খাবার থেকে বিষক্রিয়া হয়েছে শিশুর, প্রাথমিক চিকিৎসা কী হবে? ছবি: এআই।
বর্ষার সময়ে সর্দিকাশি, জ্বর লেগেই থাকে ছোটদের। তার উপরে বাইরের খাবার বা রাস্তায় বিক্রি হওয়া শরবত, লস্যি খেয়ে ফেললে তার থেকে ডায়েরিয়াও হতে পারে। সম্প্রতি কলেরা নিয়েও উদ্বেগ ছড়িয়েছে। কলকাতাতেই আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি এক শিশু। তাই এই সময়ে বাইরের খাবারদাবার খেতে বারণই করছেন চিকিৎসকেরা। ঋতু বদলের এই সময়টাতে বিভিন্ন ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়ার প্রকোপ বাড়ে। খোলা, বাসি খাবার থেকে জীবাণু সংক্রমণ খুব সহজেই হয়। খাবার থেকে পেটে বিষক্রিয়াও হতে পারে, আবার ‘স্টমাক ফ্লু’ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
শিশুর যদি বারে বারে বমি, ডায়েরিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়, তা হলে আতঙ্কিত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলাতে হবে। এই বিষয়ে চিকিৎসক রণবীর ভৌমিকের মত, শুধু খোলা খাবার নয়, প্যাকেটবন্দি খাবার থেকেও শিশুদের পেটের রোগ হতে পারে। ‘ফুড পয়জ়নিং’ বা খাবারে বিষক্রিয়া দু’ভাবে হতে পারে— রাস্তা থেকে যে খাবার কিনে দিচ্ছেন তাতে হয়তো আগে থেকেই ব্যাক্টেরিয়া জন্মে গিয়েছে। সে খাবার বিষাক্ত হয়ে গিয়েছে। যেমন রোল-চাউমিনে যে কাঁচা স্যালাড রয়েছে, তা হয়তো অনেক আগে থেকেই কেটে রাখা। অথবা কাটা ফল বা রাস্তা থেকে কেনা আচার, তার মধ্যেও হয়তো ছত্রাক জন্মে গিয়েছে, যা বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই। তেমন খাবার পেটে গেলে বিষক্রিয়া হতে বাধ্য। আবার দোকান থেকে কেনা প্যাকেটবন্দি খাবার বা প্রক্রিয়াজাত মাংস, যা বহু আগে থেকেই রাসায়নিক দিয়ে সংরক্ষণ করে রখা হয়, তেমন খাবার থেকেও বিষক্রিয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মারাত্মক পেটের সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
খাবার থেকে বিষক্রিয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা কী হবে?
বাবা-মায়েদের জেনে রাখা ভাল, ছোটরা অসুস্থ হয়ে পড়লে সবচেয়ে আগে ওআরএস খাওয়াতে হবে। অথবা বাড়িতে নুন-চিনির জলও খাওয়াতে পারেন।
নারকেলের জল এই সময়ে উপকারী হতে পারে। কোনও ভাবেই শরীরে জলের ঘাটতি হতে দেওয়া যাবে না। তাই বারে বারে জল, ডাবের জল, নুন-চিনির শরবত খাওয়াতে পারেন।
ডায়েরিয়ার কারণে শরীর থেকে অনেকটা জল ও লবণ বেরিয়ে যায়। এই সময়ে ভারী খাবার খাওয়াতে গেলে বমিও হতে পারে শিশুর। তাই আদা দিয়ে গ্রিন টি খেলে আরাম হবে।
এমন অবস্থায় চিঁড়ে সেদ্ধ করে খাওয়ালে খুব তাড়াতাড়ি কাজে দেয়। এই সময়ে বমিভাব থাকেই। তাই ভাত বা অন্য খাবার খেতে না পারলে, শিশুকে নুন-চিনি দিয়ে সেদ্ধ চিঁড়ে খাওয়াতে পারেন।
ভাত দিলে তার সঙ্গে কোনও রকম ডাল বা তরকারি দেবেন না। নুন, লেবুর রস দিয়ে ভাত চটকে মেখে তা-ই খাওয়ান শিশুকে।
শিশুদের ফল, সব্জি খাওয়ানোর আগে বা রান্নার আগে ভাল করে ধুয়ে নেবেন। অন্তত মিনিট দশেক জলে ডুবিয়ে রেখে ধুতে হবে।
দুধ ভাল করে না ফোটালে তার থেকে বিষক্রিয়া হতে পারে। দুগ্ধজাত খাবার যদি বাসি হয়ে গিয়ে থাকে, তা হলে তা না খাওয়াই ভাল।
কাটা ফল, সে রাস্তার হোক বা বাড়ির— ফ্রিজে অনেক দিন ধরে রেখে দেওয়া খাবার, কোনওটাই শরীরের জন্য ভাল নয়।