Guillain-Barré Syndrome in Children

বাংলাতেও গিয়ান-ব্যারের থাবা, কেন আক্রান্ত হচ্ছে ছোটরা? সুরক্ষিত থাকার উপায় বললেন চিকিৎসকেরা

গিয়ান-ব্যারে সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে আরও দুই শিশু চিকিৎসাধীন কলকাতার হাসপাতালে। শিশু ও কিশোরদের মধ্যেও ধরা পড়ছে এই রোগ। ছোটদের শরীরে গিয়ান-ব্যারের ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া ঢুকলে তা কতটা মারাত্মক হতে পারে?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:২৪
Share:

গিয়ান-ব্যারেতে কয়েক ঘণ্টায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে পারে শরীর, কী কী লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন? ফাইল চিত্র।

গিয়ান-ব্যারে সিনড্রোমের (জিবিএস) থাবা বাংলাতেও। দুই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে ইতিমধ্যেই। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে আরও দুই শিশু চিকিৎসাধীন কলকাতার হাসপাতালে। শিশু ও কিশোরদের মধ্যেও ধরা পড়ছে এই রোগ। ছোটদের শরীরে গিয়ান-ব্যারের ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া ঢুকলে তা কতটা মারাত্মক হতে পারে? কত দ্রুত ছড়াতে পারে রোগ? বাঁচার উপায় কী? মতামত দিলেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর জেজুনি নামক ব্যাক্টেরিয়া তো বটেই, সাইটোমেগালোভাইরাস নামে আরও একটি ভাইরাস গিয়ান-ব্যারের জন্য দায়ী। তা ছাড়া আক্রান্তদের শরীরে নোরোভাইরাসও পাওয়া গিয়েছে। এই বিষয়ে বর্ধমানের উপমুখ্য জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবর্ণ গোস্বামী বললেন, “যে কোনও ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাস-ঘটিত রোগের পরে গিয়ান-ব্যারের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগ অথবা অন্ত্র বা খাদ্যনালির সংক্রমণ হলে তার থেকেও গিয়ান-ব্যারের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই রোগ হলে মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড— দুই জায়গার স্নায়ুই দুর্বল হতে শুরু করে। রোগে আক্রান্ত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শরীর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে শুরু করে। রোগীর মুখ দিয়ে অনবরত লালা ঝরতে থাকে, মুখ বেঁকে যায় এবং রোগের বাড়াবাড়ি হলে রেসপিরেটারি প্যারালিসিসও হয়। তখন অক্সিজেন সাপোর্টে রাখতে হয় রোগীকে।” দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগেই রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সতর্ক থাকতে হবে।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, শিশুদের শ্বাসযন্ত্রের কোনও রোগ থাকলে অথবা ভাইরাল নিউমোনিয়া থেকেও গিয়ান-ব্যারের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালে যে শিশু বা কিশোরেরা ভর্তি হয়েছিল তাদের বেশির ভাগেরই শ্বাসকষ্ট, গলাব্যথা বা গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসের উপসর্গ ছিল। শিশুদের শরীরে রোগ ঢুকলে কিছু লক্ষণ দেখা দেবে। যেমন— হাত ও পায়ের আঙুলে ব্যথা হবে, হাত নাড়াতে কষ্ট হবে, পায়ের পেশিতে টান ধরবে, হাঁটাচলা করতে সমস্যা হবে। ধীরে ধীরে পিঠ ও কোমরের ব্যথা শুরু হবে। শরীরের একদিক অসাড় হয়ে যেতে পারে। মুখ বেঁকে যেতে পারে। অনেকের বুকে চিনচিনে ব্যথার উপসর্গও দেখা গিয়েছে।

Advertisement

রোগ ধরা পড়বে কী করে? চিকিৎসা কী?

‘স্পাইনাল ট্যাপ’ নামে একটি টেস্ট আছে, সেটি করালে রোগ ধরা পড়বে। মেডিসিনের চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডলের কথায়, ‘ইলেকট্রোমায়োগ্রাম’ (ইএমজি) টেস্ট করে স্নায়ু ও পেশির অবস্থা লক্ষ করেন চিকিৎসকেরা। এই পরীক্ষাও উপযোগী।

নার্ভ কন্ডাকশন ভেলোসিটি টেস্ট (এনসিভি) খুবই কার্যকর একটি পরীক্ষা। স্নায়ু ঠিকমতো কাজ করছে কি না, সঙ্কেত পাঠাতে পারছে কি না, তা বোঝা যায় এই পরীক্ষা করলে।

মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের অবস্থা কেমন, রোগ কত দূর ছড়াল, তা জানতে এমআরআই করা যেতে পারে।

‘ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন’ (আইভিআইজি) ও প্লাজ়মা থেরাপি করে চিকিৎসা করা হয়। প্লাজ়মা থেরাপি গুটিকয়েক হাসপাতালেই হয়, ইমিউনোথেরাপিই বেশি করা হয়। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হয়, স্নায়ুর জোর বাড়ে।

কী ভাবে সতর্ক থাকবেন?

১) কাঁচা স্যালাড, বাসি খাবার খাবেন না।

২) দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য থেকেও ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া ছড়াতে পারে। কাজেই দুধ ফুটিয়ে খেতে হবে। পনির, চিজ়, মাখন কেনার সময়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সময় দেখে নেবেন।

৩) বেবি ফুডেও বাসা বাঁধতে পারে ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাস। তাই সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।

৪) শিশুদের এই সময়ে জল ফুটিয়ে খাওয়ানোও ভাল। দোকান থেকে কেনা খাবার, জাঙ্ক ফুড দেবেন না।

৫) বাজার থেকে কিনে আনা শাকসব্জি, ফল ভাল করে ধুয়ে তবেই খাবেন।

৬) রাস্তায় বিক্রি হওয়া কবাব, সিফুড না খাওয়াই ভাল। কাঁচা মাছ বা মাংস ভাল করে ধুয়ে তবেই রান্না করবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement