সেগুলি বুঝতে না পেরে এড়িয়ে যান অনেকেই।
লিভারের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত থেকে এই অসুখ জন্ম নেয়। লিভারের কার্যক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয় এই অসুখের প্রভাবে। অনেকেরই ধারণা, কেবল অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে এই অসুখ হানা দেয়। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, মদ্যপান ছাড়াও প্রতি দিনের বেশ কিছু ভুল অভ্যাসের জেরেও এই অসুখ আক্রমণ করতে পারে।
জন্মগত কোনও ত্রুটি ও কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য লিভারের অসুখ হতে পারে। মদ্যপানে রাশ টানতে এবং পেটের ব্যথা কমাতে অনেকে অনেক রকম ওষুধ খেয়ে থাকেন। এই সব ওষুধ সাময়িক ভাবে যন্ত্রণা কমালেও, পাকাপাকি ভাবে লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। তখন লিভারের ক্ষত বহুগুণে বেড়ে যায়। এবং এর অন্তিমপরিণতি হল লিভার ক্যানসার।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ এবং আমেরিকান লিভার ফাইন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, লিভার মেদ তৈরি করে। রক্তের মধ্যে দিয়ে তা পেশিতে পৌঁছোয়। লিভার যতটা মেদ তৈরি করছে আর যতটা খরচ করছে, তার মধ্যে যদি ভারসাম্য না থাকে, অর্থাৎ মেদ উদ্বৃত্ত হয়ে যায়, তা হলে সেটি লিভারে স্তরে স্তরে জমতে থাকে। এটিই ফ্যাটি লিভার। সঠিক ডায়েট ও শরীরচর্চা করে ফ্যাটি লিভারকে বশে রাখা যায়। কিন্তু অতিরিক্ত তেলমশলাদার খাবার, অ্যালকোহল থেকে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। ট্রাইগ্লিসারাইড ও ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্সের সমস্যা দেখা দেয়, যাকে বলে ‘মেটাবলিক সিনড্রোম’। এই সিনড্রোম একটু একটু করে সিরোসিসের জন্ম দেয়।
কী কী লক্ষণ দেখা দেয়?
ঘন ঘন পেট খারাপ হতে পারে। পেট ফাঁপা, অম্বলের সমস্যা ভোগাবে।
লিভারে ক্ষয় হতে থাকলে অ্যালবুমিন প্রোটিনের পরিমাণ কমে যায়, তখন পা ও গোড়ালিতে জ্বালাভাব হয়। এটিও একটি লক্ষণ।
লিভারে ক্ষত তৈরি হলে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়, এর থেকে জন্ডিস হতে পারে।
যদি দেখেন, সারা শরীরে ঘন ঘন কালশিটে পড়ছে, তা হলে সতর্ক হতে হবে। লিভার যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা হলে প্রয়োজনমতো প্রোটিন তৈরি করতে পারে না। ফলে সহজেই কালশিটে পড়তে থাকে।
দীর্ঘ দিনের লিভারের অসুখ থাকলে পেটের তলদেশে তরল জমা হয়ে পেট ফাঁপার সমস্যা দেখা দিতে পারে। দেখে মনে হবে, পেট ফুলে আছে। খিদে কমে যাবে, ওজন কমতে পারে। তখন সাবধান হতে হবে।